সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৩৫ am
ডেস্ক রির্পোট : পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার ভাঁয়না, সাতবাড়িয়া, দুলাই ও নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি গ্রামের সরকারি ৮ কিলোমিটার রাস্তার পাশে লাগানো শত শত বাবলাগাছ কোনো নিয়মনীতি না মেনেই প্রকাশ্যে কেটে নেওয়া হচ্ছে।
গাছগুলোর আনুমানিক মূল্য হবে প্রায় কোটি টাকা। জলবায়ুসহিষ্ণু বাংলাদেশ গড়ার জন্য সরকার থেকে অপ্রয়োজনে গাছ না কাটা ও পতিত জমিসহ রাস্তার ধারে বেশি বেশি করে গাছ লাগানোর কথা বলা হলেও সরকারের এ নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে সাঁকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ইমান আলী নিজের স্বার্থে গাছগুলো নিধন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার নাজমুল হাসান জানান, সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্প নামে কোনো সংগঠনের এ অফিসে রেজিস্ট্রেশন করা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সুজানগর পৌরসভার ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা ইমান আলী বন বিভাগের বাগান মালী হিসেবে কর্মরত থেকে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন। চাকরিকালে তার ছেলে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের একটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত তুষারকে সভাপতি ও তিনি নিজেই নির্বাহী পরিচালক নাম ব্যবহার করে সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গড়ে তোলেন। রেজিস্ট্রেশনহীন এই সংগঠনের নামে এ মূল্যবান গাছগুলি নিধন করে বিক্রি করা হচ্ছে।
এর আগে সুজানগর উপজেলার ভাঁয়না ইউনিয়নের হেমরাজপুর মুজিব বাধ থেকে মটপাড়া বিল পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, একই ইউনিয়নের কেস্টপুর হতে দূর্গাপুর হয়ে মতিয়ার বিল পর্যন্ত ২ কিলোমিটার, সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের মুজিব বাধ হতে শ্যামনগর গ্রাম পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের মুজিববাধ হতে জুঙ্গালভাঙ্গা হালট পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, দুলাই ইউনিয়নের শান্তিপুর হতে কামারপাড়া পর্যন্ত ১ কিলোমিটার ও একই ইউনিয়নের চিনাখড়া হতে বগাজানি পর্যন্ত ১ কিলোমিটার এবং খয়রান ব্রিজের মোড় হতে কাপালিপাড়া হয়ে মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তার পাশে তাদের লাগানো গাছ দাবি করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দুস্কৃতকারীদের কবলে পরে বাগানে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে কর্তনের জন্য ইউএনও বরাবর আবেদন করেন ইমান আলী।
আবেদনপত্রে দেখা যায়, ওই সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষর। তবে নতুন রাস্তা নির্মাণ করার জন্য গাছগুলো কর্তন করা প্রয়োজন উল্লেখ করে দুলাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহানের সুপারিশ সংবলিত স্বাক্ষর করা দেখা গেলেও তিনি আবেদনে উল্লিখিত সব তথ্য সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান।
পত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রওশন আলী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলে বনায়নের নীতিমালা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু সাঁকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্প নামে ভুঁইফোড় ওই সংগঠনটি কোনো ধরনের সরকারি নীতিমালা না মেনেই শত শত বাবলাগাছ প্রকাশ্যে কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
পাবনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র সোমবার যুগান্তরকে জানান, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গাছগুলো কর্তন করা হচ্ছে। এ ধরনের গাছ কাটতে হলে সংশ্লিষ্ট ওই সংগঠনের একটি রেজুলেশনসহ স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপনের মাধ্যমে লিখিত আকারে গাছকাটার জন্য রেজুলেশন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পাবনা জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠাবেন। পরে পাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে আবেদনটি পাবনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে (সামাজিক বন বিভাগ) এর নিকট পাঠাবেন।
এ বিষয়ে সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ইমান আলী জানান, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবগত করে নিয়ম মেনেই তিনি গাছ কাটছেন।
সুজানগর সামাজিক বনায়ন নার্সারী ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাদের কাছে জীবিত ও কাটা ওই সব গাছের মূল্য নির্ধারণ করে চাইলে আমরা সেটি করতে প্রস্তুত রয়েছি।
সুজানগরের ওসি আব্দুল হান্নান জানান, ভাঁয়না ইউনিয়নের দুর্গাপুরে অবৈধভাবে গাছ কাটা হচ্ছে স্থানীয় এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে সাঁকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ইমান আলীকে গাছ কাটার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলা হলেও তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রওশন আলী সোমবার জানান, রোববার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবৈধভাবে কাটা গাছগুলো জব্দ করা হয়েছে। অবৈধভাবে এ গাছকাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির জানান, গাছ কাটার বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। যেহেতু এখন অবগত হলাম। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী সরকারি রাস্তার গাছ এ ভাবে প্রকাশ্যে কেটে নেওয়ায় ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন। সূত্র : যুগান্তর