সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৩০ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সংঘর্ষ এবং তার পর ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা ফেসবুকে তুলে ধরলেন পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদ্য সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন। তিনি বুধবার দিবাগত গভীর রাতে তার ফেসবুকে এসব ঘটনা তুলে ধরে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস শেয়ার দেন।
এর পর বৃহস্পতিবার সকল ৯টার দিকে তিনি গ্রেপ্তার হন। তার গ্রেপ্তার হওয়ার কথাও এই স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেছেন। মেরাজের সেই পোষ্টটি পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো-
মেরাজ তার সেই পোষ্টে লিখেছেন, ‘প্রিয় দেশবাসী সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আমাকে পুলিশ আটক করে ফেলবে কারণ তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। আপনাদের কাছে কড়োজরে অনুরোধ স্ট্যাটাসটি পড়বেন।’
তিনি লিখেছেন, ‘দীর্ঘ ৭ বছর পর গত ২১ মার্চ বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ছিলো। ঠিক ৭ বছর আগেই মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব শাহরিয়ার আলম নিজ ইচ্ছেমত কাউন্সিলর তৈরী করে কমিটি করেছিলেন। গত ২১ মার্চ নিজ ইচ্ছেমত কাউন্সিলর তালিকা তৈরী করে সম্মেলনের আগের দিন প্রকাশ করলে আমি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, বিএনপি পরিবারের, এমনকি একই পরিবারের ৫ জনকে কাউন্সিলর করেছে মর্মে ফেসবুকে প্রতিবাদ জানাই।
যা স্ক্রীনশটে যোগ করেছি। এই একটি রাগ আর দুই নম্বর রাগ হলো আপনারা ১ম যে ভিডিওটি দেখতে পাবেন সেটি হলো বাঘা শাহদৌলা ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভিপি, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি, বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক, এরশাদ-খালেদা আমলে বারবার কারা নির্যাতিত ত্যাগী নেতা, পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ২ বারের চেয়ারম্যান, বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য, জননেতা জনাব আক্কাছ আলীর নেতৃত্বে মিছিলে অংশগ্রহণ করা।
মেরাজ তার স্ট্যাটাসে আরও লিখেছেন, ২১ মার্চ সম্মেলন স্থলে মিছিলের অগ্রসর ভাগে জননেতা আক্কাছ আলী ও কিছু পুরুষ এবং মহিলা নেতা কর্মী ঢোঁকার পরেই মিছিলের ৯০% নেতা কর্মীদের ঢুঁকতে বাঁধা প্রদান করে। সম্মেলন মঞ্চের সামনে জননেতা আক্কাছ আলী গেলে তাকে বাঁধা প্রদান করা হয় এবং তাকে কটূক্তি মূলক ভাষা ব্যবহার করলে আক্কাছ আলীর কর্মী সমর্থকদের সাথে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর কর্মী সমর্থকদের সংঘর্ষ বেঁধে যায় যা আপনারা কয়েকদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছেন।
আমরা সম্মেলন স্থল ত্যাগ করলে রাস্তার মধ্যে পরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে আক্রমণ করে। এমনকি জননেতা আক্কাছ আলীর বাড়িতে এসেও সাধারন মানুষদের ওপর হামলা করে বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে।
আমি আমার দায়বদ্ধতা বলেন আর আমার রাজনৈতিক গুরু বা বাঘা আওয়ামী লীগের বটবৃক্ষের সমর্থনে নিজেকে সামিল করি। কেননা আমার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে জননেতা আক্কাছ আলী যে পরিশ্রম করেছিলো এই সময়ে এসে তার পাশে না থাকলে সেটা অকৃতজ্ঞের পর্যায়ে যাবে, তবে হ্যাঁ দীর্ঘ ১০ টি বছর অকৃতজ্ঞই ছিলাম। আর এইসব কারণে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কথামত না চলায় সম্মেলন মঞ্চেই আমাকে হুমকি প্রদান করেন।
নিচের ছবিতে ২৩/০৩/২০২২ ইং অর্থাৎ গতকাল বিকেলে আমার বাড়ী ভাংচুর করেন এবং আগুন ধরানোর চেষ্টা করলে এলাকাবাসী এসে তা নিভান। বাড়ীর পাশেই পদ্মা নদীর ধারে একটি ছাউনি ঘরসহ নদীর ধারে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য বসার যায়গাগুলো পুড়িয়ে দেন।
জননেতা আক্কাছ আলী ১ নম্বর আসামী আমি ২ নম্বর আসামী ২ টি মামলাতে ৮০/৮৫ জনের মত আসামী করে অজ্ঞাত আরও ৫০০ জনকে সাজানো মামলায় অভিযুক্ত করেন। ২১ মার্চ রাত থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের পরিবারের সদস্যদেরও ভয়ভীতি, হুমকি অব্যাহত রয়েছে।
যাদেরকে আসামী করা হয়েছে এবং যারা জননেতা আক্কাছ আলীর মিছিলে এসেছিলেন তারাই ২০০৮ এর সংসদ নির্বাচনে জনাব শাহরিয়ার আলমকে বিজয়ী করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছিলেন। আজ তারাই মামলা হামলার শিকার।
এখন আসি মদ্দা কথায়, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব শাহরিয়ার আলম ২০ মার্চ দুপুরে আমাকে ফোন দিয়ে কয়েকটি কথা বলেছিলেন তারমধ্যে বলেছিলেন তোমার বাবার কবরের পাশে গিয়ে হিসেব করো কি পেয়েছো?
