শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:৩৬ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
দুদকের তালিকায় ১০০ ব্যক্তির সম্পদের পাহাড় গড়েছেন যারা আ.লীগ ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ৭৫০ মামলা ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ
ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগে এমপিও অনুমোদন ফিরছে মাউশিতে

ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগে এমপিও অনুমোদন ফিরছে মাউশিতে

ডেস্ক রির্পোট : ঘাটে ঘাটে ঘুস বাণিজ্য ঠেকাতে এমপিও অনুমোদন মাউশিতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। শিক্ষকদের ভোগান্তি কমাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য এই অনুমোদনের বিষয়টি ৭ বছর আগে আঞ্চলিক অফিসে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু বিস্তর ঘুস, দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তা ফের কেন্দ্রীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বলা যায়, শিক্ষা সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি প্যাভিলিয়নে ফিরছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাউশির প্রধান কার্যালয় দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে ২০১৫ সালে এমপিও অনুমোদনের কাজ আঞ্চলিক দপ্তরে হস্তান্তর করা হয়। প্রথমত, সারা দেশ থেকে সেবাপ্রার্থীদের ঢাকামুখী না করা। দ্বিতীয়ত, একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘুস-দুর্নীতির ঘেরাটোপ থেকে ঢাকা অফিসকে মুক্ত রাখা। কিন্তু এমপিও বণ্টন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণে ঘুস-দুর্নীতি মাঠপর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে বলে ঘোরতর অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, আগে এক জায়গায় পয়সা দিলেই যেখানে কাজ হতো, কিন্তু এখন এক জায়গার পরিবর্তে অন্তত ৪-৫ স্পটে ঘুস দিতে হয়। অনেকেই বলেন, ঘুসের বিকেন্দ্রীকরণ। ২০১৮ সালে গোয়েন্দা সংস্থার দেশব্যাপী এক অনুসন্ধানে এসব অভিযোগের সত্যতা উঠে এসেছে। ওই সংস্থা এ নিয়ে তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়। যেখানে সুনির্দিষ্টভাবে ১১৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়। প্রতিবেদনে সারা দেশে অসাধু শিক্ষক, জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম আছে। যদিও চিহ্নিতদের মধ্যে কারও সেই অর্থে কোনো শাস্তিই হয়নি। বরং গত কয়েক বছরে মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লোভনীয় পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘এমপিও বণ্টন ব্যবস্থা আমরা আগের মতোই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফিরিয়ে আনার চিন্তাভাবনা করছি। বর্তমানে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় প্রবেশপদে জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) নিয়োগ করে থাকে। ফলে কাগজপত্র সেখানে যাচাই হয়ে যায়। তাই এখন কেবল সংস্থাটির সুপারিশ তালিকা ধরে এমপিও অনুমোদন দিলেই হবে বলে মনে করছি। এই কাজটি কেন্দ্রীয় এমপিও কমিটি এখনো করে। তাই অযথা শিক্ষকদের ঘাটে ঘাটে না পাঠানোই শ্রেয়। আগের মতো এমপিও অনুমোদনের কাজ মাউশির প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’

তিনি স্বীকার করেন, ‘একজন এমপিও প্রার্থীকে প্রথমে স্কুল পর্যায়ে প্রধানকে খুশি করতে হয়। কোথাও কমিটির লোকরাও ভাগ বসায়। এরপর যতটা ঘাট আছে প্রতিটি স্থানে ধরনা দিতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অর্থ ঢালতে হয়। তবে এসবই আমাদের কাছে অভিযোগ আকারে আসে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকও অভিযোগ করতে চান না। শক্ত অভিযোগপত্রের অভাবে তদন্ত করে অভিযুক্ত খুঁজে বের করা যাচ্ছে না। সেবাপ্রার্থীদের স্বস্তির জন্যই এখন এমপিও বণ্টনের কাজ মাউশির ঢাকা দপ্তরে নিয়ে আসার চিন্তা করছি। প্রথমে প্রবেশ পদের এমপিও কেন্দ্রীয়ভাবে অনুমোদন করা হবে। পরে বাকি কাজও নিয়ে আসা হবে।’

ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অনেকে যুগান্তরকে জানান, একটি এমপিও করাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক বা উপপরিচালক পর্যন্ত চার থেকে পাঁচটি ধাপে ১ থেকে ২ লাখ টাকা দিতে হয়। আর কাগজপত্রে ঘাপলা বা ঘাটতি থাকলে এই রেট ৫-৭ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। কোনো ক্ষেত্রে টাকা না পেলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো আবেদনকারীকে এমনভাবে হয়রানি করে যে, বাধ্য হয়ে চাহিদামতো ঘুস দিতে হয় তাদের। সম্প্রতি ঢাকা অঞ্চলের একটি ঘটনার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ঢাকার একটি কলেজের ডিগ্রি স্তরের এক এমপিও আবেদনকারীর ফাইল ফেরত দেওয়া হয়েছে। ওই প্রার্থীর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে আঞ্চলিক পরিচালকের দপ্তর থেকে জানানো হয়, ‘ডিগ্রি স্তরে তৃতীয় শিক্ষক বলতে কিছু নেই। তাই তিনি এ ধরনের ফাইল অনুমোদন করেন না। পরের মাসেই ওই প্রার্থী খবর পান যে, এ ধরনের ১৩ প্রার্থীর এমপিও অনুমোদন করা হয়েছে। এরপর বিষয়টি মাউশির প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যন্ত গড়ায়। যদিও ওই শিক্ষক বলেন, তিনি টাকা দিয়ে হলেও এমপিও করাতে চান।

জানা গেছে, মাউশির ঢাকা আঞ্চলিক অফিসে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। সেখানে একজন উপপরিচালক আছেন যিনি আগে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। ঘুস বাণিজ্যে জড়ানোর দায়ে তাকে সরানো হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আগের চেয়েও লোভনীয় পদে তাকে বসানো হয়। ঢাকার বড় বড় কলেজে বিভিন্ন তদন্ত কাজে মনগড়া প্রতিবেদন দিয়ে রাতকে দিন করার অভিযোগ আছে ওই উপপরিচালকের বিরুদ্ধে।

আরও জানা যায়, শুধু ঢাকা অঞ্চল নয়, সংস্থাটির অধিকাংশ আঞ্চলিক দপ্তরের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ আছে। উল্লিখিত গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে চিহ্নিত ১১৭ জনের মধ্যে ৮৬ জন জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। ৬ জন বিভাগীয় উপপরিচালক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের ১৬ জন কর্মচারীও আছে। সিন্ডিকেটে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রধানরাও আছেন।

এক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রবেশপদে শিক্ষক নিয়োগ করার কারণে কাগজপত্র যাচাই জরুরি ছিল। কেননা অনেকেই জাল সনদে শিক্ষক নিয়োগ দিত। কিন্তু এনটিআরসিএ বর্তমানে এই নিয়োগ দেয়। এখন পর্যন্ত এ ধরনের তিনটি নিয়োগ দিয়েছে তারা। ফলে কাগজপত্র যাচাইয়ের আর দরকার হয় না।

তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী ফোরামের সভাপতি শান্ত আহমেদ বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা অর্জনে নিবন্ধনের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হয়। মৌখিক পরীক্ষার সময় তাদের সব পাশের সনদ যাচাই-বাছাই করা হয়। তাছাড়া পুলিশ ও এনএসআই ভ্যারিফিকেশন করেছে। অথচ যোগদানের পর এমপিওভুক্তির জন্য আবারও তিন ধাপে সনদ যাচাইয়ের নামে হয়রানি ও অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এর আগে দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তরাও একইভাবে হয়রানি আর ঘুস বাণিজ্যের শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি।

মাউশির সাবেক এক মহাপরিচালক যুগান্তরকে বলেন, কোটি কোটি টাকা এমপিও অনুমোদনের এখতিয়ার উপপরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে। সরকারের নীতি অনুযায়ী এ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এটা পারেন না। তারা এই ক্ষমতা পেয়েই বেপরোয়া হয়ে যায়। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি আগের জায়গায় এমপিওভুক্তির অনুমোদন ফেরত আনার চেষ্টা করে পারেননি। কেননা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জোটবদ্ধ হয়ে মন্ত্রণালয়ে আগের প্রশাসনের কাছে ধরনা ধরেছিল। জাতীয় স্বার্থে এবারে উদ্যোগ সফল হওয়া দরকার বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা। সূত্র : যুগান্তর

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.