রবিবর, ১০ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:২৮ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, গোদাগাড়ী : রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বসস্তপুরে একটি চক্রের কবল থেকে জমি উদ্ধারের পর হয়রানি বন্ধের আবেদন জানিয়েছেন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী পরিবারের সদস্যরা। রোববার বেলা ১১টার সময় গোদাগাড়ী উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
আদিবাদী নেতা জোহর লাল পান্নার অভিযোগ, গত ২৬ বছর ধরে দখলদার একটি চক্র তাদের পরিবারের ২৪ কাঠা বসতভিটাসহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি দখলে নিয়ে আছেন। সম্প্রতি এসব জমি থেকে দখলদারদের সরাতে গেলে তারা প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। মামলা মোকদ্দমা করে হয়রানি শুরু করেছেন। এর ফলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। গোদাগাড়ীর চৌদুয়ার গ্রামের বাসিন্দা জোহর লাল পান্না (৪৫) সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ২৯৮ নং বসন্তপুর মৌজার দুই দাগে আনুমানিক ২৪ কাঠা বসতভিটার প্রকৃত মালিক তার বাবা মৃত গাহানু সরদার।
বাবার মৃত্যুর পর এই জমির মালিক এখন তিনি। জমির কাগজপত্র ও হালনাগাদ খাজনাও তার বাবার নামে চলমান আছে। কিন্তু গত ২৬ বছর আগে এলাকার জালাল উদ্দিন, তার তিন ছেলে শহিদুল, মাহাবুবুর রহমান, তাহাবুর রহমান মিলে জমিতে মাটি ও খড়ের চালা তুলে জবরদখল করে নেয়। বাবা গাহানু সরদার মারা গেলে তিনি পৈত্রিক সম্পত্তি উদ্ধারের বহু চেষ্টা করেন। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগে আরও বলা হয় গত ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে দখলদারদের সরে যেতে বলেন। কিন্তু তাকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করা হয়। পরে আমি জমি দখলমুক্ত করতে থানা পুলিশে লিখিত অভিযোগ করি দখলদার জালাল গংয়ের বিরুদ্ধে।
পুলিশ উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় ডাকেন। কিন্তু দখলদাররা কোন কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে পুলিশও দখলদারদেরকে জমি ছেড়ে দিতে বলেন। গত ৫ মার্চ দখলদাররা তাদের অধিকাংশ জিনিসপত্র নিজে থেকেই সরিয়ে নেন। গত ৬ মার্চ আমি নিজ সম্প্রদায়ের লোকজন নিয়ে জমিতে গিয়ে দখলদারদেরকে জিনিসপত্র সরাতে সহযোগীতা করি। এলাকার শত শত মানুষ তা দেখেছেন। জোহরলাল পান্না আরও অভিযোগ করেন, দখলদাররা নিজেরাই জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে গেলেও তারাই আবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন আমরা নাকি তাদের বাড়িতে ভাংচুর করেছি লুটপাট করেছি বাড়িতে আগুন দিয়েছি। অমানবিক কায়দায় উচ্ছেদ করেছি।
সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে আমি তাদের প্রত্যেককে জমির কাগজপত্র দেখিয়েছি। এসব অপপ্রচার চালিয়ে দখলদার চক্র লোকজন ও প্রশাসনের সহানুভুতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা আদিবাসী মানুষ। শক্তি দিয়ে কাউকে উচ্ছেদ করার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। দখলদাররা যদি তাদের স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারে-এই জমির ওপর কোন দাবি দাওয়া রাখব না বলেন সংবাদ সম্মেলনে জোহরলাল পান্না।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে জোহরলাল পান্নার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দখলদার জালাল উদ্দিন জানান, এই জমি কেনার জন্য তিনি জোহরলালের বাবা গাহানু সরদারকে ২৬ বছর আগে টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু সাঁওতালের জমি কেনার জন্য সরকারি অনুমতি লাগে। সেই অনুমতি নেওয়ার আগেই প্রকৃত মালিক গাহানু সরদার মারা যান। সেই থেকে তিনি ও তার তিন ছেলে জমিতে বাড়িঘর করে বসবাস করে আসছিলেন। গাহানু সরদারের মৃত্যুর পর তার ছেলে জোহরলাল পান্নার কাছে রেজিষ্টি করে চাইলেও তিনি দেননি। এখন আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমাদের বাড়িঘর ভাঙ্চুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমরা অন্যায়ভাবে উচ্ছেদের বিচার চাই।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, জমিটির প্রকৃত মালিক গাহানু সরদারের ছেলে জোহরলাল পান্না। অভিযোগ পেয়ে দুই পক্ষকেই থানায় ডাকা হয়েছিল নিজ নিজ পক্ষের কাগজপত্র নিয়ে। কিন্তু জালাল উদ্দিনের কোন কাগজপত্র নেই। বরং জোহরলাল পান্নার খাজনা খারিজ হালনাগাদ আছে। ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগের কোন ঘটনা ঘটেনি বলেও নিশ্চিত করেন ওসি। দখলদাররা পরিস্থিতি দেখে নিজেরাই সরে গেছেন। আজকের তানোর