শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:৪২ am

সংবাদ শিরোনাম ::
মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য কোথাও বসাতে না পেরে বিক্রি করলেন ভাঙারির দোকানে রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই : আনন্দবাজারকে জামায়াতের আমির আগামী তিন মৌসুমের জন্য আইপিএলে যে ১৩ ক্রিকেটারের নাম দিল বিসিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ থামিয়ে রাখেননি অভিনেত্রী হিনা খান নগরীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১ জন গ্রেপ্তার তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাঁচার রোধে হট্টগোল মারপিট দুর্গাপুরে হোজা নদী পুন:খনন ও দখলমুক্ত দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলিপি রাজশাহীতে সমন্বয়ক পেটানোর ব্যাখ্যা দিল মহানগর ছাত্রদল আঘাতের দাগে সম্পর্কের রূপান্তর ! রাজু আহমেদ তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না নগরীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত আগামী ২৯ নভেম্বর খুলছে রাজশাহী সুগার মিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে স্মরণসভা রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১১ বাগমারা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেবের ইন্তেকাল তানোরে মসজিদের এসি অফিসার্স ক্লাবে, ইমামের অর্থ আত্নসাৎ প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তানোরে বিএনপির কর্মীসভা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮ জন গ্রেপ্তার লীজকৃত পুকুর দখল, মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ
ইউক্রেনীয় ভালোবাসা : শান্তি চাই যুদ্ধ নয়

ইউক্রেনীয় ভালোবাসা : শান্তি চাই যুদ্ধ নয়

কথায় আছে- ‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ’। সারা বিশে^ যখন নির্মম মহামারি করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ঠিক তখনই বিশে^র অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার রোষানলে পড়েছে ইউক্রেন। নিরব ঘাতক করোনায় দিশেহারা সময় কাটাতে না কাটাতেই ইউক্রেনে রাশিয়ার এমন সর্বাত্মক আগ্রাসনে বৈশ্বিক অর্থনীতি মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থা দুটির প্রধানরা ইউক্রেনকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাবগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য সমন্বয় করছে। গণমাধ্যমের সূত্রতায় জেনেছি, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের জনগণের ওপর যুদ্ধের প্রভাব সম্পর্কে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। এক টুইট বার্তায় তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই যুদ্ধ ‘অঞ্চল ও বিশ্বের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ঝুঁকি যোগ করবে।’ আইএমএফ যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাবের মূল্যায়ন অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু ‘প্রয়োজনে আমরা সদস্যদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত থাকব।’ ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি আগামী জুনে শেষ হতে যাওয়া একটি ঋণ কর্মসূচির অধীনে ইউক্রেনকে ২২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে জানিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস অবশ্য বলেছেন, ‘মর্মান্তিক সহিংসতা ও প্রাণহানির কারণে আতঙ্কিত।’ এ আগ্রাসন ‘ইউক্রেনের উন্নয়নে ধ্বংসাত্মক, সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ফেলবে’ বলে তিনি সতর্ক করেছেন। ম্যালপাস বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে অবিলম্বে সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছি এবং দ্রুত অর্থ ছাড়সহ নানা ধরনের সহায়তার জন্য বিকল্পগুলো প্রস্তুত করছি’।