বৃহস্পতিবর, ২১ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৩১ pm
ইমরান হোসাইন :
আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারী রাজশাহীর তানোর পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ইমরুল হক বিদ্রোহী বেড়াকলে পড়েছেন। এতে দলের নিবেদিতরা কোনঠাসা হয়ে হায়হুতাশ করছেন। ফলে সম্প্রতি নৌকা বিভক্তির আভাস শুরু হয়েছে। আজ (৮ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে হয়ে গেল নৌকার সমাবেশ। ওই সমাবেশে দেখা গেছে বিপুল পরিমান নৌকা বিদ্রোহী মুখ।
তথ্যানুন্ধানে জানা গেছে, গেলো ৩০ জানুয়ারী তৃতীয় ধাপে মুন্ডুমালা পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মেয়রপদে আ’লীগের বহিস্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুর রহমান মাত্র ৬১ ভোটে নির্বাচিত হন। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন ছাড়াও হাতুড়লীগ নেতা রাব্বানীর ভাই শরিফুল ইসলামসহ তাদের কর্মী সমর্থকরা নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে আর রঙ্গে ভঙ্গে ফেটে পড়েন। নেতাকর্মীরা বলছেন, ওপারে (মুন্ডুমালা) জগের জলে যারা নৌকা ডুবিয়েছেন তারাই দল বেধেঁ এপারে (তানোর) নৌকা ভাসানো নাটকের মূল হোতা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৯ সালের ১০ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কামারগাঁ ইউপির কচুয়া ভোটকেন্দ্রে দুর্বল হাতুড়ি প্রতীকের কাছে নৌকা বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। অথচ ওই কচুয়া কেন্দ্রেই আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন ভোটার।
স্থানীয়রা বলছেন, যেখানে আওয়ামী লীগের দূর্গ। দেশ স্বাধীনের পর যেকোনো নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। কিন্তু আ’লীগের সাধারণ সম্পাদকের ঈশারায় ও ইন্ধনে তার কেন্দ্রেই নৌকাকে ডুবিয়েছেন মামুন। ফলে ইতিহাসে ওই কেন্দ্রে এটাই প্রথম পরাজয় ঘটেছে আ’লীগের। তারপরও আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এরআগে ২০০৯ সালের দিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগের দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করেন সভাপতি গোলাম রাব্বানী। এতে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে দাড়িয়ে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। ফলে সভাপতি ও সম্পাদক উভয়ের পরাজয় ঘটে। জয় হয় বিএনপির।
অপরদিকে, গেলো ৩০ জানুয়ারী মুন্ডুমালা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চুনিয়াপাড়া কেন্দ্রে ভোট দেন তানোর উপজেলা আ’লীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানী। ওই কেন্দ্রই বিপুল ভোটে পরাজয় ঘটেছে নৌকার।
বিশ্লেষনে দেখা গেছে, বিগত ১০ বছরের ইতিহাসে রাব্বানী-মামুনের বেড়াকলে তানোর আ’লীগ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সর্বশান্ত হচ্ছে। সেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে মুন্ডুমালা পৌর পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ঈশারায়, ইন্ধনে ও খেদমতে কেবল তাদের ভোট কেন্দ্রেই আ’লীগের ভরাডুবি ঘটেছে।
এছাড়া উপজেলার কলমা ইউনিয়নে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন রেজাউল করিম। তিনিও ছিলেন অদ্য বিদ্রোহী মঞ্চে। সম্প্রতি পৌর নির্বাচনে ওই বিদ্রোহীদেরকেই দেখা গেছে একত্রে।
মূলত জেলা আ’লীগের বর্তমান সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা তিনিই হচ্ছেন বিদ্রোহীদের ইন্ধনদাতা ও মূল হোতা। ২০০৮ সালে রাজশাহী-৩ (পবা মোহনপুর) আসনে এমপি নির্বাচিত তিনি মেরাজ মোল্লা। এ সুবাদে তার পুত্র মাদকের গডফাদার হয়ে উঠেন। পরে ট্রাকসহ তার পুত্র পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ফলে দলীয় মনোনয়ন তার হারিয়ে যায়। এরপরও নৌকার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে পরাজিত হন মেরাজ মোল্লা।
সম্প্রতি গত জাতীয় নির্বাচনে এমপি প্রার্থী ঘোষনা দেন রাব্বানী। কিন্তু তিনি জনবিছিন্ন নেতা হবার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বা আ’লীগের মনোনয়ন ও সমর্থন পাননি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার অনুসারী নেতাকর্মীকে উসঁকে দিয়ে কৌশলে দলের ভিতরে ও বাইরে বিভক্তির সৃষ্টি করে চলেছেন। বর্তমানে তানোর পৌর নির্বাচনেও আ’লীগের মেয়র প্রার্থী ইমরুল হকের ভোট প্রার্থনায় তারা উদাসিন। লোক দেখানো প্রচারে নেমে বর্তমান সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তারা।
এব্যাপারে মুন্ডুমালা পৌরসভার নাগরিক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরিফ খাঁন বলেন, তানোরে বিদ্রোহীর বেড়াকলে নৌকার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে তাদের জানানো হয়নি। বর্তমানে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ইমরুল হক বিদ্রোহী বেড়াকলে পড়েছেন। এতে দলের নিবেদিতরা কোনঠাসা হয়ে হায়হুতাশ করছেন। ফলে সম্প্রতি নৌকা বিভক্তির আভাস শুরু হয়েছে। ওই সমাবেশে দেখা গেছে বিপুল পরিমান নৌকা বিদ্রোহী মুখ।
তিনি আরও বলেন, মুন্ডুমালা পৌর নির্বাচনে তানোর আ’লীগ সভাপতির ঈশারায়, ইন্ধনে ও খেদমতে তীরে এসে তার কেন্দ্রেই নৌকাকে ডুবিয়েছেন রাব্বানী। আর এপারে (তানোর) নৌকাকে ভাসাতে রাব্বানী-মামুন নাটকের সৃষ্টি করে চলেছেন। এতে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে মিশ্রপ্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দলের ভিতরে আন্ত:দ্বন্দ্ব ভুলে সবাইকে আগামীতে সাংসদ ফারুক চৌধুরীর হাতকে শক্তিশালী করার আহবান জানান।
মুন্ডুুমালায় নৌকা ডুবিয়ে তানোরে উদাসিন ব্যাপারে জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়ে উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দলে অন্ত:দ্বন্দ্ব থাকবেই। ভোট পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। পৌর মেয়র নেবার পর আগামীতে সভাপতি গোলাম রাব্বানীকে এমপি নির্বাচিত করেই আরও একটি চমক দেখাবেন বলে জানান মামুন।