শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:২৫ am
ডেস্ক রির্পোট : ‘ওই যে পূর্ব তোরণ-আগে/দীপ্ত নীলে, শুভ্র রাগে/প্রভাত রবি উঠল জেগে/দিব্য পরশ পেয়ে,/নাই গগনে মেঘের ছায়া/যেন স্বচ্ছ স্বর্গকায়া/ভুবন ভরা মুক্ত মায়া/মুগ্ধ-হৃদয় চেয়ে।’ বাংলার রূপমুগ্ধ কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা নববর্ষকে কবিতার পঙ্ক্তিতে আবাহন করেছিলেন। মহামারি করোনার নাগপাশ থেকে অনেকটা মুক্ত হয়ে আজ বাংলার আকাশে উঠেছে নতুন বছরের নতুন সূর্য। আজ পহেলা বৈশাখ। বঙ্গাব্দ ১৪২৯-এর প্রথম দিন। আজ বাঙালির একান্ত উৎসবের দিন। বাঙালি আজ বিশ্ব বাঙালি হয়ে তাই নব-আনন্দে বরণ করে নেবে নতুন বছরকে।
পুরোনো জরাজীর্ণকে দূরে ঠেলে আজ স্বপ্ন দেখার দিন, নতুন আলোয় অবগাহনের দিন। বাংলার ঘরে ঘরে আজ উৎসবের আমেজ। পহেলা বৈশাখ বাঙালির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। হাজার বছরের ঐতিহ্যের বহমানতায় আজ বাঙালি হারিয়ে যাবে বাঁধাভাঙা উল্লাসে। লাখো মানুষ আজ ঘরের বাইরে ছুটে আসবে বাঁধভাঙা উল্লাসে মাততে।
মহামারিকালের প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ভরে যাবে বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। আজকের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো সব গ্লানিকে মুছে ফেলে সবাই গেয়ে উঠবে নতুন দিনের গান। ১৪২৮-এর আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। জাতিধর্মনির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে নববর্ষ উদযাপনে একসঙ্গে গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।
বাংলার গ্রাম, শহর, বন্দর, পথঘাট-সব জায়গায় আজ দোলা দেবে পহেলা বৈশাখ। নাচে-গানে, ঢাকে-ঢোলে, শোভাযাত্রায় পুরো জাতি বরণ করবে নতুন বছরকে। খোলা হবে বছরের নতুন হিসাব নিয়ে হালখাতা। চলবে মিষ্টিমুখ। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। আরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর রমনার বটমূলে বর্ষবরণের কেনো আয়োজন ছিল না।
কিন্তু এবার বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে রমনার বটমূলে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে ছায়ানট। ‘নবীন আশা জাগল যে রে আজ/ নূতন রঙে রাঙা তোদের সাজ’ স্লোগানে রাগালাপের মধ্য দিয়ে আজ সকাল ৬টায় রমনার বটমূলে শুরু হবে ছায়ানটের বাংলা নববর্ষবরণের আয়োজন। এবারের প্রতিপাদ্য ‘নব আনন্দে জাগো’। রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় ও স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনায় রেখে এবারের আয়োজনে শিল্পীসংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে।
গত দুইটি বছরে সে অর্থে বাংলা বর্ষবরণের আয়োজন ছিল না। গতবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদেই সীমাবদ্ধ ছিল বাংলা বর্ষবরণের আয়োজন। মঙ্গল শোভাযাত্রা হয় সীমিত পরিসরে। সেখানে ছিল না আমজনতার অংশগ্রহণ। কিন্তু এবার বাঙালি নববর্ষ ১৪২৯-কে বরণ করে নেবে উৎসব আর উদ্দীপনায়। ‘নির্মল কর, মঙ্গল কর মলিন মর্ম মুছায়ে’ প্রতিপাদ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে।
আর মেটিভ হিসাবে এবার শোভাযাত্রার সম্মুখে লাল টেপা পুতুলের পরিবর্তে থাকবে সাদা টেপা পুতুল, যা নির্মলতার প্রতীক। এবারের প্রতিপাদ্য-‘নির্মল কর, মঙ্গল কর মলিন মর্ম মুছায়ে’। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলার সামনে থেকে শুরু না হয়ে টিএসসির সামনে থেকে শুরু হবে। মেট্রোরেলের কাজ এখনো সমাপ্ত না হওয়ায়ই এমন সিদ্ধান্ত।
বরাবরের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রা সকাল ৯টায় শুরু হবে। টিএসসি থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি উপাচার্যের বাসভবন মোড় ঘুরে আসবে। জানা যায়, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদের প্রস্তুত করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিরত থাকতে হবে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো থেকেও।
পহেলা বৈশাখ মানেই পুরোনো, জরাজীর্ণকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া। জাতির জীবনের নানা পর্যায়ের বিগত ক্লান্তি, ক্ষোভ, দুঃখ, হতাশা ভুলে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেবে সবাই। অসাম্প্রদায়িকতার দীক্ষা নিয়ে সব আস্ফালনের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার সংকল্প ব্যক্ত করবে। পহেলা বৈশাখ পালনের হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। এটি সারা দেশে ছড়িয়ে গেলেও এ উৎসব মূলত এসেছে গ্রামবাংলার মাটির কোল থেকে। তবে বাঙালি এখন বিশ্ববাঙালি। বিশ্বের যেখানেই থাকুক বাঙালি, আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠবে নতুন বাংলা বছরকে বরণ করে নিতে।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আজ সরকারি ছুটি।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে দেশের সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে বৈশাখী র্যালি আয়োজন করা হবে। তাছাড়া কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) কর্তৃক বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কর্তৃক ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে নববর্ষ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, কপিরাইট অফিস ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আলোচনাসভা, প্রদর্শনী, কুইজ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট/একাডেমিগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।
আজ বাংলা নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ও ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব জাদুঘর ও প্রত্নস্থান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত আজ। শিশু-কিশোর, ছাত্রছাত্রী, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিনা টিকিটে প্রবেশের সুযোগ থাকছে।
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে এবং যথাযথ আড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো এ উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অভিজাত হোটেল ও ক্লাবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন রাখা হয়েছে।
সব সরকারি-বেসরকারি টিভি, বাংলাদেশ বেতার, এফএম ও কমিউনিটি রেডিও বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি চ্যানেলগুলো রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে। দেশের পত্রপত্রিকায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
‘বাংলা নববর্ষ ১৪২৯’ উদযাপনকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারা দেশে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আজকের তানোর