সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:১৯ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : রাজশাহীর বাঘায় অন্তঃসত্তার ৬ মাস পর, গত বছরের ৩০ জুলাই’২১ মেয়েকে ধর্ষনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন বাঘা উপজেলার তুলশিপুর গ্রামের রুজদার আলী। (বাঘা থানার মামলা নম্বর ৩২ তারিখ-৩০-০৭-২০২১ ইং)। মামলায় আসামি করা হয়, একই গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে সোহেল রানাকে।
মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,মামলাটি চাঞ্চল্যকর। অথচ সময়মতো মামলার চার্জশিট দাখিল করা যায়নি। কাঙিত সময়ে ডিএনএ পরীক্ষার ডাক্তারি প্রতিবেদন মিলছে না। তদন্তের দীর্ঘ সূত্রতার কারনে ভুগান্তিতে পড়েছে ধর্ষণের মামলার বাদি-আসামি উভয়েই। ভুক্তভোগীর দাবি, মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ হওয়ার পর ন্যায় বিচার পেলে সমাজে অন্তত সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারবে।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, গত বছরের ২৯ জানুয়ারি’২১ দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে নিজ গ্রামের বাঁশ বাড়ির বিলে আম বাগানে খড়ি ভাঙ্গানোর জন্য যাচ্ছিল রুজদার আলী ১৮ বছর বয়সের মেয়েটি। পথিমধ্যে সোহেল রানা ভয়ভীতি দেখায়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। ৩০ জুলাই’২১ইং ধর্ষনের অভিযোগে মামলা করা হয়। এই মামলা দায়েরের দুই সপ্তাহ আগে (১৫ জুলাই) একই থানার হরিপুর গ্রামের সাহেব আলী (৪০)’র সাথে মেয়েকে বিয়ে দেন রুজদার আলী।
রুজদার আলী অভিযোগে উল্লেখ করেন, বিয়ের সপ্তাহ খানেক পর (২২ জুলাই’২০২১ ইং) মেয়ে জামাই তার বাড়িতে আসে। পরে জামাতা সাহেব আলী জানান,কয়েকদিন আগে যেই মেয়েকে বিয়ে করেছেন তার পেটে বাচ্চা আছে। ২৫ জুলাই’২১ ইং সেবা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিব সেন্টারে গিয়ে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করানোর পর সেখানকার দেওয়া রিপোর্টে জানেন মেয়েটি ২৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। বাদির মেয়ে ধর্ষিতা হওয়ায় ০৬-১১-২০২১ইং সালে একটি কণ্যা সন্তান প্রসব করে।
৩০-১২-২০২১ ইং তারিখে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আত্নসমর্পন করেন সোহেল রানা। বিজ্ঞ কৌশলীর মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ ও মিথ্যাভাবে মামলায় জড়ানোর দাবি করে জামিনের আবেদন করেন। জামিন আবেদনে ভিকটিমের সন্তান আসামীর নয়, বা কাহার দ্বারা সৃষ্টি তাহা সঠিক ভাবে চিহিৃত করণের জন্য আসামীপক্ষ বিজ্ঞ আদালতে ডিএনএ টেষ্টের জন্য দরখাস্ত আনয়ন করেন। দাবি করা হয়, ডিএনএ টেষ্ট করা হলে সত্য ঘটনাটি বেরিয়ে আসবে।
২০০০ সালের নারি ও শিশু নির্যাতন দমন আইন(সং/৩) এর ৯(১) ধারার অভিযোগটি জামিন অযোগ্য ও মামলা তদন্তাধীন বিবেচনায় জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে আসামীকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। আসামী পক্ষের বিজ্ঞ কৌশলী নরেশ চন্দ্র মন্ডল জানান, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। ( জিআর মামলা নং-১৯২/২১ইং)। কিন্তু যে আসামি আদালতে আত্নসমর্পন করেছিল, পুলিশ তাঁকে সহ ভিকটিমের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠায়নি।
