শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৪৫ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য কোথাও বসাতে না পেরে বিক্রি করলেন ভাঙারির দোকানে রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই : আনন্দবাজারকে জামায়াতের আমির আগামী তিন মৌসুমের জন্য আইপিএলে যে ১৩ ক্রিকেটারের নাম দিল বিসিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ থামিয়ে রাখেননি অভিনেত্রী হিনা খান নগরীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১ জন গ্রেপ্তার তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাঁচার রোধে হট্টগোল মারপিট দুর্গাপুরে হোজা নদী পুন:খনন ও দখলমুক্ত দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলিপি রাজশাহীতে সমন্বয়ক পেটানোর ব্যাখ্যা দিল মহানগর ছাত্রদল আঘাতের দাগে সম্পর্কের রূপান্তর ! রাজু আহমেদ তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না নগরীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত আগামী ২৯ নভেম্বর খুলছে রাজশাহী সুগার মিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে স্মরণসভা রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১১ বাগমারা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেবের ইন্তেকাল তানোরে মসজিদের এসি অফিসার্স ক্লাবে, ইমামের অর্থ আত্নসাৎ প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তানোরে বিএনপির কর্মীসভা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮ জন গ্রেপ্তার লীজকৃত পুকুর দখল, মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ
নিত্যপণ্যের হাটে কষ্টের কেনাবেচা : সরকার দুলাল মাহবুব

নিত্যপণ্যের হাটে কষ্টের কেনাবেচা : সরকার দুলাল মাহবুব

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সম্প্রতি আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ নিত্যপণ্যের বাজার এখন লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার পায়ে তচনছ হচ্ছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। এসব শ্রেণির মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে বেশি হওয়ায় অসহায়ত্বের আহাজারি বিবেককে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে।

আকস্মিক এই মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। ফলে দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ।

বিশেষজ্ঞের মতে, আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ একাধিক। মুনাফালোভী মজুতদাররা প্রায়ই অধিক মুনাফা অর্জনের মানসিকতায় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। তার সাথে যোগ হয় বহির্বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের সংকট ও মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। চাহিদার তুলনায় যোগানের অভাবেও দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি ঘটে।

কিন্তু দোকানে গেলেই নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব দ্রব্যই পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় কোন দ্রব্যেরই ঘাটতি নেই। কিন্তু ভোক্তাকে দাম গুণতে হচ্ছে অনেক বেশী। তাই চোখ বুঝেই বলা যায়, মুনাফাভোগি মজুতদারেরাই পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে কারসাজি চালিয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে এ অনাকাঙ্খিত মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত আবশ্যক।

বর্তমানে বাজারে ন্যায়সংগত ও নির্ধারিত মূল্য বলতে এখন কিছুই নেই। দফায় দফায় দাম বাড়লেও রোজগার আগের মতই আছে। ফলে সীমিত আয়ে সংসার সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেই সাথে দফায় দফায় গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবন হয়ে পড়েছে অসহায়।

মূল্যবৃদ্ধি এদেশে এটাই প্রথম, তা নয়। এটি একটি অনিবার্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার টিসিবি’র মাধ্যমে যে যোগান দিচ্ছে তা চাহিদার মহাসমুদ্রে কুপখননমাত্র। এছাড়াও ক’দিন পরই আসবে রমজান। প্রতিবছরই এমনিতেই রমজান উপলক্ষে দাম বৃদ্ধির ফাঁদে থাকে ভোক্তারা। এবার অনেক আগে থেকেই চলছে ভোগ্যপণ্যের দামবৃদ্ধি।

নব্বই দশকের আগে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের একটি কার্যকরি সেল ছিল। দেশে বাজারদর সরেজমিন পর্যবেক্ষণ ও মূল্যবৃদ্ধিতে কার্যকরি পদক্ষেপ নিত। বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতির ধোঁয়া তুলে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী মজুত করে টাকা বানানোর প্রতিযোগিতায় মেতেছে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে মজুতদারদের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশংকা করছেন সচেতনমহল।

আবার পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে বিক্ষোভের দানা বাঁধে। সরকার এর ব্যাখ্যা বা জবাবদিহি করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতিতে কর্তা ব্যক্তিদের মুখে শুধু হিংসার উদগীরণ ঘটে। সমাধান না এনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজেন তারা। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেয়ে ঘোলাটে হয় আরো বেশী। তবে আমাদের দেশের মানুষ এখনো চুপচাপ। কিন্তু এই চুপ থাকাটা কিসের লক্ষণ তা সময়ই বলে দিবে।

বিশ্লেষকদের মতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার বাজার মনিটরিং, কৃষিপণ্যে ভর্তুকি দেওয়াসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ যথেষ্ট না হওয়ায় দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টানা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়লেও দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে বার বার। এর পরেও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধও মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এসব ঘটনায় কেউ কেউ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এমন অমানবিক সমস্যায় পীড়িত করে তারা নিজেদের সুখ – সম্পদ গড়ে তুলছে। আহরণের চেষ্টায় মত্ত, তারা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু, জাতির শত্রু। এসব অসৎ ও দুর্নীতিবাজ লোকদের উৎখাত এখন সময়ের দাবি।

এ বিষয়ে সরকারি, বেসরকারি অভিজ্ঞ মহলের দৃষ্টিপাত অপরিহার্য বলে মনে করি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য কারা দায়ী, তা খতিয়ে দেখা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসা খুবই জরুরী। এমন পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে না-তা কিন্তু নয়। তবে পদক্ষেপ পরিস্থিতির তুলনায় নগণ্য। তা ছাড়া সর্বস্তরের মানুষের মাঝেও সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনমনে যে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠছে, তা বিস্ফোরণে রূপ নিলেও বলার কিছু থাকবে না।

সম্প্রতি ‘ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট নিরসনে করণীয়’ বিষয়ক একটি সভায় গিয়ে শিরনামটি দেখে মনে হলো ভোজ্যতেলের কোন সংকট আমাদের নাই। বক্তব্যেও নিশ্চিত হওয়া গেলো আসলে বাজারে ভোজ্যতেলের কোন ঘাটতি নেই। তিন মাসের ভোজ্যতেলও নাকি মজুত রয়েছে।

গত মৌসুমে আলু রোপনের আগে ‘বেশী দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক’ এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল দৈনিক সানশাইন পত্রিকায়। আর এ নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। পদক্ষেপ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কৃষিবিভাগ।

ঢাকা থেকেও কর্মকর্তারা বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ে মাঠে নামেন। প্রতিবেদনটিতে যে কৃষকের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছিল তাকে মানসিক হয়রানিতে পড়তে হয়েছিল। তাকে বলা হয়েছিল, সারের কোন সংকট নাই। আমাদের গোডাউনে অনেক সার মজুত আছে। এমন নানা প্রশ্নের ফাঁকে ওই কৃষক বলেন, আপনার গোডাউনে সার মজুত থেকে কৃষকের লাভ কি? নিশ্চয় আপনাদের গোডাউনে ফসল উৎপাদন হয় না।

ওই কৃষককে এও বলা হয়েছিল বেশী দামে সার নিয়েছেন এমন একটি রশিদ আনেন? কৃষক বলেছিলেন, কৃষকের প্রয়োজন হয় সারের, রশিদের নয়। তাছাড়া কোন সার ডিলার বেশী দামের রশিদ দেন না। তারা আগেই বলে নেন, রশিদ সরকারি দামে নিতে হবে। তখন কৃষককে একরকম জিম্মি করেই ডিলাররা বেশী দামে সার বিক্রি করেন। অবশ্য এর পরই রাজশাহী জেলায় অতিরিক্ত পাঁচ হাজার মে.টন সার বরাদ্দ হয়, দামও কমে যায়।

ভোজ্যতেলে বেলাতেও রশিদের বিষয়টি এসেছে। প্রয়োজনের সময়ে ডিলারদের মতোই রশিদ দিবে। আবার বোতলের মূল্য মুছেও বিক্রি হবে। ভোক্তাকে ঢের বেশী টাকা গুণতে হবে। আর আমজনতা মজুত দেখতে চান না। রশিদও চান না। তারা চান ভোক্তা পর্যায়ে সঠিক দামে কিনতে।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বে স্বীকৃত। আমাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নও হয়েছে। ফলে আয়ও বেড়েছে সবার। বাংলাদেশে দারিদ্রের হার কমছে এটা যেমন সত্য, তেমনি দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিও সত্য। নিম্নআয়ের মানুষ যা আয় করছে, তার পুরোটাই জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির জন্য ব্যয় করার মতো অর্থ তাদের হাতে থাকছে না। আয় যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। কারণ অনেক থাকতে পারে, তবে প্রধান কারণ বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণ যে নেই তাতো স্পষ্টভাবে এরআগে বোঝা গেছে পেঁয়াজ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড দেখে। অর্থনীতির ভাষায় বাজারে চাহিদা ও জোগানের ওপর দ্রব্যমূল্য নির্ভর করে; কিন্তু এ সংজ্ঞা এখানে কাজে আসেনি।

একবছর আগের এক তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে ২৪ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয় ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন। বাকি চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। তখন বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে ২৫-৩০ টাকার পেঁয়াজ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় গিয়ে ঠেকল। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি।

সরকারি উদ্যোগ, পত্রিকায় লেখালেখি, আলোচনা, সমালোচনা বহু কিছু হলেও ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম কমায়নি। বরং অনেক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজ গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছিল। এমনকি বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠলেও কাঙ্খিত দাম কমেনি। পেঁয়াজের মতো পচনশীল দ্রব্য গুদামজাত করায় টনকে টন পেঁয়াজ পচিয়ে নদীতে ফেলে দেয়ার মতো দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। মানুষ কতটা অমানবিক, অর্থলোভী, পিশাচ হলে এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে পারে তা ভেবে দেখবার বিষয়।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সব থেকে বেশি কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন নিম্নবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত সৎ সরকারি কর্মচারী, প্রবীণ জনগোষ্ঠী ও নিম্নআয়ের মানুষ। সবচেয়ে বেশি কষ্টকর পরিস্থিতিতে রয়েছেন অধিকাংশ প্রবীণ। তারা না ঘরের মরা, না ঘাটের মরা। যেসব চাকরিজীবী সৎভাবে চাকরিজীবন কাটিয়েছেন, তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। কারণ চাকরি জীবনের তাদের একমাত্র সঞ্চয় পেনশন বা গ্র্যাচুইটির টাকা। জীবনের শেষ সম্বল এ সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে তারা সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। এ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকা দিয়ে তাদের সংসার-জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে নির্বাহ করতে হয়।

কিন্তু প্রবীণদের এ দিকটি চিন্তাভাবনা না করেই হঠাৎ করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমিয়ে দিয়ে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। দেশে এখন প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ প্রায়। প্রবীণ জনগোষ্ঠীসহ নিম্নবিত্ত ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অধিকাংশই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দ্রব্যমূল্যের বাজার ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ভোক্তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও তা তেমন কার্যকর ভূমিকা না রাখায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নামে একটি সংস্থা রয়েছে; কিন্তু তাদের কার্যক্রমও তেমন লক্ষণীয় নয়। ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হলেও বাস্তবে তারা ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ কতটুকু করছেন তা বিচার্য বিষয়।

তবে এ কথা ঠিক যে বিশ্বে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু কোন পণ্যের দাম কত বেড়েছে, তা জনগণের কাছে পরিস্কার নয়। সোস্যাল মিডিয়ায় আসা এক তথ্য থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতি মেট্রিক টন (১০০০ লিটার) পরিশোধিত তেলের মূল্য ৬৫০ ডলার অর্থাৎ (৬৫০*৮৬= ৫৫ হাজার ৯০০ টাকা, লিটার প্রতি মূল্য- ৫৫ টাকা ৯০ পয়সা। এর সঙ্গে শিপিং খরচ প্রতি মেট্রিক টন গড়ে ৬৫ ডলার অর্থাৎ (৬৫*৮৬) = ৫৫৯০ টাকা, লিটার প্রতি ৫ টাকা ৬৯ পয়সা। মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারে এবং লাইটার থেকে নির্ধারিত জেটিতে কন্টেইনারে লোড-আনলোড খরচ লিটার প্রতি গড়ে ৫ টাকা। বোতলজাতকরণ/প্যাকেজিং খরচ প্রতি লিটারে সর্বাধিক ১০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে পরিবহন খরচ লিটার প্রতি সর্বোচ্চ ৫ টাকা।

পরিশোধিত ভোজ্যতেলের আমদানি শুল্ক ১৪ শতাংশ হিসেবে প্রতি মেট্রিক টনের শুল্ক ৭৮২৬ টাকা, যা লিটার প্রতি দাঁড়ায় ৭ টাকা ৮০ পয়সা। এর সঙ্গে যদি আমদানিকারক (১০ টাকা) ডিপো (৫ টাকা) ডিলার (৫ টাকা) পাইকার (৫ টাকা) খুচরা (১০ টাকা) সবার মুনাফা ধরে যদি লিটার প্রতি আরো ৩৫ টাকা যোগ করি, তাহলে ভোক্তার নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত লিটার প্রতি তেলের মূল্য দাঁড়ায়- ৫৫.৯০+৫.৫৯+৫+১০+৫+৭.৮০+৩৫= ১২৪.২৯ টাকা।

এক কথায় বলতে হয় যে দেশে রপ্তানিকারক থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো অবধি সব ব্যয়ভার বহন ও সম্ভাব্য মুনাফা যোগ করেও লিটার প্রতি ১২৫ টাকায় সয়াবিন তেল পৌঁছানো সম্ভব। সেখানে অনেক বেশী দামে কিনতে হচ্ছে এই তেল। এখান থেকে বুঝা যায়-ইতিবাচক মানসিকতা, স্বদিচ্ছা, সততা ও দেশপ্রেমের বিকল্প নাই।

তাই প্রবীণ ও নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট এবং দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে জনগণবান্ধব বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন, প্রতিটি দ্রব্যের বাজারমূল্য নির্ধারণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা ও সমন্বয়ে আরও বেশি বেশি মোবাইল কোর্ট চালু করে ভেজালকারীদের গুরুদণ্ড প্রদান, ক্যাবকে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। লেখক- সিনিয়র সাংবাদিক, কোষাধ্যক্ষ আরইউজে।

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.