ইউক্রেনে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়নের পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্বব্যাংকের। এর অংশ হিসেবে দেশটিকে ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার দেবে বলে ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। আগামী মার্চের মধ্যেই এ অর্থ ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার ইউরোপের সঙ্গে সমন্বয় করে মস্কোর শীর্ষ ব্যাংকের সম্পদ জব্দ ও দেশটিতে উচ্চ প্রযুক্তির রপ্তানি বন্ধ করাসহ গুরুতর নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছে। রাশিয়ার আগ্রাসনে ইতোমধ্যেই অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের দাম ২০১৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে, যা বিশ্ব মুদ্রাস্ফীতিতে উদ্বেগজনক চাপ যোগ করেছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ছে হু-হু করে। বিশ্বব্যাপী শেয়ার ও সূচকের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে সোনা ও অ্যালুমিনিয়ামের দামও বাড়তে শুরু করেছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বিশ্ববাজারে গম থেকে শুরু করে জ¦ালানির দামে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও।
ইউক্রেনে হামলায় বাধার মুখে পড়েছে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজের চলাচল। এ পথ দিয়ে আমদানি-রপ্তানি করা খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেক অঞ্চলের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে নতুন করে খাদ্যের দাম বাড়লে তা সংকট বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউরোপের ৩৫ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা মেটে রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের দামামায় গ্যাসের দাম বাড়তে শুরু করেছে। যুদ্ধের ফলে সংকটে পড়তে শুরু করেছে পশ্চিমা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে রয়েছে তারা। দেশটির সবচেয়ে বড় জ¦ালানি তেল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান রসনেফটে ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে যুক্তরাজ্যের বহুজাতিক জ¦ালানি প্রতিষ্ঠান বিপির। প্রতিষ্ঠানটির মোট উৎপাদনের তিন ভাগের এক ভাগ আসে রসনেফট থেকে। ভালোবাসা-শ্রদ্ধা আর আন্তরিকতায় অগ্রসর হচ্ছিলো ইউক্রেন, এমন সময় পরাশক্তি রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান পুতিন যখন নির্মম হামলা চালালো, তখন বিশে^র অন্যান্য নতুন প্রজন্মের রাজনীতিকদের মত চুপ করে বসে থাকতে পারছি না, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির রাজনৈতিক কর্মীদেরকে নিয়ে একের পর এক সভা করছি আর এই অন্যায়যুদ্ধ বন্ধ করতে আহবান জানাচ্ছি। এরইমধ্যে অবশ্য ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র হামলা ও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের দক্ষিণ, পূর্ব এবং উত্তরের প্রধান শহরগুলোর চারপাশে যুদ্ধ চলছে।
রাশিয়ার সেনাবাহিনী চেষ্টা করছে রাজধানী কিয়েভ পুরোপুরি দখল করে নেওয়ার। এরপর তারা দেশটির নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করবে। কিয়েভের মাইডান স্কয়ারের কাছে একটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং শহরের ত্রয়েশ্চিনা এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কিয়েভের ওপর গোলা হামলার শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে, শহরের কেন্দ্র থেকে কয়েক মাইল দূর পর্যন্ত শব্দ পেয়েছেন তারা। শহরের চিড়িয়াখানার কাছে এবং শুলিয়াভকা শহরের আশপাশে ৫০টিরও বেশি বিস্ফোরণ এবং ভারি মেশিনগানের গোলাগুলি হয়েছে। ইউক্রেনীয় স্টেট স্পেশাল সার্ভিসের মতে, রাজধানীর ট্রয়েসচিনা এলাকার সিএইচ পি-৬ পাওয়ার স্টেশনের কাছে তীব্র লড়াই চলছে। এ হামলার মাধ্যমে পুরো শহরটিকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে। কিয়েভের পেরেমহি অ্যাভিনিউয়ে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ এবং বিভিন্ন স্থানে আগুন জ¦লতে দেখা গেছে। ভাসিলকিভের একটি বিমানঘাঁটির কাছে তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ান প্যারাট্রুপাররা কিয়েভের ওপর হামলা চালানোর জন্য এই ঘাঁটি তাদের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করবে। অবশ্য ইউক্রেনীয় বাহিনী দাবি করছে, তারা কৃষ্ণসাগরের শহর মাইকোলাইভে থেকে রাশিয়ানদের সফলভাবে হটিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে কিয়েভ সেনাঘাঁটিতে হামলা ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী শনিবার একটি ফেসবুক পোস্টে জানায়, কিয়েভের একটি সেনাঘাঁটিতে রাশিয়ান সৈন্যরা আক্রমণের চেষ্টা করলে তারা এর বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই শুরু করে।
