মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৪৫ am
ডেস্ক রির্পোট : রাজশাহীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তাপপ্রবাহ। ফলে এখানে তীব্র গরম। আর গরমে রোজা রেখে অনেকে দিনের বেলা কেনাকাটা করছেন না। তবে ইফতারির পর বিপণিবিতানে ঢল নামে ক্রেতাদের। এ জন্য দিনের চেয়ে রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কেনাবেচা হচ্ছে বেশি।
তবে ক্রেতারা বলছেন, গত দুই-তিন বছরের তুলনায় এবার প্রায় প্রতিটি পোশাকের দাম কিছুটা বাড়তি।
ঈদুল ফিতরের এগিয়ে আসতে থাকায় নগরের আরডিএ মার্কেটের সামনের সড়কে যানজট থাকে সারা দিনই। কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, সবচেয়ে বেশি দোকান রয়েছে আরডিএ মার্কেটে। তবে নগরের বিত্তবান ক্রেতারা ভিড় করছেন ৫০-৬০টি অভিজাত বিপণিবিতানে। বাজারে এখন ‘পুষ্পা’ ও ‘কাঁচা বাদাম’ নামের পোশাকের কাটতি বেশি।
এ ছাড়া, ‘সারারা’, ‘গারারা’ ও ভারতীয় ‘অরগেনজা’ থ্রি-পিসের চাহিদাও আছে। তবে কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, ‘পুষ্পা’ ও ‘কাঁচা বাদাম’ নামে আসলে কোনো পোশাক নেই। পোশাকের বিক্রি বাড়াতে দোকানদারেরা পোশাকের এসব নাম দিচ্ছেন।
আরডিএ মার্কেটের একটি দোকানে গৃহবধূ রাহেলা বেগম তাঁর মেয়ে সুমির জন্য একটি ফ্রক পছন্দ করলেন। সুমি তা নিতে রাজি নয়। বারবার দোকানিকে বলছে ‘পুষ্পা ড্রেস’ দেখান। নগরের বোসপাড়া থেকে ঈদের বাজার করতে এসেছিলেন মনোয়ারা বেগম। তিনি দুই ছেলের জন্য কাঁচা বাদাম আর পুষ্পা শার্ট কিনেছেন। কাঁচা বাদাম আর পুষ্পা কী জিনিস, সেটা তিনি জানেন না। বাচ্চার পছন্দ তাই কিনেছেন।
একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী মোহাম্মদ মধু স্বীকার করলেন, এগুলো আসলে চায়না কাপড়ের পোশাক। ভারতীয় সিনেমা, সিরিয়ালের নামে বাজারে এসেছে। এখন অনলাইনে ক্রেতারা আগেই সব খবর পেয়ে যাচ্ছেন।
দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সাধারণত ছোট ছেলেমেয়েরা কাঁচা বাদাম, পুষ্পাতে ঝুঁকলেও তরুণীরা মেতেছেন সারারা-গারারা পোশাকে। অনেকে লং গাউন কিনছে। তবে গরম বেশি হওয়ায় সুতির কাপড় বিক্রি হচ্ছে দেদার।
এবার সারারা ও গারারা ১ হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। লং গাউন ১ হাজার ২০০ থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর ছেলেরা প্রতিবছরের মতো এবারও পাঞ্জাবি কিনছেন। ১ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকার পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে।
অভিজাত বিপণিবিতান থেকে ঈদের কেনাকাটা করেছেন স্কুলশিক্ষক সিরাজুম মুনিরা। তিনি বলেন, তাঁদের বড় পরিবার, অনেক কেনাকাটা করতে হয়। এক দিন শুধু আরডিএ মার্কেটে ঢুকেছিলেন। সেখানে পুষ্পা, কাঁচা বাদাম, সারারা, গারারার ক্রেতাদের ভিড়। তিনি অভিজাত বিপণিবিতান ঘুরে কেনাকাটা করেছেন। সেখানে ভিড় একটু কম।
রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বলেন, গত চার-পাঁচ বছরে নগরে ৫০-৬০টি অভিজাত বিপণিবিতান গড়ে উঠেছে। তারপরও আরডিএ মার্কেটের বেচাকেনার আগের চেয়ে কমেনি। ভালো বেচাকেনা হচ্ছে।
সিল্কের চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুন
এদিকে, রাজশাহী সিল্কের চাহিদা এবার গত দুই বছরের চেয়ে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে সিল্কের মসলিন থানের থ্রি–পিস, পাঞ্জাবি ও শাড়ি ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।
সপুরা সিল্ক মিলসের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, সারা দিনই বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হয়। তবে প্রচণ্ড গরমের কারণে রাত ৮টা থেকে রাত ১২টার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়।
সপুরা সিল্কের পরিচালক মো. আশরাফ আলী বলেন, এবার পোশাকে অনেক বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। তাই চাহিদা বেড়েছে। তবে থ্রি–পিস, পাঞ্জাবি ও শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি।
তিনি বলেন, করোনাজনিত মন্দা কাটিয়ে সিল্কপণ্যের চাহিদা আবার আগের জায়গায় ফিরে এসেছে। যদিও সুতার দাম বেড়েছে। তাই তাঁরা মুনাফা সীমিত রেখে প্রায় আগের দামে পোশাক বিক্রি করছেন।
রাজশাহী নগরের সাধুর মোড় এলাকা থেকে সপুরা সিল্কের বিক্রয়কেন্দ্রে আসা তরুণী তানিয়া শারমিন জানান, তাঁর একটি অনলাইন পেজ রয়েছে। এখান থেকে মসলিন থান বা র সিল্কের শাড়ি কিনে নিয়ে তিনি তার ওপর নকশা করে বিক্রি করেন। আরও অনেকেই তানিয়া শারমিনের মতো এখান থেকে কাপড় ও পোশাক কিনে নিয়ে বাড়িতে বসেই অনলাইনে বিক্রি করেন বলে জানা গেছে।
পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর থেকে আসা সাব্বির হোসেন নামের এক যুবক জানান, সিল্কের পাঞ্জাবি কিনতে এসেছেন। রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ হিসেবে সিল্কের পোশাকই তাঁদের বেশি পছন্দ। তাই এলাকার জনপ্রতিনিধির জন্য সিল্কের পাঞ্জাবি কিনতে রাজশাহীতে এসেছেন। অ্যান্ডি সিল্কের ন্যাচারাল কালারের পাঞ্জাবি খুঁজছিলেন তিনি।
সপুরা সিল্কের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান জানান, তাঁরা মসলিন থানের ওপর কাজ করা শাড়ি সাড়ে ৬ হাজার থেকে ১৯ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। আর থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ১৯ হাজার টাকায়।
তিনি বলেন, হাতের কাজ করা একেকটি পাঞ্জাবি সাড়ে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঞ্জাবির জন্য বিখ্যাত হচ্ছে তাদের অ্যান্ডি সিল্ক, যেগুলোর দাম সাত থেকে আট হাজার টাকা। তাঁরা সিল্কের শাড়ি তিন হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি করেন।