এদিকে,একই বছরের ৩ ডিসেম্বর (০৩-১২-২০২১) ধর্ষিতার মা মদিনা বেগম (৩২) বাদি হয়ে আরেকটি মামলা করেছেন। (বাঘা থানার মামলা নম্বর- ৩,তারিখ-০৩-১২-২০২১)। এ মামলায় আসামি করা হয়, গ্রামের মকবুল হোসেনের দুই ছেলে সোহেল রানা (২৩) (ধর্ষন মামলার আসামি), অপর ছেলে রুবেল হোসেন(৩২) ও স্ত্রী নজেরা বেগম(৪৮)কে। মামলায় স্বাক্ষী করা হয়েছে, বাদির শ্বশুর আশরাফ আলী ও গ্রামের মুনজুরা বেগমকে। মদিনা বেগম জানান, ওই বছরের ২১ নভেম্বর (২১-১১-২০২১ইং) বিকেল ৫টায় তার স্বামী রুজদার আলী মনিগ্রাম বাজার থেকে খেড়ুর মোড়ে যাচ্ছিলেন। পথি মধ্যে তাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারধর করে আসামিরা।
মামলাটি দায়েরের দিনই (০৩-১২-২০২২)পুলিশ নজেরা বেগম ও রুবেল হোসেনকে গ্রেফতার করে, পরের দিন ৪ডিসেম্বর(৪-১২-২০২১ইং) বিকেলে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন। ৬ ডিসেম্বর’২১ইং জামিনে মুক্তি পান রুবেলে হোসেন। ১২ ডিসেম্বর’২১ ইং জামিন মুক্তি পান নজেরা বেগম।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাদি-আসামিরা একই গ্রামের বাসিন্দা। তারা পাশাপাশি বসবাস করে। দু’টি মামলাই সাজানো দাবি করে নুজেরা বেগম জানান, ভিকটিমের বাবা-মায়ের দায়ের করা মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে। মামলার পর ভিকটিম ও তার পরিবারের বিষয়ে তথ্য দিয়ে তিনি জানান, তাদের ফাঁদে পড়ে জরিমানা দেওয়ার তালিকায় আছেন চারঘাট উপজেলার ডাকরা গ্রামের ভ্যান চালক আনারুল ইসলাম। বছর দেড়েক আগে ঘরোয়া শালিস বৈঠকে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই শালিসে ছিলেন এলাকার মতিন মেম্বর। তার আরেক মেয়ের বিয়ের আগে শালিস বৈঠকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। পরে বিয়ে দেওয়া হয়। সেই শালিসে ছিল সাবেক মেম্বর নজরুল ইসলাম। মদিনা বেগম ও শালিসে উপস্থিত নজরুল ইসলাম সালিশের কথা স্বীকার করেছেন।
নুজেরা বেগম জানান, মামলায় জড়িয়ে তদন্ত অফিসার স্বপন হোসেনকে ৩ দফায় ১৮ হাজার টাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে থানায় আটক তার ছেলের মোটরসাইকেল নেওয়া বাবদ দিয়েছেন ৭ হাজার টাকা। জামাই ফারুক হোসেন ও গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মাধ্যমে এই টাকা দেন। পরের মামলায় তাদের আটকের পর, মনিগ্রাম বাজার থেকে তার ছেলের মোটরসাইকেলটি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ডিএনএ পরীক্ষা বিষয়ে, ঢাকায় যাওয়া আসার গাড়িভাড়া বাদেও ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচের কথা জানান তদন্ত অফিসার স্বপন হোসেন। এই টাকা খরচ করলে ডিএনএ পরীক্ষা সহ মামলার তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে।
মামলার অবস্থা সম্পর্কে তদন্ত অফিসার স্বপন হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের পাঠানো কাগজপত্র পেয়েছেন। টাকা লেন দেনের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। তবে গাড়ি ভাড়ার কথা বলেছেন বলে জানান তিনি। অফিসার ইনচার্জ সাজ্জাদ হোসেন বলেন,ভিকটিম ও তার সন্তানসহ আসামীকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। আজকের তানোর