রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:২৯ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক সকাল সাড়ে ১০টা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউজ মোড়ে টিএসআই উজ্জ্বলের নেতৃত্বে ট্রাফিক কনস্টেবল আবু হানিফ তল্লাসি চৌকি বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই করছিলেন।
এমন সময় ওইপথ দিয়ে অফিসে যাচ্ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবীর। হঠাৎ তিনি দেখতে পান ট্রাফিক কনস্টেবল আবু হানিফ একটি ট্রলি আটক করে চালককে ধমকাচ্ছেন। ট্রলি চালকের সাথে ট্রাফিক কনস্টেবলের এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীর দাঁড়িয়ে যান এবং ঘটনাটি অবলোকন করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে ট্রাফিক পুলিশের সাথে সখ্যতা থাকা স্থানীয় এক দালালের ইশারায় ট্রলি চালককে পাশের নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ওই ট্রাফিক কনস্টেবল ৫০০ টাকা ঘুষ দাবি করে। টাকা দিলে ছেড়ে দিবে, না হলে মামলা দিবে বলে জানায়। এ সময় ট্রলি চালক অনেক অনুনয় বিণয় করলেও ট্রাফিক কনস্টেবল ট্রলি চালকের অনুরোধ মানতে নারাজ।
এক পর্যায়ে ট্রলি চালক তার পকেটে থাকা ৪৫০ টাকা বের করে সেখান থেকে ৫০ টাকা রেখে ৪০০ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হন। ঘুষের টাকা নিয়ে ট্রাফিক কনস্টেবল ট্রলি চালককে ছেড়ে দেয়। ঠিক ওই সময় ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘুষের টাকা ট্রাফিক কনস্টেবলকে ফেরত দিতে বলেন।
ট্রাফিক কনস্টেবল টাকা ফেরত দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে টাকা ফেরত দেয়। ঘটনার পর ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীর ওই ট্রাফিক কনস্টেবলকে আটকের নির্দেশ দিয়ে আদালতে চলে যান। এ ঘটনায় টিএসআই উজ্জ্বলকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে ও ট্রাফিক কনস্টেবল আবু হানিফকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে জেলা পুলিশ।
শনিবারের এ ঘটনাটি ছিলো টক অব দ্যা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। জেলা পুলিশ ও জেলার ট্রাফিক বিভাগেও দিনভর তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ট্রাফিক কনস্টেবল আবু হানিফ এবং টিএসআই উজ্জল আদালতে হাজির হয়ে দোষ স্বীকার করে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করবেনা মর্মে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বরাবর লিখিত মুচলেকা দেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীর মুচলেকা গ্রহণ করে জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) তাদের দুইজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেন।
পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আদালতের আদেশ পেয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) রকিব আহমেদ ট্রাফিক কনস্টেবল আবু হানিফকে সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং টিএসআই উজ্জলকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শতাধিক সাধারণ মানুষ জানান, টিএসআই উজ্বলের নিত্যদিনের কর্মকান্ড ছিলো বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও ঘুষ নেয়া। তবে ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীরের এমন স্বপ্রণোদিত কঠোর হস্তক্ষেপে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে তারা।
এমনকি টিএসআই উজ্জ্বলকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ ও কনস্টেবল আবু হানিফকে বরখাস্তের খবরে আনন্দ উল্লাস করেছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি ভবিষ্যতে কাগজপত্র তল্লাশির নামে সাধারণ মানুষকে যেন হয়রানি না করা হয় এমনটাই দাবি করেছেন উপস্থিত জনসাধারণ।
ট্রলি চালক রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার আমীর হামজা বলেন, ভাড়া নিয়ে তাদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশকে ঘুষ দিতে গিয়ে তাদের লাভের ষোলআনাই শেষ হয়ে যায়।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীরের স্বপ্রণোদিত এমন হস্তক্ষেপে আমীর হামজা স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, দেশে এখনো অনেক ভালো মানুষ আছেন। যারা অন্যায়-অবিচার দেখলেই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান। আজকের তানোর