সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:২৮ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর বেলপুকুর গ্রামে ১৪টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ১৬টি মুসলমান পরিবারকে আগাম কোন নোটিশ ছাড়াই গৃহহীন করে দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ জুন আদালতের একটি আদেশে তাদের গৃহহীন করে উচ্ছেদ করা হয়।
গৃহহারা হয়ে গত চারদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো। সর্বশান্ত হওয়া এসব পরিবারের কান্না প্রতিনিয়তই যেন দীর্ঘ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের বিপদের সাথী হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতারা। গত শনিবার (২১ মে ) তারা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জানা গেছে, তানোরের পাঁচন্দর ইউপির কৃষ্ণপুর মৌজার- জেল নম্বর ৯৮, আরএস খতিয়ান নম্বর ১২৯ ও আরএস ১২৩৪ নম্বর দাগে প্রায় এক একর ৬৪ শতক ধানী জমি রয়েছে। ২০১২ সালের প্রকাশিত গেজেটে নিম্ন তফসিলভুক্ত সম্পত্তি খাস (ভিপি) বলে গেজেট প্রকাশ হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী খাস সম্পত্তি রেজিস্ট্রি বা বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। প্রকাশিত গেজেটের সুত্র ধরেই বিভিন্ন এলাকার ৩০টি ভূমিহীন পরিবার সেখানে বসতি গড়ে তুলে প্রায় ১০ বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসছেন।
ভুক্তভোগী গৃহহীনরা অভিযোগ করেছেন, কৃষ্ণপুর গ্রামের লাল মোহাম্মদের পুত্র দেলোয়ার হোসেন জাল দলিল তৈরি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে গোপনে আদালতে উচ্ছেদ মামলা করে এক তরফা রায় নিয়েছেন। তবে ভূমিহীনরা বিষয়টি জানার পর ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন; যা এখানো চলমান আছে।
তারা বলেন, উচ্চ আদালতে আপিল চলমান থাকার পরেও নিম্ন আদালতের এক তরফা রায় ও উচ্ছেদ নোটিশ বা পূর্ব ঘোষণা ব্যতিত ৩০টি পরিবারের ঘর-বাড়ি গুড়িয়ে দেয়া নিয়মবর্হিভুতের শামিল। তারা অভিযোগ করেন, দখলের নগ্ন পরিকল্পনা নিয়েই আইন অমান্য করে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার সকালে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গনেশ মার্ডি ও রাজশাহী জেলার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়ার সেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ও গৃহহীনদের সাথে কথা বলেন।
পরে আদিবাসী নেতারা সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী যেখানে গৃহহীনদের বাড়ি করে দিয়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন; সেখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের গৃহহীন করে দেওয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অশ্রয়ণ প্রকল্পের সব অর্জন স্লান করে দেওয়ার শামিল। অসহায় হয়ে পড়া এই পরিবারের পাশে এখন কেউ নেই।
তারা বলেন, আমরা নিজে গিয়ে তাদের দুরাবস্থা দেখে এসেছি। শিশু, বৃদ্ধ নিয়ে চারদিন ধরে তারা বাড়ি-ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। তাদের আশ্রয় নেওয়ারও কোন জায়গা নেই। উচ্ছেদের সময় তাদের আসবাবপত্র বের করারও সুযোগ দেওয়া হয়নি। রান্না করা ভাত তাদের চোখের সামনেই ফেলে দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় তারা কোথায় যাবে? তার কাছে সাহায্য চাইবে?
এ ঘটনায় প্রশাসনের কোন ভূমিকা নেই অভিযোগ তারা আরও বলেন, প্রভাবশালীদের মামলার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল চললেও তা তোয়াক্কা না করে আদিবাসীদের গৃহহীন করা হয়েছে। এ নিয়ে তারা স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বললেও কোন সহযোগিতা পাননি। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তাদের জন্য ঘর পারওয়ার বিষয়ে কথা বললেও ইউএনও তা কানে তোলেননি!
‘সবার ওপরে মানুষ সত্য’ প্রবাদটি উল্লেখ করে আদিবাসী নেতারা অতি দ্রুত গৃহহীন পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে সরকারের কাছে দাবি জানান। তারা বলেন, এই অঞ্চলে প্রভাবশালীদের দ্বারা সবসময় আদিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হয়। এটি নতুন কিছু নয়। এভাবেই চলছে। তারা বলেন, ‘আদিবাসীদের সাথে এমন আচরণ চলমান থাকলে বৃহত্তর ‘আদিবাসী আন্দোলন’ গড়ে তোলা হবে। আজকের তানোর