শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:২৪ pm
ডেস্ক রির্পোট : আম রাজশাহীর প্রধান অর্থকরী ফসল- এমনটিই মনে করেন অনেকে। কিন্তু সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করে বছরে আয় হয় মাত্র ৮০০ কোটি টাকা। সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ করে আয় হয় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। রাজশাহীর প্রধান অর্থকরী ফসল এখন পান। এখানে উৎপাদিত পান যায় মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, রাজশাহীর দুর্গাপুর, মোহনপুর, বাগমারা ও তাহেরপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়। মাত্র দশ কাঠা জমিতে পান চাষ করে ৫ সদস্যের পরিবারের খরচ চালিয়েও বছর শেষে প্রায় দুই লাখ টাকা সঞ্চয় হয় চাষির ঘরে। কম জমিতে এমন লাভজনক ফসল রাজশাহী অঞ্চলে আর নেই। প্রতি বিঘা জমির পানবরজে দুই লাখ টাকা খরচ করলে অন্তত ১০ লাখ টাকার পান বিক্রি করা যায়। তবে মাঝে মাঝে কিছু রোগ ভোগায় পানচাষিদের।
জানা যায়, রাজশাহীর সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ৭৬ হাজার টন পান উৎপাদন হয়। ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ২ লাখ ১৭ হাজার টন আম উৎপাদন হয়। ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ৩ লাখ ৩৫ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। সাড়ে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে ৮০০ কোটি টাকার ৯ লাখ ৮০ হাজার টন আলু উৎপাদন হয়। যে কোনো ফসলের চেয়ে আয় বেশি হয় পানে। ২ হাজার ৪৮টি পানে এক পোয়া। মানভেদে প্রতি পোয়া পান বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকায়।
রাজশাহীর তাহেরপুর এলাকার পানচাষি মোজাফর আলী বলেন, এক বিঘা পানবরজে বছরে তার খরচ হয় দুই লাখ টাকা। এ থেকে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার পান বিক্রি হয়। পাঁচ থেকে ছয়জনের পরিবার এই পানবরজের টাকাতেই চলে যায়। বছর শেষে প্রায় চার লাখ টাকা সঞ্চয় হয়। তাহেরপুরের আরেক পানচাষি হাবিবুর রহমান হাবু বলেন, পানচাষিকে কখনোই টাকার চিন্তা করতে হয় না। টাকার প্রয়োজন হলেই বরজ থেকে পান তুলে আড়তে নিলেই নগদ টাকা পাওয়া যায়। অনেকটা ব্যাংকের মতোই। তবে মাঝে মধ্যে রোগবালাই দেখা দেয়। বর্ষায় পচন রোগ, শীতে পোড়া রোগ দেখা দেয়। এ দুটি রোগ থেকে পান বাঁচাতে পারলে চাষিকে আর চিন্তা করতে হয় না।
পানবরজে কাজ করলে অন্যান্য মজুরির চেয়ে টাকা মেলে বেশি। তাই দিনমজুরদের আগ্রহ থাকে পানবরজে। বছরের ১০ মাসই বরজে কাজ থাকে। পানবরজের শ্রমিক আব্দুর রহিম বলেন, ধান লাগানো বা অন্য কাজে মজুরি মেলে কম। বরজে কাজ করলে মেলে ৫০০ টাকা। এ কারণে শ্রমিকরা বরজেই বেশি কাজ করতে আগ্রহী হন।
তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পানচাষির হঠাৎ টাকা প্রয়োজন হলে কারও কাছে ধার বা ব্যাংকে যেতে হয় না। পানবরজই যেন একটি ব্যাংক। বরজ থেকে পান তুলে আড়তে নিলেই মেলে নগদ টাকা। তিনি বলেন, পানবরজ করে এ অঞ্চলের অনেকেই এখন সচ্ছল। অনেক মানুষ যারা আগে ভালোভাবে চলতে পারতেন না তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। এ অঞ্চলের সব মানুষই এখন মোটরবাইক নিয়ে চলাফেরা করেন। দেশের প্রায় সব বাইকের শো-রুমও আছে তাহেরপুরে। মূলত পানই অর্থনীতির চাকা শক্তিশালী করেছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও ইতালিতে পান রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। সূত্র : সমকাল