সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:০৯ am
ডেস্ক রির্পোট : রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় রোববার ভোরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন ডা. আহমেদ মাহি বুলবুল। পেশায় তিনি দন্ত চিকিৎসক ছিলেন। ৩৪ বছর বয়সী চিকিৎসক বুলবুল গরিবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তার নিজ হাতে গড়ে তোলা সংগঠন ‘ভূমি’। এই সংগঠনের উদ্যোগে তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতেন।
খুন হওয়ার পর বর্তমানে তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে রয়েছে। সেখানে ময়নাতদন্তসহ সব প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষ হলে বুলবুলের লাশ রংপুরে গ্রামের বাড়িতে আনা হবে বলে জানান পরিবারের লোকজন।
এদিকে ডা. বুলবুলের মৃত্যুর খবরে তার বর্তমান নিজ বাড়ি রংপুর মহানগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভগিবালাপাড়ায় চলছে শোকের মাতম। পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে এখন বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। তারা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কখন লাশ আসবে। স্বজনসহ প্রতিবেশীরা এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানান।
সন্তানের শোকে বুলবুলের মা বারবার মনে করছেন ছেলের সঙ্গে শেষ কথার। বুলবুলের বিধবা মা বুলবুলি বেগম বলেন, গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি। ওর বাচ্চাদের জন্য দুধ কিনতে বিকাশে দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছে। ২০ রমজানে বাসায় আসার কথা ছিল। কিন্তু কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না..’।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এ ঘটনার সঙ্গে কেউ জড়িত আছে। প্রশাসন একটু খতিয়ে দেখলে আসল ঘটনা বের হবে। মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখুক। আমার ছেলের তো কোনো শত্রু নেই। তারপরও এই ঘটনা কেন ঘটলো? ছেলের খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। আমি বিচার চাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর নগরীর ভগিবালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ডা. বুলবুলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। চাকরি করাকালীন ১৯৯৯ সালে মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল।
১৯৯৭ সালে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকার মগবাজারে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি মগবাজারে রংপুর ডেন্টাল নামে একটি চেম্বার খুলে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। সেখানে তিনি দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। শুধু স্বাবলম্বীদের কাছ থেকে ফি নিতেন। এছাড়াও ‘ভূমি’ নামের তার একটি সংগঠন রয়েছে।
দিনাজপুরে বিয়ে করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঢাকার শেওড়াপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। আট বছরের মেয়ে আহমেদ আফনা নাউন ও সামি নামে দেড় বছর বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে বুলবুলের। কী কারণে বা কেন এ হত্যাকাণ্ডের শিকার বুলবুল তা বুঝে উঠতে পারছেন না স্বজনরা।
বুলবুলের ছোটভাই আহমেদ রাহি বকুল বলেন, রোববার সকাল বেলা ফোনে খবর পাই ভাইকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। ভাইয়ের সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ ছিল না। কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে তা বুঝে উঠতে পারছি না। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
ছোট বোন লাভলী সামাদ বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বড়ভাই বুলবুল। চিকিৎসাপেশার পাশাপাশি ঠিকাদারি করতেন। ঠিকাদারি কাজে রোববার নোয়াখালী যাওয়ার কথা ছিল। এখন দুই শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা কীভাবে দিন পার করবেন। স্বজনসহ প্রতিবেশীরা এই হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানান।
রংপুর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাফফার হোসেন বলেন, সকালে তার মৃত্যুর খবরটি জানতে পেরেছি। তবে এখনো মরদেহ রংপুরে পৌঁছায়নি। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তা উদঘাটন করা জরুরি। সূত্র : যুগান্তর