বুধবা, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:১০ am

সংবাদ শিরোনাম ::
ওপারের কলকাতায় তারকাদের ‘মধ্যমণি’ শাকিব জুলুমের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার! লেখক, রাজু আহমেদ ৩০ ডিসেম্বর শুরু হবে বিপিএল প্রাইভেটকার চাপায় চীনে ৩৫ জন পথচারী নিহত নগরীতে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৫ বাগমারায় দরিদ্র নারীদের সঞ্চয়ের টাকা উদ্ধার করলেন ইউএনও নগরীতে আরডিএ’র বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তার মামলা মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষা দিতে এসে কারাগারে ছাত্রলীগ কর্মী তিন উপদেষ্টার অপসারণ দাবিতে ব্যানার নিয়ে রাস্তায় মহিলা নেত্রী মৌগাছি কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন সরকার ১০-১২ বছর ক্ষমতায় থাকতে চাইছে? ইউনূসকে বিএনপির টার্গেট বঙ্গভবন থেকে মুজিবের ছবি সরানো ঠিক হয়নি : রিজভী আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশের সিরিজ হার, ছক্কায় জয় দুর্গাপুরে ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দুইজন আটক রাজশাহী কলেজে ছাত্রলীগ ‘ভয়ংকর রূপে’ ফেরার বার্তা, তদন্ত কমিটি তানোরে শিক্ষকদের একত্রকরণে কার্যকর কমিটি গঠন ও মতবিনিময় নগরীতে বিস্ফোরক মামলার ১৪ আসামি গ্রেপ্তার তানোরে ব্র্যাক সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি-বারিন্দ প্রকল্পের আয়োজনে কর্মশালা রাজশাহীতে কৃষকবান্ধব সেচ নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে মানববন্ধন বাগমারায় আ.লীগ নেতার বিল দখল, জলাবদ্ধতায় জমিতে চাষাবাদ অনিশ্চিত
বজ্রপাত প্রতিরোধক পরম বন্ধু তালগাছ : ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব

বজ্রপাত প্রতিরোধক পরম বন্ধু তালগাছ : ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। বাংলা ও বাঙালির জনপ্রিয় ফল তাল। ভাদ্র মাসের তাল না খেলে কালে ছাড়ে না বলে বাঙালি সমাজে প্রবাদও রয়েছে।

তালগাছের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে সারা দেশে রাস্তার দুই পাশে তালগাছের চারা-আঁটি রোপণের জন্য ২০১৭ সালে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর কাবিখা-টিআর প্রকল্পের আওতায় তালগাছের চারা-আঁটি লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর দেশে সবুজায়ন বৃদ্ধি করতে গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বর্ষা ও সারা বছরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন।

বিশেষজ্ঞারা বলছেন, তালগাছে কার্বনের স্তর বেশি থাকায় তা বজ্রপাত নিরোধে সহায়তা করে। কারণ, তালগাছের বাকলে পুরু কার্বনের স্তর থাকে। তালগাছের উচ্চতা ও গঠনগত দিক থেকেও বজ্রপাত নিরোধে সহায়ক। তালগাছের পাশাপাশি নারকেলগাছ, সুপারিগাছের মতো উচ্চতা সম্পন্ন গাছ বজ্রপাত নিরোধে বেশ কার্যকরী। প্রকৃতি দিয়েই প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে।

বজ্রপাত শুধু বাংলাদেশ, নয় সারা বিশ্বের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। তালগাছ লাগানোর পাশাপাশি নারকেলগাছ, সুপারিগাছ লাগানোর উদ্যোগকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।

আর ঘন সবুজে আবৃত বিস্তীর্ণ ধানখেত, মাঝখানে কর্দমাক্ত মেঠোপথ, তার দুই পাশে মাথা উঁচু তালগাছ আমাদের উপকূল ও গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি। এমন সুন্দর ও নৈসর্গিক দৃশ্য এখন খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। তালগাছ স্বল্পতার কারণে বজ্রপাতের (বিদ্যুত্স্পর্শ) হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ, পশুপাখিসহ জীববৈচিত্র্য।

