শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:২৮ am

সংবাদ শিরোনাম ::
মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য কোথাও বসাতে না পেরে বিক্রি করলেন ভাঙারির দোকানে রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই : আনন্দবাজারকে জামায়াতের আমির আগামী তিন মৌসুমের জন্য আইপিএলে যে ১৩ ক্রিকেটারের নাম দিল বিসিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ থামিয়ে রাখেননি অভিনেত্রী হিনা খান নগরীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১ জন গ্রেপ্তার তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাঁচার রোধে হট্টগোল মারপিট দুর্গাপুরে হোজা নদী পুন:খনন ও দখলমুক্ত দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলিপি রাজশাহীতে সমন্বয়ক পেটানোর ব্যাখ্যা দিল মহানগর ছাত্রদল আঘাতের দাগে সম্পর্কের রূপান্তর ! রাজু আহমেদ তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না নগরীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত আগামী ২৯ নভেম্বর খুলছে রাজশাহী সুগার মিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে স্মরণসভা রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১১ বাগমারা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেবের ইন্তেকাল তানোরে মসজিদের এসি অফিসার্স ক্লাবে, ইমামের অর্থ আত্নসাৎ প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তানোরে বিএনপির কর্মীসভা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮ জন গ্রেপ্তার লীজকৃত পুকুর দখল, মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ
নরবলি প্রথার এক বিস্ময়কর স্মৃতিচিহ্ন : ইনাম আহমেদ

নরবলি প্রথার এক বিস্ময়কর স্মৃতিচিহ্ন : ইনাম আহমেদ

আজকের তানোর ডেস্ক : অমাবস্যার রাতে ধুমধাম করে আয়োজন হতো নরবলির। কালীপূজা দিতে সমবেত হতো হাজার হাজার মানুষ। ঢাকের তাল, গান আর ধূপধুনোর ধোঁয়ায় চারদিক ভারি হয়ে উঠত।

‘আপনার অবশ্যই শাহ মখদুমের মাজার দেখা উচিত’- অণু তারেকের কথা শুনে আমি খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম। অণু জানেন আমি সেধরনের মানুষ নই। কিন্তু অণু যখন আসল কথা গোপন রেখে এধরনের পরামর্শ দেন তখন বুঝতে হবে সেখানে অবশ্যই কোনো চমক আছে। আমরাও তাই সেইমতো মাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

মাজারে পৌঁছে নীল কারুকার্যের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে গেলাম ভেতরে। বিশাল এক জলাধারের পাশে বড় একটি স্থাপনা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে। শাহ মখদুম ছিলেন একজন ধর্ম প্রচারক। বলা হয় তিনি ইরাক থেকে এক কুমিরের পিঠে চড়ে এদেশে আসেন। কুমিরটি থাকত এই জলাশয়ে।

বড় এক সাদা ভবনের পিছে সুন্দর লাল তাঁবুর মতো একটি স্থাপনা রয়েছে। অণু আমাকে লাল দালান ঘুরিয়ে পেছনে নিয়ে যান। সেখানে অর্ধেক ইট আর অর্ধেক লোহার গ্রিল ঘিরে ছোট্ট একটি জায়গা। ‘এখানে দেখুন’- ভেতরে ইশারা করলেন অণু। ‘মানুষ বলিদানের বেদী। গৌরের তান্ত্রিক রাজারা এখানেই নরবলি দিত।’

দশ ফুট বাই দশ ফুট বর্গাকার জায়াগাটির ভেতর দুটি ছোট পাথরের স্তম্ভ। এখানেই মানুষের মাথা পেতে বলি উৎসর্গ দেওয়া হতো। যূপকাষ্ঠের নিচে একটি ছোট গর্ত আছে যেখান থেকে শিরশ্ছেদের পর জমে থাকা রক্ত চলে যেত নর্দমায়। পাশেই আরেকটি বাটির মতো বড় গর্ত। কাটা মাথাটি এখানেই রাখা হতো।

বাইরে একটি ফলকে লেখা এখানে দেওরাজ নামের এক তান্ত্রিক নরবলি দিতেন। পরবর্তীতে শাহ মখদুম এ অঞ্চলের রাজাদের উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন। এখান থেকেই আবারও ইতিহাসে ফিরলাম আমরা।

মহাকালগড় লিখে গুগল করলে ম্যাপে কিছুই পাওয়া যাবে না। অবশ্য এমনটাই হওয়ার কথা। মহাকালগড় হলো পদ্মার তীরে হারিয়ে যাওয়া এক অঞ্চল যা বর্তমান রাজশাহী জেলার অন্তর্গত। আজকের দরগাপাড়াও এককালে মহাকালগড়ের অংশ ছিল। ১৩ শতকের দিকে সেখানে বিক্রম কেশরী নামে এক হিন্দু জমিদারের রাজত্ব ছিল। বাংলার সুলতানরা তাকে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন।