এই যুদ্ধ যখন নির্মম মহামারির কবল থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া বিশ^বাসীকে ব্যথিত করছে, তখন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থোনিও গুতেরেস রুশ সেনাদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শান্তিকে আরেকটি সুযোগ দেওয়া উচিত। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর পরই তিনি মন্তব্য করেন, যেখানে ইউক্রেনে আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে রাশিয়ার ভেটো ক্ষমতার কারণে এই খসড়া প্রস্তাবটি ব্যর্থ হয়ে যায়। এক টুইটবার্তায় গুতেরেস আরো লিখেছেন, জাতিসংঘের জন্ম হয়েছিল যুদ্ধাবস্থায়, যুদ্ধের অবসান ঘটাতে। আজ সেই উদ্দেশ্য অর্জিত হয়নি। কিন্তু আমাদের কখনই হাল ছাড়লে চলবে না। আমাদের শান্তিকে আরেকটি সুযোগ দিতে হবে। এর কিছুক্ষণ পর, তিনি ইউক্রেন হামলা চালানো রাশিয়ান সেনাদের তাদের ব্যারাকে ফিরে যেতে বলেন। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বড় বড় শহরে বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। কিয়েভের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরের ওবোলোনে ঢুকে পড়েছে রুশ ট্যাংক বহর। ট্যাংক থেকেও মুহুর্মুহু গোলা ছোঁড়া হচ্ছে। কৃষ্ণসাগরে সক্রিয় রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, রুশ সেনারা কিয়েভের পার্লামেন্টের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, ৯৬ ঘণ্টাতেই কিয়েভের পতন হবে। ইউক্রেনের খারকিভ, উত্তর ইউক্রেন ও দক্ষিণের ওডেসায়সহ বড় শহরগুলোতে রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্মুখ লড়াইও চলছে। ইতোমধ্যে চেরনোবিল পারমাণবিক এলাকা, একটি বিমানঘাঁটি ও স্নেক আইল্যান্ড রুশ সেনাদের দখলে চলে গেছে। এদিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বর্তমান শাসকদের ‘সন্ত্রাসী’ ও মাতালদের চক্র আখ্যা দিয়ে তাদের উৎখাত করে ক্ষমতা নেওয়ার জন্য দেশটির (ইউক্রেন) সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান।
তবে ‘কিয়েভের পতনের চূড়ান্ত মুহূর্তে’ আলোচনার বার্তাও দিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সঙ্গে তৃতীয় কোনো দেশে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত দেশটি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, আলোচনা করতে চাইলে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে তা হতে পারে। এর আগে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পশ্চিমা দেশগুলোকে যুদ্ধে পাশে পাচ্ছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞায় কি রাশিয়ার ওপর কোনো প্রভাব পড়েছে? ক্ষমতাধররা শুধু দেখছে, একাই লড়ছি আমরা। রাশিয়ার হামলায় শুক্রবার পর্যন্ত দেশটির সেনাসদস্যসহ অন্তত ১৩৭ জন নিহত ও ৩১৬ জন আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান নতুন করে রাশিয়ার ব্যাংক, কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, তিনি ভøাদিমির পুতিনকে টেলিফোন করে হামলা বন্ধ করতে বলেছেন। হামলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে পুতিন বলেছেন, রাশিয়াকে রক্ষায় আর কোনো বিকল্প ছিল না। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, দখল নয়, ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করতে চায় রাশিয়া। যুদ্ধে জড়ানোর প্রতিবাদে রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় অন্তত ১৮০০ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বিভিন্ন দিক থেকে ট্যাংক বহর নিয়ে রাজধানীর অভিমুখে এগোতে থাকে রুশ বাহিনী।