আমি আপনাকে বিনয়ের সাথে বলি, আমার আব্বা ২০১৪ সালের নির্বাচনে আপনার জন্য কতটা করেছিলো, তখন ২০১৪ এর নির্বাচনের প্রথম দিকে আপনার সাথে কে কে ছিলো পাকুড়িয়াতে, আপনি সেই হিসেবটা করলে আমার পর্যন্ত আর আসার প্রয়োজন হবে না।
আপনি সম্মেলনের মঞ্চে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন অনেক দিয়েছি আর না, যা দিয়েছি তার দশগুণ কেড়ে নিবো, তা অবশ্য একদিনেই দেখিয়েছেন, আমার কর্মী সমর্থকসহ, ব্যবসার যায়গায় হামলা করে।
আমার বাবার বালুর ব্যবসা ছিলো অনেক আগে থেকেই আব্বা মারা যাবার পর আপনার কথায় এলাকায় এসে বালুমহল ইজারার সময় আপনার কথামত রাজশাহীর কেউ যেনো বালুমহল না পায় এই জেদাজেদিতে অধিক মূল্যে ডাক করেও যখন টিকে থাকলাম ঠিক পরেরবার রাজশাহী থেকে বালুমহল ইজারা নিয়ে আপনার বন্ধু আমাকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দিলো। আপনার কেঁড়ে নেওয়ার যা বাকী ছিলো তা আপনি আগেই আপনার বন্ধুকে দিয়ে নিয়েছেন।
আর হ্যাঁ আপনি তো শুধু আপনার হিসেব চাইলেন আব্বার হিসেবটা আগে দিয়েছি। আমার হিসেবটা নিবেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে শলুয়া ইউনিয়নের কথা মনে আছে কি? জীবন বাজী রেখে ককটেল, গুলির শব্দগুলি এখনো বাজে, সেদিন কয়জন ছিলো আপনার সাথে, রাজশাহীতে ২০১২ সাল থেকে রাত, ভোর আপনার জন্য স্টেশন থেকে শুরু করে রাজশাহীর সব প্রোগ্রামে রিস্ক নিয়ে আপনার নামে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করতাম, কয়জন ছিলো আপনার সাথে?
আর হ্যাঁ ঢাকার নেতাদের সাথে যোগাযোগ ভালো বলেছেন, তাদের কাছেও আপনার গুনগান যতটা করেছি অন্য ১০ জন মিলেও বিগত ১০ বছরে কেউ বলেনি। আরো বলেছেন মেধাবী, নতুন কিছু আবিস্কার করতে পারে, শিশু জন্মগ্রহণ করলে গাছ, ফুল, নিয়ে যায় সেখানে আমি নতুন ড্রেস, জন্মনিবন্ধন কার্ড ফ্রি দেয় তাও আবার যাদেরকে দেই তাদের বাড়িতে গিয়ে আপনার কথা বলি।
এগুলো আমার স্বল্প কথা তুলে ধরলাম, আরো অনেক কথা আছে। সেগুলো আর নাই বললাম। আর যদি জননেতা আক্কাছ আলীর কথা বলতে যাই তাহলে তো আপনার কৃতজ্ঞতায় প্রশ্ন উঠবে কারণ জননেতা আক্কাছ আলীর হাত ধরেই বাঘায় পদার্পণ করেছিলেন, এমপি হয়েছেন, পরবর্তীতে প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। ভুলে গেছেন সব?
আপনার কথা না শুনলে কি হয় তা তো আড়ানী পৌরতে নৌকা ফেল, বিগত দিনে, চারঘাট পৌর, বাঘা পৌরতে নৌকা ফেল, ক্লিয়ার বুঁঝে গেছি। আর আমাকে হয়তো ফেল না জীবনও হারিয়ে যেতে পারে।
আর সবচেয়ে আপনার রাজনীতি চরম ভালো লেগেছে সম্মেলনের দিনে যে আপনি রাজশাহীর একবুক ভালোবাসার মানুষ, আমাদের অভিভাবক, পরম শ্রদ্ধেয় জননেতা খায়রুজ্জামান লিটন ভাইয়ের পা ছুঁয়ে সালাম করেছেন। আর বিগত দিনের কথা বিস্তারিত বললাম না।
এই স্ট্যাটাসের পরে আমার পরিবার এবং কর্মীসমর্থকদের ওপর কঠিনভাবে অত্যাচার হবে কিন্তু এগুলো লিখতে চেয়েছিলাম না আবার এতো অত্যাচার, তার আমাকে নিয়ে কৌতূহলী বক্তব্যের উত্তরগুলো না দিয়েও পারলাম না।
মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব শাহরিয়ার আলমের ক্যাডার বাহিনী, মামলা, হামলা, অন্যায়, অযাচিত অত্যাচার থেকে, বাঘা উপজেলার বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের বাঁচতে আমার শ্রদ্ধেয় সাবেক ছাত্রনেতা বড়ভাই, প্রশাসন, সাংবাদিক, শুভাকাঙ্ক্ষীরা যারা আছেন তারা বঙ্গবন্ধু কন্যা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের শেষ ঠিকানা, জননেত্রী শেখ হাসিনা আপার কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিবেন। যাতে আমরা বাঁচতে পারি।
নিবেদনে, মোঃ মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ। চেয়ারম্যান, ৩ নং পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ, বাঘা, রাজশাহী।