রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:০৪ pm
ডেস্ক রির্পোট : নওগাঁর কৃষকরা শ্রমিক-সংকটের কারণে মাঠ থেকে ঘরে ধান তুলতে পারছেন না। এদিকে কিছু দিন ধরে বৈরী আবহাওয়া শুরু হয়েছে। ঝড়ে নুইয়ে পড়েছে অধিকাংশ মাঠের ধান। অনেক ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এ অবস্থায় আকাশে মেঘ দেখলেই মাঠের নুইয়ে পড়া পাকা ধান ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, মাঠের ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে তারা ধান কাটতে পারছেন না। বিশেষ করে নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়ার বিল, মান্দার ঠাকুরমান্দা, আন্দাসুরা, নওগাঁ সদরের বিল মনসুর, হাঁসাইগাড়ী, সরইল, দিঘলীর বিলসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে যেসব কৃষক ধান আবাদ করেছেন- তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। কারণ সামান্য বৃষ্টিতেই বিলের ধান ডুবে যায়।
ঈদের দিন থেকে প্রায় প্রতি দিনই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অনেক জমিতে পানি জমি গেছে। আরেকটু বৃষ্টি হলেই অনেক মাঠের ধান পানিতে তলিয়ে যাবে। এ অবস্থায় আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখলেই শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন তারা।
সরেজমিন নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া, বর্ষাইল, দুবলহাটি, মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম, চান্দাশ, নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর, মান্দার ভালাইনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখানো হাজারো একর জমির পাকা ধান মাঠে পড়ে আছে। শ্রমিকের অভাবে এসব ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকেরা। অনেক কৃষক পরিবারের সদস্য নিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন। গত তিন-চার দিন ধরে নওগাঁর সদরের হাঁপানিয়া বাজার ও দুবলহাটি বাজার, মহাদেপুরের মাতাজিহাট মোড় ও নিয়ামতপুরের ছাতড়া বাজারে গৃহস্থদের ভিড় আর স্থানীয় এবং অন্য জেলা থেকে আসা শ্রমিকদের নিয়ে টানাটানির চিত্র চোখে পড়ে।
নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া গ্রামের কৃষক রাজু আহমেদ বলেন, ছাতড়া বিলে এবার তিনি ১৪ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। এক সপ্তাহ আগে খেতের সব ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিক না পাওয়ার কারণে এক বিঘা জমির ধানও ঘরে তুলতে পারিনি। অন্য বছর বাইরের জেলা থেকে অনেক শ্রমিক আসে। গত দুই বছর করোনার সময়েও শ্রমিকের এতো সংকট হয়নি। কিন্তু এবার বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক এসেছে খুব কম। স্থানীয় শ্রমিক থাকলেও তারা যেসব কৃষকের ধান কাটার চুক্তি নিয়েছেন সেগুলোই কেটে শেষ করতে পারছে না। এদিকে খেতের ধান ডুবে যেতে বসেছে। ধান নিয়ে এবার মহাবিপাকে পড়েছি।
ছাতড়া বিল এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর ধানকাটা শ্রমিকদের মোট ধানের ৫-৬ শতাংশ দিলেই হতো। এতে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা বাবদ খরচ পড়তো প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। কিন্তু এবার এপ্রিল মাঝামাঝি সময়ে হয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে খেতের ধানগাছ নুইয়ে পড়ায় ধান কাটতে বেশি শ্রম লাগায় ধানকাটা শ্রমিকেরা মোট ধানের ১০-১৫ শতাংশ দাবি করছে। কৃষকেরা তাদের দাবি অনুযায়ী ধান কাটতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন। এতে এ বছর এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
নওগাঁর সদর উপজেলার দুবলহাটি গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক ও কৃষক আনিসুর রহমান বলেন, ধানের বেশি থাকলেও এ বছর বোরো ধানে খুব বেশি লাভ হবে না। সেচ খরচ, সার ও পরিচর্যা বাবদ প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ৯ হাজার করে টাকা খরচ হয়েছে। তারপর ঝড়ে ক্ষেতের ধান নুইয়ে পড়ায় ১০-১২ শতাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। আবার শ্রমিক খরচ পড়ছে প্রতি বিঘায় প্রায় ৫ হাজার টাকা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার কৃষকের অনেকের ক্ষতি হয়ে গেছে। সময়মতো মাঠের ধান ঘরে তুলতে না পারলে আরও ক্ষতি হবে।
নওগাঁর সরইল বিলে ধান লাগিয়েছেন গোয়ালা গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ। তিনি বলেন, বিলত ধান থ্যাকে গ্যাছে। আকাশের যে অবস্থা। এক ঘণ্টার ভারি বৃষ্টি হলেই সব ধান ডুবে য্যাবে। দৌড়াদৌড়ি করেও শ্রমিক পাওয়া য্যাচ্ছে না। আকাশে মেঘ দেখলেই খালি আল্লা আল্লা করছি। ধান না কাটা পর্যন্ত যেন ঝড়-বৃষ্টি না হয়।
সদরের খট্টেশ্বর গ্রামের কৃষক শামসুর রহমান জানান, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে আমি প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান রোপণ করেছি। গত ৮ থেকে ১০ দিন আগে আমার জমির প্রায় সব ধান পেকে গেছে। এখন পর্যন্ত ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় ফসল ঘরে তুলতে পারিনি।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, মাঠের ৭০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত মাঠের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকেরা ধান কাটতে পারছেন না- এমন কথা শোনা যাচ্ছে। বাইরের জেলার শ্রমিক কম আসায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। ধান কাটার ভরা মৌসুমে ঈদ উৎসবের কারণে বাইরের শ্রমিকেরা আসতে পারেননি। তবে আশা করা যাচ্ছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বাইরে থেকে পর্যাপ্ত শ্রমিক চলে আসবেন। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি না হলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মাঠের ধান কাটা হয়ে যাবে।
চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ ধান পাকলেও ধান কাটা হয়েছে ২৫ শতাংশ। আজকের তানোর