মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৪৮ am
ডেস্ক রির্পোট : সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও কম মূল্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে রাজশাহীর বেশিরভাগ জায়গাতেই চার ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও আসেনি টিসিবির ট্রাক। এতে সুবিধাভোগীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
রোববার (২০ মার্চ) সকাল ১০টায় নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মহিষবাথান কলোনি মাঠে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল।
প্রথম পর্যায়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত একযোগে রাজশাহী মহানগরীর সাতটি পয়েন্টসহ মোট ২৭টি পয়েন্টে টিসিবির পণ্য বিক্রির কথা রয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় ৫৫ হাজার পরিবার এবং উপজেলা ও পৌরসভার এলাকায় এক লাখ ৪৪ হাজার ১৪০ জন টিসিবির পণ্য পাবেন।
কিন্তু নগর ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। নগরীর মহিষবাথান, লক্ষ্মীপুরসহ দু-এক জায়গায় সকাল ১০টা থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু হলেও বেশিরভাগ জায়গায় দুপুর আড়াইটায়ও পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ডের মোট ভোটার তালিকার ভিত্তিতে কার্ড করা হয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে এক হাজার ৮৩৩টি করে কার্ড পাবে মানুষ। ২০ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে চিনি, ডাল ও তেল বিক্রি করা হবে। ৩ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ে এসব পণ্যের সঙ্গে ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর বিক্রি করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে একটি পরিবার প্রথম পর্যায়ে ২ কেজি চিনি, ২ কেজি ডাল ও ২ লিটার তেল কিনতে পারবে। প্রতি লিটার তেলের মূল্য হবে ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা ও প্রতি কেজি মসুরের ডালের দাম ধরা হয়েছে ৬৫ টাকা। অর্থাৎ একজন ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ৪৬০ টাকায় ২ লিটার তেল, ২ কেজি চিনি ও ২ কেজি মসুরের ডাল নিতে পারবেন।
নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দাশপুকুর এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ‘সেই সকাল ৯টা থেকে টিসিবির কার্ড নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখন বাজে দুপুর আড়াইটা। তারপরও টিসিবির ট্রাক আসার নাম নেই।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘একটু কম দামে পণ্য দেবে। তাই বলে কি সরকার এভাবে আমাদের মতো গরিবদের রোদে দাঁড় করিয়ে পুড়াবে? আমাদের সময়ের কি কোনো দাম নেই?’
তালাইমারি জাহাজঘাট এলাকার বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন আরিফ বলেন, ‘আগের দিন ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা হলো টিসিবির পণ্য আগামীকাল (আজ রোববার) সকাল থেকে দেওয়া হবে। কিন্তু সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেও ট্রাক এলো না। তাই বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’
নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাওয়ার হাউজ মোড়ের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে টিসিবির কার্ড পাওয়া মানুষেরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ট্রাক আসার খবর নেই। আর কোথাও দিচ্ছে কি না তা দেখার জন্য শিরোইল, শান্তিবাগ, টিকাপাড়া ও শালবাগান এলাকা ঘুরে দেখি প্রায় সব জায়গাতেই একই অবস্থা। শুধু লক্ষ্মীপুর ও মহিষবাথান এলাকায় সকাল ১০টায় টিসিবির গাড়ি গেছে। আর কোথাও যায়নি।’
৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে মোট ৮৪৪ জন টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড পেয়েছেন। তারা মোটামুটি সকাল সাড়ে ৯টার দিক থেকে লাইন ধরেছেন। কিন্তু ট্রাক আসেনি। টিসিবির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে টিসিবির ট্রাক গোডাউন থেকে ছাড়বে। তবে প্রথমদিন পণ্য দিতে একটু দেরিও হতে পারে।’
তিন নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছেন মেসার্স উপমা এন্টারপ্রাইজের মালিক মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর ৯টি উপজেলার ট্রাক সবার আগে গোডাউন থেকে মাল নেবে। তারপর রাজশাহী সিটির টিসিবির ডিলাররা মাল পাবেন। সকাল থেকে পণ্যের জন্য ট্রাক নিয়ে বসে আছি। এখনো ডাক পাইনি।’
এ বিষয়ে টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিস প্রধান মো. সাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জেলা প্রশাসক ভালো বলতে পারবেন। কারণ, টিসিবি থেকে রাজশাহী অঞ্চলে যে মাল আসছে তা আমরা রাজশাহী জেলা প্রশাসনের গুদাম কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি। এখন তারাই সে মালামাল সরবরাহের দায়িত্বে আছেন। সুতরাং, তারাই বিষয়টি ভালো বলতে পারেন।’
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজ আমরা লেবার তেমনভাবে পাইনি। মাত্র ২০ জন লেবার পেয়েছিলাম। আগামী দিন ৬০ জন লেবার দিয়ে মালামাল সরবরাহ করা হবে। তখন ইনশাল্লাহ আর দেরি হবে না।’ সূত্র : জাগোনিউজ