আশ্রয় হিসেবে এ গাছ বাবুই পাখিদের বড়ই প্রিয় জায়গা। বাবুই ছাড়াও অঞ্জন, বাদুরসহ নানা প্রাণী আশ্রয় হিসেবে এ গাছটি বেছে নেয়। দেশে তালগাছ প্রায় বিলুপ্ত হওয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মৃত্যু বরণ করেছেন ২ হাজার ১৬৪ জন মানুষ।

এক্ষেত্রে ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১১ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে ১৬০ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন ও ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৩৬ জন।

অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ২১৬ জনের বেশি মানুষ প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে মৃত্যুবরণ করেছে। আর ২০২১ সালে বজ্রপাতে অন্তত ৩৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

চলতি বছরে ২০২২ সালের ৩ মে পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩৫। বুধবার (০৪ মে) সকালেও কক্সবাজার একজন লবণচাষি ও ফরিদপুরে একজন কৃষক মারা গেছেন। ঐ কৃষকের সঙ্গে তার গরুটিও মারা গেছে। এমনকি ঈদের দিন দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে অন্তত আট জন মানুষ।

সাধারণত একটি তালগাছ ৯০ থেকে ১০০ ফুট উঁচু হয়। উঁচু গাছ হওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি এ গাছের মাধ্যমে মাটিতে গিয়ে আমাদের রক্ষা করে। এ ছাড়াও ভূমিক্ষয়, ভূমিধস, ভূগর্ভস্থ পানির মজুত বৃদ্ধি ও মাটির উর্বরতা রক্ষা করে। তালগাছের আকর্ষণে বাড়ে মেঘের ঘনঘটা; ঘটে বৃষ্টিপাতও। তালগাছের শিকড় মাটির অনেক নিচ পর্যন্ত প্রবেশ করায় ঝড়ে হেলে পড়ে না কিংবা ভেঙে পড়ে না। যেখানে কোনো কিছু চাষ হয় না সেখানেও তালগাছ তার শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। নতুন রাস্তার ল্যান্ডস্কেপ, বাঁধ ও নদীভাঙন ঠেকাতে এর রয়েছে সফল প্রয়োগ।

পরিশেষে, তালগাছ শুধু বজ্রপাতের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করবে না বরং তালগাছের নানান উপকারিতা রয়েছে। মানুষ বিভিন্নভাবে তালগাছ দ্বারা উপকৃত হয়। যেমন: তালপাতার পাটি, তালপাতার পাখা, তালের রস, তালের গুড়, তালের শাঁস দিয়ে সুস্বাদু মিষ্টি খাবার রান্না করা হয়, তাল দিয়ে ঐতিহ্যবাহী অনেক পিঠা তৈরি করা হয়।

তালের গাছ ও পাতা ঘরের কাজে ও জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়। তালের পাতায় সুন্দরভাবে বাসা তৈরি করে সেখানে বসবাস করে। এগুলো আমাদের গ্রাম অঞ্চলের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রেখেছে। তালগাছ মানুষ ও পাখি উভয়ের জন্যই উপকারী।

তাই আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তার দুপাশে, পুকুর পাড়ে, বাড়ির আশপাশে, পরিত্যক্ত জায়গায় তালবীজ বপন করি। নিজে ও গ্রামের সবাইকে সচেতন করি তালবীজ বপনে উদ্যোগী করে তুলি এতে মানুষসহ পশুপাখি বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে। আর বজ্রপাত থেকে জীবন রক্ষায় উঁচু তালগাছের বিকল্প নেই। বেশি করে তালগাছ লাগাই, বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাই। গ্রামীণ ও উপকূলীয় জনপদে তালগাছের পরিকল্পিত চাষে নান্দনিক সৌন্দর্যরূপ তুলে ধরে তালগাছে প্রকৃতি সাজাই জীবন বাঁচাই।

আসুন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদায় ও বরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সবাই অন্তত একটি তালবীজ বপন করি। প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকগণ একটু উদ্যোগ নিলেই বদলে যাবে আমাদের চিরপরিচিত পরিবেশ ও প্রতিবেশ। এটাই হোক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিদায় ও বরণ অনুষ্ঠানের নতুন উদ্যোগ। সারা দেশে গড়ে উঠুক তালগাছে প্রকৃতির সবুজ বেষ্টনী। লেখক : পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক, সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.