মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৪৩ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) থেকে বিদেশগামীদের জাল সনদ সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে দীর্ঘদিন ধরে জাল সনদ সরবরাহের কাজ করে আসছেন টিটিসি মসজিদের ইমাম আবু তালহা।
গত ১৩ এপ্রিল বিপ্লব নামের একজন বিদেশগামী শ্রমিককে জাল সনদ সরবরাহ করেন ইমাম আবু তালহা। সনদটি নিয়ে ওয়ার্ক পারমিট নিতে পাসপোর্ট শনাক্তে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে পাঠানো হলে তা জাল বলে ধরা পড়ে। তবে টিটিসির অধ্যক্ষ বিষয়টি জানার পরও ইমাম তালহার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সূত্র জানায়, রাজশাহী টিটিসিতে বিদেশগামী শ্রমিকদের বাধ্যতামূলকভাবে তিন দিনের ওরিয়েন্টেশন বা পরিচিতিমূলক প্রশিক্ষণ নিতে হয়।টিটিসির দেওয়া সনদ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। সেখানে শ্রমিকের ব্যক্তিগত সব তথ্যসহ ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে একটি রসিদ গ্রহণ করতে হয়। নিতে হয় ওয়ার্ক পারমিট। সেই রসিদ প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে স্মার্ট কার্ড নিতে হয়। এই কার্ডই প্রবাসী শ্রমিকের শনাক্তকরণ মূল পরিচিতিপত্র। রাজশাহী টিটিসির একজন প্রশিক্ষক জানান, বিদেশে জনশক্তি প্রেরণের সঙ্গে যুক্ত দালালরা শ্রমিকদের না পাঠিয়ে টাকার বিনিময়ে এই সনদ সংগ্রহ করে দেন। ইমাম তালহা দীর্ঘদিন ধরে চোরাপথে এই জাল সনদ বাণিজ্য করে আসছেন। আরেকজন প্রশিক্ষক বলেন, আবু তালহা জাল সনদ বিক্রি করে প্রতি মাসে লাখ টাকা কামিয়েছেন।
এই টাকার ভাগ টিটিসির কারা কারা পেয়েছেন তা নিয়েও কানাঘুষা চলছে টিটিসিতে। টিটিসি সূত্র জানায়, অন্যান্য জেলার শ্রমিকরা বাস্তবে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন না। তারা গোপনে দালালের মাধ্যমে টাকা দিয়ে জাল সনদ কিনে নেন। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে ইমাম আবু তালহা সনদ বাণিজ্যে নেমে পড়েন। অধ্যক্ষের আস্থাভাজন হওয়ায় এর আগে কেউ তাকে ধরার সাহস পায়নি।
জানা গেছে, মসজিদের ইমাম আবু তালহার টিটিসি প্রধান ফটক লাগোয়া একটি কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকান আছে। এই দোকান থেকেই ইমাম তালহা বিদেশগামী শ্রমিকদের ভুয়া প্রশিক্ষণ সনদ সরবরাহ করেছেন এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল হান্নান জানান, গত ১৩ এপ্রিল নওগাঁ জেলার একজন বিদেশগামী শ্রমিকের প্রশিক্ষণ সনদ যাচাই করতে গিয়ে সেটি জাল বলে শনাক্ত হয়। সনদে রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষের সিল স্বাক্ষর ছাড়াও কর্মসংস্থান ব্যুরোর মহাপরিচালকের স্বাক্ষরও জাল বলে ধরা পড়ে। পরে খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় ইমাম তালহার কম্পিউটারের দোকান থেকে এই জাল সনদ সরবরাহ করা। বিষয়টি টিটিসির অধ্যক্ষকে জানানো হয়।
ইমাম তালহার দোকান থেকে টিটিসির জাল সনদ সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক বলেন, ইমাম আবু তালহা মৌখিকভাবে ভুল স্বীকার করায় তাকে প্রথমবারের মতো ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। মানবিক দৃষ্টিতে তাকে ক্ষমা করেছি। ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবে না বলে অঙ্গীকার করেছে। তা ছাড়া ওই ইমাম টিটিসির আওতাভুক্ত নয়। তার কর্তৃপক্ষ হচ্ছে মসজিদ কমিটি। তার ব্যবস্থা মসজিদ কমিটি নিতে পারে।
জাল সনদ প্রসঙ্গে ইমাম আবু তালহা বলেন, কীভাবে এমন ঘটনা ঘটেছে তিনি জানেন না। দোকানের কোনো কর্মচারী এমন কাজ করেছে কিনা তিনি বলতে পারছেন না। আগামীতে যাতে এমন কাজ না হয় তিনি সেই নিশ্চয়তা দিয়েছেন অধ্যক্ষকে। সূত্র : যুগান্তর