প্রথম দিন তারা সমতলে থাকা ইউক্রেনের ৮৩টি লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে। দ্বিতীয় দিন চেরনোবিলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও স্নেক আইল্যান্ডসহ বিভিন্ন অঞ্চল দখলে নিয়েছে। কৃষ্ণসাগরের ছোট দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ডকে রুশ সেনাদের কাছ থেকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন ১৩ ইউক্রেনীয় সেনা। রুশ যুদ্ধজাহাজের কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তারা। পরে ওই যুদ্ধজাহাজ থেকে ছোঁড়া বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় তাদের। এ প্রসঙ্গে অবশ্য ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমাদের জিমিনি দ্বীপকে (স্নেক আইল্যান্ড) সুরক্ষিত রাখতে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন সীমান্তরক্ষীরা। বীরত্বপূর্ণভাবে জীবনবাজি রেখেছেন। তারপরও হাল ছেড়ে দেননি। তাদের সবাইকে ইউক্রেনের বীর হিসাবে মরণোত্তর স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এরইমধ্যে রুশ সেনারা কিয়েভের পার্লামেন্ট থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার উত্তরের শহর ওবোলনে ঢুকে পড়েছে। মন্ত্রণালয় রুশ সেনাদের শত্রু হিসাবে উল্লেখ করে তাদের ঠেকাতে ককটেল তৈরির জন্য কিয়েভের বাসিন্দাদের অনুরোধ জানিয়েছে। তাদের নিরাপদে থাকতেও বলা হচ্ছে। টুইটে বলা হয়, ‘বাসিন্দারা, সতর্ক হোন। বাড়ি থেকে বের হবেন না।’ ইউক্রেনের সেনাবাহিনীও গণমাধ্যমকে বলেছেন, রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে দিমার ও ইভানকিভ এলাকায় রুশ সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ চলছে। ওই এলাকায় রাশিয়ার বেশ কিছু সাঁজোয়া যান ঢুকে পড়েছে। রাশিয়ার সেনাবাহিনী যাতে কিয়েভের দিকে আর এগোতে না পারে সে জন্য তেতেরিভ নদীর সীমান্তবর্তী একটি সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে ইউক্রেনের সেনারা। দ্বিতীয় দিনে রাশিয়ার আরও একটি বিমান ভূপাতিত করেছে বলেও দাবি করে তারা। ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়া ৩৩টি বেসামরিক জায়গায় হামলা চালিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অ্যান্তন হেরাসচেনকো সতর্কতা জারি করে বলেছেন, আজকের দিনটি খুবই কঠিন। রাশিয়া উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে কিয়েভে ঢোকার চেষ্টা করছে। ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র রাশিয়ার হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। গোয়েন্দা সংস্থার ওই সূত্রটি বলছে, রাশিয়া কিয়েভের বিমানবন্দর দখল করতে চায়।
কিয়েভের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থা নষ্ট করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে রাশিয়ার। মন্ত্রিসভা, পার্লামেন্টের মতো সরকারি ভবনের নিয়ন্ত্রণও নিতে চাইবে তারা। রাশিয়া জার্মানির মতো ইউক্রেনকেও পূর্ব ও পশ্চিম দুই ভাগে ভাগ করতে চায়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, কিয়েভের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হোসটোমেল বিমানঘাঁটি দখল করে নিয়েছে তারা। এই অভিযানে ইউক্রেনের স্পেশাল ইউনিটের ২০০ সেনা নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘আমরা একা আমাদের দেশকে রক্ষার জন্য লড়াই করছি। অতিতের মতোই বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো দূর থেকে শুধু সবকিছু দেখে যাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞায় কি রাশিয়ার ওপর কোনো প্রভাব পড়েছে? আমরা আকাশে যে শব্দ শুনছি ও যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট নয়। সহিংসতা নিরসনে ও হামলা বন্ধের জন্য রাশিয়াকে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেই হবে। সেটা এখন হোক বা পরে। যত তাড়াতাড়ি আলোচনা শুরু হবে, রাশিয়ার ক্ষতি তত কম হবে। হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের দেশ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
