রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:১৮ pm
ডেস্ক রির্পোট : নওগাঁয় কালবৈশাখী ঝড়ে আমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমচাষিরা বলছেন, ঝড়ে আমবাগানের প্রায় ১০-১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়ে গেছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, তারা এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে পারেননি।
শনিবার সকালে জেলার পোরশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাগানে বাগানে মাটিতে পড়ে আছে ঝরে পড়া আম। ফেটে নষ্ট হয়েছে অনেক আম। কোনো কোনো বাগানে আমগাছের ডাল ভেঙে পড়েছে।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ৯টা ৩০ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নওগাঁর বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে দমকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৮০ কিলোমিটার।
নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এ বছর ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। ৫ হাজার ২০০ আম চাষির প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বাগান রয়েছে। এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৫ মেট্রিক টন। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন।
জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ আম উৎপাদন হয় পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলা উপজেলায়।
পোরশা উপজেলার সারাইগাছী গ্রামের আমচাষি সাইফুর রহমান বলেন, ৩০ বিঘা জমির ওপর তার দুটি বাগান রয়েছে। ঝড়ে বাগানের দুই হাজার গাছের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আম পড়ে গেছে। বেশ কিছু গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। আম এখনো পরিপক্ব না হওয়ায় ঝরে পড়া আম ৩-৪ টাকা কেজির বেশি বিক্রি হবে না। আর যেসব আম ফেটে গেছে, সেসব কেউ কিনবে না।
পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, পোরশায় এবার ১০ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এবার বাগানে আম ভালো ধরেছিল। তবে গত রাতে ও চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের ঝড়-বৃষ্টিতে আমের বেশ ক্ষতি হয়ে গেল। গত রাতের ঝড়ে আমের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা যায়নি, তবে কিছু বাগান পরিদর্শন করে ধারণা হচ্ছে, বড় আম গাছের প্রায় ৬ থেকে ৭ শতাংশ আম পড়ে গেছে। আর ছোট গাছের প্রায় ২ থেকে ৩ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে।
এদিকে ঝড়ে আম ছাড়াও বোরো ধানের ক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ধানগাছ হেলে পড়ায় এবং জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ধান চিটা হয়ে যাওয়া এবং পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। এতে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁয় এবার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, গত রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে নওগাঁয় আম ও ধানের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। নওগাঁর ৭০ ভাগ বাগানই আম্রপালি জাতের আম চাষ হয়েছে। আম্রপালি গাছ আকারে ছোট হওয়ায় ঝড়ে এসব গাছের আম কম পড়েছে। তবে খিরসাপাতি, ফজলি ও গোপালভোগ আমের গাছ বড় হওয়ায় ওই সব গাছের আম বেশি পড়েছে। ছোট-বড় গাছ মিলে গড়ে ৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। এছাড়া ঝড়ে ধানের গাছ হেলে পড়ায় এবং জমিতে পানি জমে থাকায় ধানের উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হবে। আগামী এক-দুই সপ্তাহ আবহাওয়া এ রকমই বৈরী থাকবে। ক্ষেতের ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেলেই আমরা কৃষকদের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। সূত্র : যুগান্তর