বৃহস্পতিবর, ৩১ অক্টোব ২০২৪, সময় : ০১:১৮ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : পশ্চিম রেলের প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা জামশেদ মিনহাজ রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার, দুর্নীতি-অনিয়ম, অসদাচরণ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে জামশেদ মিনহাজকে পশ্চিম রেলের সদর দপ্তর রাজশাহী থেকে ঢাকায় হিসাব অধিদপ্তরের আইটি অডিট বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অনেকটা নীরবেই জামশেদ মিনহাজ রহমান রাজশাহীর রেলওয়ের নিজ দপ্তর ছেড়ে চলে যান। মহা-হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) দপ্তরের অধীন চাকরি হলেও প্রেষণে মিনহাজ রহমান পশ্চিম রেলওয়ের হিসাব বিভাগের প্রধান অর্থ উপদেষ্টা পদে প্রেষণে ছিলেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে। গত ২২ জানুয়ারি জামশেদ মিনহাজ রহমানের নানান অনিয়ম দুর্নীতি ও তার অসদাচরণ এবং বিশৃঙ্খল জীবনাচার নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অভ্যন্তরীণ তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় তাকে তুলে নেওয়া হলো রেলওয়ে থেকে।
বৃহস্পতিবার রাজশাহী ছাড়ার সময় রেলওয়ের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে তিনি ক্ষমা চেয়ে নেন। কারো কোনো অভিযোগ থাকলে ইনবক্সে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
এদিকে অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা জামশেদ মিনহাজ রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ও অসদাচরণের তদন্ত শুরু হয়েছে। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল মিনহাজ রহমানের অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত করছেন।
এ দলটি বুধবার সকালে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে পৌঁছান। তারা বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই দিন রেলওয়ের হিসাব শাখায় অবস্থান নিয়ে সরেজমিন তদন্ত কাজ করেন। তদন্ত দলের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিচালক আনিসুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। সময়ের আগে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তদন্ত শেষে ফলাফল জানানো হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামশেদ মিনহাজ রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম দুর্নীতি ও অসদাচরণের বিপুল অভিযোগ রয়েছে। তিনি দিনে অফিস করতেন না। তবে দিনের শেষে সন্ধ্যায় অফিসে ঢুকে গভীর রাত এমনকি ভোর পর্যন্ত দপ্তরে অবস্থান করে নানাবিধ বিতর্কিত কাজ করতেন।
জামশেদ মিনহাজ একজন মাদকাসক্ত কর্মকর্তা বলে দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে নিজে গভীর রাত পর্যন্ত দপ্তরে অবস্থান করে ঠিকাদারসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে বিল ছাড়করণ নিয়ে দরদাম করতেন। এ সময়ে অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তার সঙ্গে অবস্থান করতে বাধ্য করেন।
নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও টাকা নিয়ে নিজ দপ্তরে অস্থায়ীভাবে ১৬ জন জনবল নিয়োগ করেন জামশেদ মিনহাজ। তার অধীনে হিসাবরক্ষক কামাল হোসেনের মাধ্যমে বিভিন্ন ঠিকাদারিসহ বিবিধ বিলের পিসি (কমিশন) আদায় করেন।
এই কামাল হোসেনই রেলওয়ের অর্থ দপ্তরের অনিয়মের নাটের গুরু হওয়ায় মিনহাজ তাকে ব্যবহার করে বিপুল অনিয়ম করেছেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। যদিও কামাল হোসেন তার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগই অস্বীকার করে বলেছেন তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দাপ্তরিক কাজ করেন। কোনো অনিয়ম করেননি।
জানা গেছে, জামশেদ মিনহাজ রহমান ১৮তম অর্থ ক্যাডারের কর্মকর্তা। প্রায় ১২ বছর আগে কাউকে কিছু না জানিয়ে পরিবার নিয়ে কানাডায় পাড়ি জমান। সরকারকে কিছু না জানিয়ে সেখানে ১২ বছর অবস্থানের কারণে তার চাকরি চলে যায়। এরপর ২০১৯ সালে দেশে ফিরে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। তবে সরকারি অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘ সময় কানাডায় অবস্থানের তথ্য গোপন করে চাকরি ফেরতের রায় নিজের পক্ষে নেন।
এরপর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে পশ্চিম রেলওয়ের সদর দপ্তর রাজশাহীতে অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তার পদে পদায়ন করা হয়। রাজশাহীতে এসেই তিনি নানাবিধ অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তার ব্যক্তিগত আচরণ ও জীবনাচারও চরম বিশৃঙ্খল বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে পশ্চিম রেলওয়ের অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানীকে পাশ কাটিয়ে অধিকাংশ ফাইলপত্র নিজের কাছে নিয়ে নেন। তিনি নিজের মতো করে বিল ছাড়করণসহ এককভাবে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহীতে পদায়ন হওয়ার পর কোটি কোটি টাকার বিল একক সিদ্ধান্তে ছাড় করেছেন। জামশেদ মিনহাজের বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। মিনহাজের বিরুদ্ধের সরকারি যানবাহন ব্যবহারেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জামশেদ মিনহাজ রহমান বলেন, আমি তদন্ত দলকে সহযোগিতা করছি। এসব অভিযোগ নিয়ে এখন কিছুই বলা সম্ভব নয়। তদন্ত হচ্ছে।
এর আগে গত ২১ জানুয়ারি জামশেদ মিনহাজ রহমান জানিয়েছিলেন, তিনি এসব বিষয়ে কারও কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। তার ব্যক্তিগত জীবনাচার ও অতিরিক্ত মাদক গ্রহণের অভিযোগ নিয়েও তিনি কাউকে কিছু বলতে বাধ্য নন বলে দম্ভোক্তি করেছিলেন।
জানতে চাইলে পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহ বলেন, জামশেদ মিনহাজ রহমানের বদলি হয়েছে ঢাকায়। বৃহস্পতিবারই তাকে বিদায় করা হয়েছে বলে শুনেছি। তার বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়ে জিএম আরও বলেন, এ বিষয়ে তাকে কিছু জানানো হয়নি। সূত্র- যুগান্তর।