শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৩১ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে সরকারের চাল ও গম বরাদ্দ দিয়েছেন সংসদ সদস্য। কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা যোগসাজশে সেই বরাদ্দ লুটপাট করেছেন। সংস্কারমূলক কাজের জন্য কোথাও এক ঝুড়ি মাটিও ফেলা হয়নি। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে স্থানীয় সাংসদের প্রকল্পের এমন ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী ‘২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম পর্যায়ে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-উন্নয়ন) কর্মসূচির’ আওতায় গোদাগাড়ী উপজেলায় ৯৬ মেট্রিক টন করে চাল ও গম বরাদ্দ দেন। ছয়টি করে চাল এবং ছয়টি করে গম মিলে মোট ১২ প্রকল্পের বিপরীতে ১৯২ টন চাল-গম বরাদ্দ দেয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। প্রতিটি প্রকল্পের জন্যই বরাদ্দ ছিল ১৬ টন চাল অথবা গম।
খাদ্যগুদামের এক টন গম বর্তমানে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। আর চাল ৩০ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রায় ২৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকার গম ও ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার চাল বরাদ্দ হয়েছিল। মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫ লাখ ৬৮ হাজার।
গমের একটি প্রকল্পের বিপরীতে ৪ লাখ ৪৮ হাজার এবং চালের ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা লুট হয়ে গেছে। প্রায় অর্ধকোটি টাকার এই পুকুরচুরির সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, সদস্য, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং যুবলীগের কয়েকজন নেতা জড়িত বলে জানা গেছে।
গোদাগাড়ীতে মোট ইউনিয়ন ৯টি। অথচ সাংসদের গমের ছয়টি প্রকল্পের চারটিই দেয়া হয়েছিল পদ্মা নদীর ওপারের দুর্গম চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে। আর গোদাগাড়ী সদর ও মোহনপুর ইউনিয়নে দেয়া হয় একটি করে।
অন্যদিকে, চালের ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে দুটি পাঠানো হয় পদ্মার ওপারের চরে। আর প্রত্যন্ত রিশিকুল ইউনিয়নে তিনটি এবং মোহনপুরে একটি প্রকল্প দেয়া হয়। সংস্কারের জন্য নির্বাচিত সবগুলো রাস্তারই দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার করে।
দেখা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী পিআইও অফিস প্রকল্প অনুমোদন করে। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য অথবা সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্যকে সভাপতি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়। গত নভেম্বরে গোদাগাড়ীতে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের আগেই চেয়ারম্যান ও সদস্যরা প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কোথাও কোনো কাজ হয়নি।
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের একটি প্রকল্প এলাকার স্থান হিসেবে উল্লেখ আছে, ‘উত্তর কানাপাড়া জামালের বাড়ি থেকে হনুমন্তনগর হাবুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার।’ ২ মার্চ চর আষাড়িয়াদহে গিয়ে কথা হয় হাবুর স্ত্রী সাবিনা বেগমের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এই রাস্তাটি চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে ঢোকার অন্যতম প্রধান রাস্তা। রাস্তায় একহাঁটু করে কাঁদা হয়। চলাচল করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তা-ও সংস্কার করা হয় না। অনেক দিন তিনি এই রাস্তায় কোনো সংস্কারকাজ হতে দেখেননি।
চরের আরেকটি প্রকল্পের নাম ‘চর বয়ারমারি মনি মাঝির বাড়ি হতে হঠাৎপাড়া জামে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার।’ ২ মার্চ সকালে মনি মাঝির বাড়ির পাশেই তরিকুলের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন ব্যক্তি।
তাদের চলাচলের রাস্তার জন্য ১৬ টন চাল বরাদ্দ শুনে জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘কুন জাগায় কাজ হয়্যাছে আপনিই লিজের চোখে দেখ্যা যান। কাজ হলে তো ভালুই হতো।’ অন্য প্রকল্প এলাকাগুলো ঘুরেও কোথাও কোনো কাজ করার নমুনা পাওয়া যায়নি।
কাগজে-কলমে প্রকল্পগুলো যখন বাস্তবায়ন হয়, তখন চর আষাড়িয়াদহের চেয়ারম্যান ছিলেন মো. সানাউল্লাহ। তিনি কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিও ছিলেন।
কাজের বিষয়ে মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘কাজ তো হয়েছে। না হওয়ার নয়।’
কাজের জন্য বরাদ্দের কত শতাংশ টাকা পেয়েছিলেন জানতে চাইলে মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘এটা তো বলা যাবে না। বলতে গেলে সমস্যা আছে। এসব কথা কি বলা যায়!’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে মোবাইল ফোনে প্রকল্পগুলো বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং বলেন, ‘এসব বিষয়ে মোবাইলে কথা বলা যাবে না। অফিসে আসেন, কথা হবে।’ সূত্র- আজকের পত্রিকা