শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৩৭ pm
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীতে অবৈধ জাগ বা ঘের (কুমার/কাঠা) দিয়ে নদীর মাছ মাছ আহরনের কারনে দূষিত হচ্ছে পানি। মহানন্দার এই দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে নানারকম পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের রামজীবনপুর-দীননাথপুর গ্রামের নদীতীরবর্তী মানুষ। এনিয়ে ৬৩ জন গ্রামবাসীর সাক্ষর নিয়ে এর প্রতিকার চেয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। অভিযোগপত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করেন, বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তরিকুল ইসলাম। জনসাধারণের গোসলের জায়গায় জাগ বা কাঠা দেয়ার প্রতিবাদ করার পরেও কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় হতাশ এলাকাবাসী। অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয়েছে, জেলা প্রশাসক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এবং সদর মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) বরাবর।
অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের দীননাথপুর গ্রাম সংলগ্ন নদী তীরবর্তী এলাকার শীতলাতলা ঘাট ও মরঘাটি ঘাটে রামজীবনপুর গ্রামের সমসু মন্ডলের ছেলে মো. আব্দুর রাকিব নদীর মাছ আহরনের উদ্দেশ্য ঘের (জাগ/কুমার/কাঠা) দিয়েছে। ঘেরে তিনি ডালপালা দিয়ে রেখেছেন। এতে কচুরিপানা দিয়ে আটকে জাগ ঘিরে রাখার কারনে গোসল করতে আসা মানুষের চুলকানি রোগ দেখা দিয়েছে। এমনকি এই এলাকার টিউবওয়েলে আর্সেনিক থাকায় এই নদী তীরবর্তী এলাকার বেশিরভাগ পরিবার নদীর পানি ভাত রান্নার কাজে ব্যবহার করেন। দূষিত এসব পানিতে গোসল ও ব্যবহারে চুলকানিসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে দীননাথপুর গ্রামে।
দীননাথপুর গ্রামের কৃষক মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, নদীর পাড়ে বাড়ি হওয়ার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে নদীতেই গোসল করি। শীতলাতলা ঘাট ও মরঘাটি ঘাটে জাগ/কাঠা দেয়ায় কচুরিপানার কারনে পানি খারাপ হয়ে গেছে। এখন যেই গোসল করতে আসছে, তারই চুলকানি হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। নদীর অনেক জায়গা রয়েছে, তাই আব্দুর রাকিবের উচিত সাধারণ মানুষের ক্ষতি না করে ফাঁকা জায়গায় জাগ দেয়া। কিন্তু তিনি তা করছেন না।
গৃহবধূ সুমেরা বেগম বলেন, দুই ছেলেমেয়ে নদীতে গোসল করে। কয়েকদিন থেকে চুলকানির যে মহামারী শুরু হয়েছে, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। ছেলেমেয়েদেরকে কিছুতেই নদীতে গোসল না করার জন্য আটকে রাখতে পারছি না। তারা তো বুঝে না, ছোট বাচ্চা। কিন্তু যারা বুঝে, তারা কেন এমন জায়গায় কাঠা দিয়েছে? চুলকানির ভয়ে গত কয়েকদিন থেকে ভাত রান্নার পানিও আনতে যায় না।
মো. জুলফিকার আলী জানান, জাগ বা কাঠার কারনে সব ল্যালা (পানির আর্বজনা) জন্মায়। এতে অনেক চুলকানি হয়। বিভিন্ন কাটা দেয়ার কারনে মানুষ গোসল করতে পারেনা, এমনকি পানিতে নামতেও পারে না। পানি অনেক তিতা হয়ে যাওয়ায় রান্নার কাজে ব্যবহার করা অসম্ভব হয়ে যায়।
জাগ বা কাঠার মালিক আব্দুর রাকিব বলেন, গত ২ বছর থেকে শীতলাতলা ঘাটে জাগ দিয়ে মাছ চাষ করছি। তবে কারো অনুমতি নেয়নি। অসুখ হলেও কেউ কিছু বলেনি, তাই সরাইনি। তবে ইউপি চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম বলেন, জাগ/কাঠা ব্যবহারের ফলে দীননাথপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মহানন্দা নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এমনকি ইউএনও বরাবর একটি অভিযোগ হয়েছে।
এবিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম সরকারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।