মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৩৯ am
ডেস্ক রির্পোট : চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া বাকি ৬১টি জেলা পরিষদ গত রোববার হঠাৎ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এখন নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে প্রশাসক বসানোর কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। জেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম প্রস্তাব করে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে জেলা পরিষদে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে গত সোমবার চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ঈদের আগেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ঈদের পর নির্বাচন হবে। ফলে প্রশাসক হতে যেমন কেউ কেউ তদবির করছেন, অন্যদিকে চেয়ারম্যান পদেও মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। প্রশাসক পদে দায়িত্ব পালন অবস্থায় কেউ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের সুযোগ পাবেন না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসক নিয়োগের জন্য নামের তালিকা আসা শুরু হয়েছে। এসব নাম থেকে প্রধানমন্ত্রী যাদের মনোনীত করবেন তাদের নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তবে প্রশাসকরা খুব বেশিদিন চেয়ারে বসার সুযোগ পাবেন না। কারণ ঈদের পরপরই হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমনিতেও প্রশাসকের মেয়াদ কোনোভাবেই ১৮০ দিনের বেশি হবে না। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজে হাত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। জেলা পরিষদের ভোটার হলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর। জেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী তারা ভোটার নন। অর্থাৎ, তারা নিজেরা নিজেদের ভোট দিতে পারেন না।
এদিকে গত রোববার হঠাৎ পরিষদ ভেঙে দেওয়ায় অনেক চেয়ারম্যানেরই মন খারাপ হয়েছে। কারণ তাদের নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও কেমব্রিজ বিশ্বিবদ্যালয়ে জেলা পরিষদ সংক্রান্ত কার্যক্রমের ওপর প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল স্থানীয় সরকার। এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদনও দিয়েছিলেন। পরিষদ বিলুপ্ত হওয়ায় চেয়ারম্যানরা ইউরোপ সফর থেকে বঞ্চিত হলেন। এ নিয়ে চেয়ারম্যানদের কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জামালপুর জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহম্মদ চৌধুরী বলেন, আমি রোববার দুপুরে অফিসে গিয়ে চিঠি পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। উচিত ছিল প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পর তাদের কাছে আমাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা আমলাদের কারসাজি। তারা জনপ্রতিনিধিদের কোনো তোয়াক্কাই করছে না। স্থানীয় সরকার বিভাগ যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তা চেয়ারম্যানদের জন্য অপমানজনক। অন্যায়ভাবে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের অপমানিত করা হয়েছে।
জামালপুর জেলা পরিষদের একজন সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন, ‘জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। আজ মুজিবনগর দিবসের (১৭ এপ্রিল) অনুষ্ঠান চলার প্রাক্কালে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছিল যে আজকেই প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এক-দুই দিন পর করলে কি হতো না! সবই আমলাতান্ত্রিক কারসাজি।’
এদিকে পরিষদ বিলুপ্ত হওয়ার পর জেলা পরিষদগুলোর প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) চালিয়ে নিচ্ছেন। তবে নতুন কোনো প্রকল্পের কাজে তারা হাত দিতে পারবেন না। মূলত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া এবং প্রশাসনিক রুটিন কাজগুলোই দেখভাল করছেন বলে জানিয়েছেন একজন সিইও। এ পদে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিবরা দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা পরিষদ আইন-২০০০ অনুযায়ী পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান পরিষদের দায়িত্ব অব্যাহত রাখার বিধান ছিল। তবে গত ৬ এপ্রিল সংসদে আইনটির সংশোধনী পাস হয়। এতে মেয়াদ শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। জেলা পরিষদের পুরনো আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ সদস্য ও ৫ নারী সদস্য মোট ২১ সদস্যের পরিষদ ছিল।
৬ এপ্রিল সংসদে পাস হওয়া সংশোধিত আইন অনুযায়ী জেলার প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে সদস্য এবং চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ (নিকটবর্তী পূর্ণ সংখ্যা) নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হবে। জেলার অন্তর্গত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা জেলা পরিষদের ভোটার। পরিষদ গঠনের পর প্রথম সভার মেয়াদ থেকে পাঁচ বছর পূর্ণ হলে জেলা পরিষদ আইন-২০২২ এর ক্ষমতা বলে পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করবে সরকার।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, প্রশাসক নিয়োগের তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। তালিকা চূড়ান্ত হলেই নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সদ্য সাবেক চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে প্রশাসক নিয়োগ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমি বলতে পারব না। সরকারের শীর্ষ মহলই বিষয়টি জানেন। নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটের বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।
জেলা পরিষদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়েছে। আমাদের ইউপি নির্বাচনসহ অনেক নির্বাচনই নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে করতে পারেনি। জেলা পরিষদের ভোটার হলেন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চেয়ারম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলর, মেয়র। যেহেতু ওই নির্বাচনগুলো (ইউপি, পৌরসভা) সম্পূর্ণ করা যায়নি, এ কারণে জেলা পরিষদের নির্বাচন করাও চ্যালেঞ্জিং ছিল। তিনি আরও বলেন, আইনটা জনকল্যাণমুখী করার জন্য সংশোধনের প্রয়োজন ছিল। সেই সংশোধনীসহ আইনটি পাস ও অনুমোদিত হয়েছে। বর্তমান আইনের বিধান অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগ করার প্রয়োজনীয়তা আছে। প্রশাসক নিয়োগ করার জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি।
অন্যদিকে গত রোববার এক প্রজ্ঞাপনে জেলা পরিষদের ‘সচিব’ পদটিকে ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’ হিসেবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জেলা পরিষদ আইন (সংশোধন)-২০২২ এর ধারা ৭ অনুযায়ী জেলা পরিষদের ‘সচিব’ পদের নাম ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’ হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।