অগ্রসর হতে থাকা রুশ বাহিনীর হাতে কয়েকদিনের মধ্যেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পতন হবে বলে আশঙ্কা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। দেশটির সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন নিউজউইককে তিন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৯৬ ঘণ্টাতেই কিয়েভের পতন হবে। আর তার এক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনের নতুন নেতৃত্ব ঠিক করা হবে। ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ জাতিসংঘের : যুদ্ধের ফলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইউক্রেনের মানুষের সাহায্যার্থে ২০ মিলিয়ন ডলার (১৫০ কোটি টাকা) বরাদ্দ করা হয়েছে।  গুতেরেস বলেন, প্রত্যেক দেশ যে নীতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি নিয়েছিল, এক দেশের অন্য দেশকে আক্রমণের মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হয়েছে। এটা ঠিক নয়, এটা সনদের বিরোধী, কিন্তু এটা আর ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না। জাতিসংঘ বলছে, এরইমধ্যে অন্তত এক লাখ মানুষ যুদ্ধের সহিংসতা থেকে বাঁচতে ঘর ছেড়েছে। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী দেশ পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও মলদোভায় শরণার্থী পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল রাশিয়া : ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাশিয়া। তবে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুতিন প্রশাসন। আক্রমণ ও বিক্ষোভের প্রথমদিনই গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ১ হাজার ৮০০ জনকে। সেন্ট পিটার্সবার্গ ও ইয়েকাটেরিনবার্গের রাস্তায় নেমে ক্ষোভ জানিয়েছেন শত শত মানুষ। প্রতিবেশী দেশে আক্রমণের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও। মস্কোর একটি সরকারি থিয়েটারের পরিচালক ইয়েলেনা কোভাল্লায়া ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘একজন খুনির জন্য কাজ করা ও তার থেকে অর্থ নেওয়া সম্ভব নয়।’
দখল নয়, ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করা হবে-রাশিয়া : রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইউক্রেন পুরোপুরি দখল করে নেওয়ার ইচ্ছে নেই রাশিয়ার। মস্কো শুধু ইউক্রেনকে সামরিকভাবে নিরস্ত্র করতে চায়। এজন্য ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে ক্রেমলিন। তিনি বলেন, দেশটিকে এখন নিজেদের ভাগ্য বেছে নিতে হবে। লাভরভ বলেন, ‘সাবেক যুগোস্লাভিয়া, ইরাক ও লিবিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো আগ্রাসন চালিয়েছিল। গণতন্ত্রের নামে এসব আগ্রাসনে হাজারও নিরস্ত্র মানুষের প্রাণ গেছে। পশ্চিমারা ইউক্রেনের হাতেও অস্ত্র তুলে দিয়েছে। তাই রাশিয়া দেশটিকে নিরস্ত্র করবে। অস্ত্র ত্যাগ করলে রাশিয়া আলোচনা করতেও প্রস্তুত বলে জানান তিনি। ক্ষমতা নিতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর প্রতি পুতিনের আহ্বান : জেলেনস্কি সরকারকে উৎখাত করে নিজেদের হাতে ক্ষমতা নেওয়ার জন্য ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তিনি ইউক্রেনের বর্তমান নেতৃত্বকে ‘সন্ত্রাসী’ ও ‘মাতালচক্র’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটা সবাই জানে তারা কাদের পরামর্শে চলে। তারা মূলত আমেরিকার উপদেশ ও পরামর্শে চলছে।
এখন কথা হচ্ছে- যে যার পরামর্শেই চলুক, কিন্তু বন্ধ হোক যুদ্ধ। বিশ^ব্যাপী আলোর পথে চলতে চাই বলে মনে করি- ‘যুদ্ধ বন্ধ হওয়াটা এখন সবার আগে প্রয়োজন। প্রয়োজন ইউক্রেনের মত অবিরত সম্ভাবনার পথে অগ্রসর একটি দেশে স্বাধীনভাবে এগিয়ে চলা অব্যহত রাখতে যুদ্ধময় বর্তমান নিষিদ্ধ করা হোক। বন্ধ করা হোক বিশ^ময় অস্ত্র তৈরির ধ্বংসযজ্ঞ, বন্ধ হোক কালোর পথে হাঁটা। মানুষ শান্তিতে থাকবে, এটাই আমার মত শত শত হাজার হাজার লাখ লাখ কোটি কোটি সচেতন মানুষের প্রত্যাশা-প্রত্যয়… মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.