মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৪৬ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী ওয়াসার পানির দাম তিন গুণ বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। রোববার দুপুরে নগরের হড়গ্রাম এলাকায় সাংসদের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ বাদশা বলেন, পানির উচ্চমূল্য আগামী ১ মার্চের মধ্যে স্থগিত না করা হলে তিনিও মিছিলে যোগ দেবেন। এ নিয়ে বৃহৎ আন্দোলন করে তারা রাজশাহী ওয়াসা ভবন ঘেরাও করবেন।
তিনি আরও বলেন, ওয়াসা বিভিন্ন কৌশলে পানির দাম তিন গুণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করেছে। ওয়াসা একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এখন দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে।
ওয়াসা ভাবছে, তাদের লাভ নাকি ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু ওয়াসা একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। জনগণকে সুপেয় পানি সরবরাহ করা তাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ। সারা দেশের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এখন দানবে পরিণত হয়েছে। তাঁরা ওয়াসাকে দানব হিসেবে দেখতে চান না।
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাদশা বলেন, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ যেসব সামাজিক সংগঠন ওয়াসার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে, সাংসদ হিসেবে, মানুষের জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি এতে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন। ওয়াসা যেসব কথা বলছে, তা অর্থহীন। ওয়াসার উচিত হবে, অনতিবিলম্বে তাদের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা। তাঁরা সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চান না।
কিন্তু সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান যদি অযৌক্তিক কোনো কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে যদি জনগণ আন্দোলন গড়ে তুলে, সেই আন্দোলনকে তিনি নিজে সমর্থন করবেন। ওয়াসার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদের আন্দোলনের মিছিলে তিনি এখনো যাননি। আগামী ১ মার্চের পর যে মিছিল হবে সেই মিছিলে তিনি সামনের কাতারে থাকবেন। ১ মার্চের আগেই যেন ওয়াসা উচ্চমূল্য বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
ফজলে হোসেন আরও বলেন, এর আগেও বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক খেলা হয়েছে। এখন ওয়াসা নিয়ে খেলা হচ্ছে। জনজীবনে ব্যাপক দুর্গতি দেখা দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। এই মূল্যবৃদ্ধি পবিত্র রমজান মাসে এসে কোথায় ঠেকবে, তা তাঁদের জানা নেই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফজলে হোসেন বলেন, পানির দাম বাড়ানো নিয়ে গণশুনানি হতে হবে। রাজশাহীর জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর সঙ্গে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কোনো কথাই বলেনি। শুধু তাই নয়, এখানকার প্রত্যেক মানুষ কথা বলবে, তারা যে যুক্তি দিবে তার ভিত্তিতে পানির দাম বাড়ানো হতে পারে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো লাভ করল নাকি ক্ষতি হলো, সেই প্রশ্নে পাটকল, চিনিকল, সুতাকলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলো। এখন আরও অনেক কিছু বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। জাতির জনকের এই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না। সংবিধানেও নেই এই দৃষ্টিভঙ্গি। সংবিধান থেকে যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হয়, তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক ও জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক।
রাজশাহী ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, নগরে ৮০ শতাংশের বেশি মানুষকে পানি সরবরাহ করে রাজশাহী ওয়াসা। বর্তমানে প্রতি এক হাজার লিটার পানি উত্তোলন, পরিশোধন ও সরবরাহে ওয়াসার খরচ হয় ৮ টাকা ৯০ পয়সা।
এত দিন আবাসিক সংযোগে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ধরা হতো ২ টাকা ২৭ পয়সা, দাম বাড়িয়ে তা করা হয়েছে ৬ টাকা ৮১ পয়সা। বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে একই পরিমাণ পানির মূল্য ধরা হয়েছে ১৩ টাকা ৬২ পয়সা। বাণিজ্যিকে পানির দাম আগে ছিল ৪ টাকা ৫৪ পয়সা।
গত ১ জানুয়ারি রাজশাহী ওয়াসা পানির এই বাড়তি মূল্য ঘোষণা করে। আবাসিক ও বাণিজ্যিকে পানির এই দাম ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে।