সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৪১ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর তানোর উপজেলায় এবারও প্রচুর আলুর চাষ হয়েছে। তবে কারচুপির মাধ্যমে মৌসুমি আলু ব্যবসায়ীরা বস্তাপ্রতি কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত পাঁচ-সাত কেজি আলু বেশি নিচ্ছেন। এতে ফলন ও দাম ভালো হলেও লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকদের। টাকার অঙ্কে এই লোকসানের পরিমাণ ৪৬ কোটির বেশি।
জানা যায়, এ উপজেলার দুই পৌরসভা ও সাত ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জে এবার আলু তোলার মৌসুমে নির্ধারিত ৫০-৬০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তায় পাঁচ-সাত কেজি করে বেশি নিচ্ছেন দালাল ও ফড়িয়ারা। এমনকি ৫০ কেজির বস্তার পরিবর্তে পাটকলে অর্ডার দিয়ে ইচ্ছেমতো বস্তা তৈরি করেও আলু সংগ্রহ করছেন তাঁরা।
এদিকে নিয়মানুযায়ী বস্তার গায়ে ধারণক্ষমতা ও বস্তা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ থাকার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এতে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন কৃষক। এ নিয়ে কৃষকেরা প্রতিবাদ করলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে তানোরে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি, ১৩ হাজার ২৫০ হেক্টর। তানোরে মোট আলু উৎপাদিত হয়েছে ৩ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। এতে মোট বস্তা হওয়ার কথা ৬৬ লাখ ২৫ হাজার। তবে মোট আলুর ৯০ শতাংশ আলু বস্তাবন্দী হয়। ৫০ কেজির বস্তার হিসাবে মোট বস্তা দাঁড়ায় ৫৯ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি। প্রতি বস্তায় ঢলন হিসেবে ৬ কেজি অতিরিক্ত নিলে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ কেজি আলু লোকসান হচ্ছে কৃষকের। যার বাজারমূল্য ১৩ টাকা কেজি দরে হলে ৪৬ কোটি ৫০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
উপজেলার হরিদেবপুর গ্রামের আলুচাষি সুকুমার রবিদাস, চাপড়া গ্রামের মোক্তার হোসেন, জিওল গ্রামের শাকিলসহ অনেকে বলেন, এবার মৌসুমের শুরু থেকে ঢলনের নামে বস্তায় পাঁচ-সাত কেজি আলু বেশি নিচ্ছেন দালাল ও ফড়িয়ারা। এতে আর্থিকভাবে কৃষক অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মৌসুমি ব্যবসায়ী জানান, তাঁরা প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে আলু কিনে বিভিন্ন জেলার বড় পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। তখন প্রতি বস্তায় দু-তিন কেজি আলু বেশি দিয়ে বিক্রি করতে হয়। তা ছাড়া আলু কাঁচা থাকায় কয়েক দিন পর ওজন কিছুটা হলেও কমে যায়। তাই প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে কেনার সময় একটু বেশি করে নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শামিমুল ইসলাম জানান, উপজেলায় এ মৌসুমে উৎপাদিত ৮৭ লাখ ১৭৫ মেট্রিক টন আলু তানোরের ৫টি হিমাগারে সংরক্ষণে রাখা যাবে। কিন্তু বস্তার ধারণক্ষমতায় কারচুপি করে আলু ক্রয়ের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খোঁজখবর নেওয়া হবে।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পংকজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র : আজকের পত্রিকা