রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৩৭ pm
আর কে রতন, বিশেষ প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে দীর্ঘ ৩ বছর বন্ধ থাকার পর এবার লাখো ভক্তের পদচারণায় আবার মুখরিত হয়ে উঠেছে নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার ঐতিহাসিক শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউ মন্দির প্রাঙ্গণ। রবিবার হতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে সনাতন ধর্মাবলম্বী, পুর্ণ্যার্থীদের ঢল নেমেছে। হিন্দুমতে ভগবান শ্রী রামের জন্মোৎসবকে ঘিরে প্রায় ৩শ’ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ স্থান এটি। নারী-পুরুষ ভক্তের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মন্দিরের চারিপাশ।
রাম নবমী উপলক্ষে চৈত্র মাসে রামের জন্ম তৃতীয়া শুক্লা তিথিতে রোববার মন্দিরে বিশেষ পূজা-অর্চনার আয়োজন করা হয়। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হয় এ পুজা-অর্চনা। কীর্তন, প্রসাদ বিতরণ, ভক্তদের পুজো অর্চনা, ভোগ নিবেদন এবং মানত দেয়ার মধ্যদিয়ে উৎসব মুখর হয়ে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গন। কমিটির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবীর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পুলিশ সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে রেখেছে এবারেও।
ঐতিহাসিক প্রত্বতত্ব নিদর্শনে সমৃদ্ধ উত্তরের নওগাঁ জেলার অন্যতম পূণ্যভূমি স্থাপত্যের মধ্যে মান্দা উপজেলার ঠাকুর মান্দা রঘুনাথ জিঁউ মন্দিরটি কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সতের শতকের অন্যতম স্থাপত্যের মধ্যে এটি একটি অন্যতম। চৈত্র মাসের নবমী তিথিতে রামনবমী উৎসব ১৫ দিন ধরে চলে। এখানে নানা ধর্মীয় উৎসব ও মেলা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এটি একটি অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে সারা ভারত উপ-মহাদেশে।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শ্রী ব্রজেন চন্দ্র সাহা বলেন, দীর্ঘদিন করোনা ভাইরাসের কারনে সনাতন ধর্মাবলীদের ঐতিহাসিক শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউ মন্দিরের অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। কিন্তু এবছর করোনার প্রভাব কমে আসায় অনুষ্ঠানটি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাসন্তী পুজোর শুরু তথা ষষ্ঠি থেকে নবমী এবং এর ৯দিন পর লক্ষনভোজের মধ্যদিয়ে একটানা ১৫ দিন ব্যাপী ধর্মীয় উৎসব চলে মহা ধুমধামের মধ্যদিয়ে। এই উৎসবে বিশেষ করে রামনবমী উৎসবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ভক্তবৃন্দ ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও ভক্তরা আসেন ঠাকুর দর্শনে ও তাঁদের মানত দিতে। হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভক্তের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে মন্দিরের চারিপাশে প্রায় ১ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে। শত শত বাস, মাইক্রোবাস, জীপ আর হাজার হাজার ভ্যান ও ভটভটিতে চড়ে ভক্তরা আসেন এই রঘুনাথ মন্দিরে।
নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৪০ কিঃ মিঃ পশ্চিমে মান্দা উপজেলার এই ঠাকুর মান্দা গ্রামের অবস্থান। এক সময় এই মন্দিরের চারি ধারে বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে ছিল শুধু বিল। মন্দিরের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শিব নদী। একসময় এই নদীর ছিল পূর্ণ যৌবন । এই নদীতে ভক্ত দর্শনার্থীরা গঙ্গা স্নান করে ভেজা কাপড়ে পাশের বিল থেকে পদ্মের পাতা তুলে মাথায় দিয়ে মন্দিরে যেত ঠাকুর দর্শনে। এখনো কিছুটা হলেও ভক্তরা সেই রীতি-নীতি মেনে চলার চেষ্টা করেন। নদী এবং বিলে পানি না থাকলেও ভক্তরা মন্দির সংলগ্ন পুকুরে স্নান করে ভেজা কাপড়ে কেউ কেউ আবার দুর্লভ পদ্মপাতা সংগ্রহ করে তা মাথায় দিয়ে তার ওপর মাটির পাতিল বোঝাই ভোগের মিষ্টান্ন মাথায় নিয়ে দীর্ঘ লাইন ধরে প্রভুর চরনে নিবেদন করে থাকেন।
কেউ কেউ এক সপ্তাহ ধরে মন্দিরের পার্শ্ববর্তী মাঠেই আস্তানা গাড়ে। সেখানেই রান্না করে খেয়ে তারা সেখানেই অবস্থান করে। ভক্ত বৃন্দদের ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে কমিটির লোকজন সেখানে পদাবলী কীর্তনের ব্যবস্থা করেছেন। প্রবীনদের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ১৭৮০ সালে নাটোরের রানী ভবানী মান্দার এই রঘুনাথ মন্দির নির্মাণ করেন। এর গঠন পিরামিডাকৃতির। মন্দিরের সম্মুখে ডরিক স্তম্ভবিশিষ্ট অর্ধবৃত্তাকার বারান্দা আছে। মন্দিরটি সপ্তদশ শতকের হলেও এর অভ্যন্তরে স্থাপিত বিগ্রহ গুলো আরো অনেক পুরনো।
ঠাকুর মান্দা রঘুনাথ জিঁউ মন্দির কমিটি সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে চন্দন কুমার মৈত্র ও সত্যেন্দ্র নাথ প্রামানিক বলেন, ইতিহাস প্রসিদ্ধ অলৌকিক মাহাত্ম সংবলিত ঠাকুর মান্দায় শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউ মন্দিরে শ্রী শ্রী রাম চন্দ্রের জন্ম উৎসব হিসেবে নানা ধর্মীয় আঙ্গিকে প্রতিবছর এখানে উৎসব পালিত হয়ে আসে। এটি হিন্দু সমপ্রদায়ের তীর্থস্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে জানান তারা। তাদের মতে, এই মন্দিরে সকল ধর্মের-বর্ণের মানুষ নানা মানত করেন এবং সুফলও পেয়ে থাকেন অনেকেই। আজকের তানোর