পদ্মার তীরে মহাকালগড়ে ধীবর সম্প্রদায় বা জেলেদের বড় অঞ্চল ছিল। মহাকালগড় ছিল এক সমৃদ্ধ জনবসতি যেখানে সব ধরনের লোক বাস করত। নদীর ধারে ছিল এক বিশাল কালী মন্দির যেখানে পূজা দিতে ভক্তদের সমাগম লেগেই থাকত। ভক্তদের বিশ্বাস মৃত্যু, কাল ও রূপান্তর নিয়ন্ত্রণ করেন সনাতন এই দেবী।

এদিকে, রাজার ঘরে দুই রাজপুত্র। তাদের একজন হলেন চাঁদ। রাজার এই পুত্ররা নিষ্ঠুর সব আচার পালন করতেন, রাজবংশে যেমনটা প্রায়ই ঘটে। কালী মন্দিরে তারা নরবলির প্রচলন করেন। আধ্যাত্মিক পুণ্যলাভের উদ্দেশ্যে নরবলি দেওয়ার জন্য স্থাপন করা হয় বিশাল এক মঞ্চ।

অমাবস্যার রাতে সেখানে ধুমধাম করে আয়োজন করা হয় নরবলির। কালী পূজা দিতে সমবেত হয় হাজার হাজার মানুষ। গান, ছন্দ আর ধূপধুনোর ধোঁয়ায় চারদিক ভারি হয়ে উঠে।

রাত বাড়লে দেখা যায় পেছনে হাত বাঁধা হতভাগা একজনকে কালো রুমালের টুকরায় চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মঞ্চের দিকে। ঢাকঢোলের আওয়াজ তীব্র হতে শোনা যায়। জ্বলন্ত ধূপ আর লাল গাঁদা ফুল দিয়ে সাজানো বেদীর দিকে জোর করে টেনে নিয়ে তাকে যূপকাষ্ঠের ওপর ফেলা হয়। তার মাথা তখন দুই স্তম্ভের মাঝে। দুজন লোক পেছনে হাত চেপে ধরে আছে।

দ্রুততালে বাজছে ঢাক। হাজার হাজার কাঁচ ভাঙার শব্দে বেজে উঠছে করতাল। জ্বলন্ত মশালের হলদে শিখায় ভক্তদের শরীরের বিন্দু বিন্দু ঘাম চকচক করছে। ঢাকের তালে উন্মাদের মতো তারাও দুলছে।

সেই সময় চকচকে ধারালো খড়গ হাতে উপস্থিত জল্লাদ। তন্ত্রসাধকরা সবাই উচ্চস্বরে মন্ত্র পাঠ করতে শুরু করেছে। জল্লাদ দুই হাতে খড়গটি খুব উঁচুতে তুলে নিয়েছে। ঠিক এরপরই চোখের পলকে দ্রুতবেগে তা নামিয়ে আনা হলো।

খুব পরিষ্কারভাবে ধর থেকে মাথা আলাদা হয়ে গেছে। মাংস কিংবা হাড় কাটতে যে ধরনের শব্দ শোনার কথা তা পাওয়া গেল না। কিন্তু মাথাটি ভূপতিত হওয়ার সঙ্গে একটা ভোঁতা শব্দের সঙ্গে রক্তের উজ্জ্বল ধারা দেখতে পেল ভক্তরা। উল্লাসে ফেটে পড়ল উন্মত্ত মানুষের দল।

একদিন শাহ মখদুমের অনুসারী ইরাকি ইসলাম প্রচারক শাহ তুরকান শহীদ বাগদাদ থেকে বোয়ালিয়ায় আসেন। তখন ১২৭৯ খ্রিস্টাব্দ। তিনি এখানে ইসলামের বাণী প্রচার করতে শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তান্ত্রিক রাজপুত্র অংশু দেও চাঁদবন্দী বর্মাভোজ ও অংশু দেও খেরজুরচাঁদ খড়গ বর্মাগুজ্জভোজের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন শাহ তুরকান। রাজকুমারদের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলে তিনি পরাজিত ও নিহত হন।

শাহ মখদুম তখন নোয়াখালীতে ইসলাম প্রচারে ব্যস্ত। শাহ তুরকামকে হত্যার খবর পেয়ে তিনি তান্ত্রিক রাজাদের শিক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নিজ বাহিনী নিয়ে শাহ মখদুম রাজশাহীতে এসে এখানকার রাজাদের সঙ্গে চারটি যুদ্ধ করেন। প্রতিবারই তিনি তাদের পরাজিত করেন। সর্বশেষ যুদ্ধটি হয় রাজশাহীর ঘোড়ামারায়। ঘোড়ামারা নামটি এসেছে এই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে যেখানে শত শত ঘোড়া নিহত হয়েছিল।

পরাজিত রাজারা ইসলাম গ্রহণের পর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। নরবলির প্রথাও শেষ হয়ে যায়। তবে শাহ মখদুমের অনুসারীরা বলির বেদীটি সংরক্ষণ করে। মাজারে গেলে আজও দেখা মিলবে এই বেদীর। লেখক : সম্পাদক, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.