শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:৩৫ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর : রাজশাহীর তানোরে কামারগাঁ ইউনিয়নের শস্য ভান্ডার হাতিশাইল মাঠে পানি প্রবাহের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও প্রায় তিনশ’ বিঘা তিন ফসলী জমি ধ্বংস করে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নিরব রয়েছে। কিন্তু হেতু কি ?
অথচ মাঠের এসব জমিতে চাষাবাদের সুবিধার জন্য বিএমডিএ কোটি টাকা খরচ করে গভীর স্থাপন, আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন ও ক্রসড্যাম নির্মাণ করেছে। এমনকি সম্পুরুক সেচের জন্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে মাঠের খাড়ি পুনঃখননের কাজ চলছে।
অথচ এসব কৃষি জমি ধ্বংস করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন যদি কৃষি জমি ধ্বংস করে পুকুর খনন করা হবে তাহলে সেচ সুবিধার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এতো সব আয়োজন কেন ? এদিকে গত ৯ মে সোমবার স্থানীয় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বিভিন্ন দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও ইদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ, উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আবু বাক্কার ও তানোর থানার অফিসার ইন্চার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান মিঞা প্রমুখ।
ওই সময় সাংসদ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে বলেন, কোনো অবস্থাতেই এক ছটাকও কৃষি জমি ধ্বংস করে কোনো পুকুর খনন করা যেন না হয়। অথচ অজ্ঞাত কারণে সাংসদের সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো ভুমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এখানো প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত্য ৫টি ভেঁকু মেশিন দিয়ে সমান তালে কৃষি জমি ধ্বংস করে অবৈধ পুকুর খনন করা হচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরিফ খাঁন প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একজন সাংসদের নির্দেশ অমান্য করে অবৈধ কাজ করার (ভেঁকু সন্ত্রাস) দুঃসাহস এরা পায় কোথায় ? এর মাধ্যমে তারা কি বার্তা দিচ্ছে ? একজন সাংসদের নির্দেশ যদি বাস্তবায়ন করা না হয়, তাহলে আমরা কোন দেশে বাস করছি ? তিনি বলেন, এই লজ্জ্বা কার ?
তিনি আরও বলেন, উপজেলার অর্থনীতি প্রায় সম্পুর্ণ কৃষি নির্ভর। তাই কৃষি জমি ধ্বংস কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব অবৈধ পুকুর খনন সম্পন্ন হলে অসময়ে জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার অমৃতপুর, আজিজপুর, নড়িয়াল, চন্দনকৌঠা, ঘৃতকাঞ্চন, কুজিশহর, হাতিনান্দা, নেজামপুর, হরিপুর, ছাঐড় ও হিরানন্দপুরসহ প্রায় ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে।
অমৃতপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন, শিবাস টিয়াল ও চন্দনকৌঠা গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, এখানে পুকুর খনন করে আমাদের পেটে লাথি মারা হচ্ছে। তারা বলেন, আমরা পুকুর প্রতিবোধের বার বার প্রশাসনের দ্বারে ঘুরছি তবে রহস্যজনক কারণে প্রশাসন নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। আবার আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের মিথ্যা মামলাসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
তারা বলেন, এভাবে চলতে থাকলে এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে নিশ্চিত খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে।
স্থানীয়রা জানান, কেশরহাট এলাকার আলোচিত সাদিকুল ইসলাম, আব্দুল করিম ও চাঁন্দুড়িয়া এলাকার মেসের আলী রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন ও মিডিয়া ম্যানেজ করে পুকুরপাড়ে রিতিমতো লাঠিয়াল বাহিনীর পাহারা বসিয়ে জোরপুর্বক সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত অবৈধ পুকুর খনন করছে।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন এক একটি পুকুরের আয়তন ২০ থেকে ৫০ বিঘা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ। প্রায় ৫০ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর খননে বিঘা প্রতি প্রশাসন ৫ হাজার, রাজনৈতিক নেতা ৩ হাজার এবং সাংবাদিক ও হোমড়া-চোমরাদের ম্যানেজ করতে বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা করে আর্থিক সুবিধা দিলেই আর কোনো বাধা থাকে না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে তানোর থানার অফিসার ইন্চার্জ ওসি কামরুজ্জামান মিঞা বলেন, এবিষয়ে তাদের করনীয় কিছু নাই। তিনি আরও বলেন, ইউএনও সাহেব ভ্রাম্যমান অভিযান করলে তারা সহযোগীতা করতে পারেন মাত্র। এছাড়াও পুকুর খনন নিয়ে আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি হলে সেক্ষেত্রে তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, কৃষি জমি নস্ট করে পুকুর খননে তাদের নিষেধ করা হয়েছে। এরপরেও যদি তারা একাজ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আবু বাক্কার বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। প্রশাসন এখানো কেনো এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সেটা তার বোধগম্য নয়।
এবিষয়ে কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী ফরহাদ বলেন, এটা উপজেলা প্রশাসনেন দায়িত্ব তারা কেনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কেন তা বোধগম্য নয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সাদিকুল ইসলাম বলেন, অবৈধ নয় সকলকে ম্যানেজ করেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। তার পুকুর খনন কেউ বন্ধ করতে পারবে না বলে দম্ভোক্তি করেন তিনি। আজকের তানোর