বিশেষ প্রতিনিধি :
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বড়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ে ২১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জেলা রাজশাহীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী ২ নম্বর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী সামসুজ্জামান। মামলা নম্বর ১৯সি/২০২১, ধারা ৪০৬/৪২০ দঃবিঃ। বর্তমানে মামলাটি চলমান থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার ও আইনকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে ২১ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করেছেন স্কুল সভাপতি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি মোতাবেক নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে ২১ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। গত ৩ ফেব্রুয়রী বুধবার উপজেলার বড়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক একই উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক উপজেলার রায়ঘাটি ইউনিয়নের বড়াইল গ্রামের আতাউর রহমান। নন জুডিশিয়াল স্ট্যামে ২১ লাখ টাকা চুক্তি করে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। নিয়োগটি দিয়েছে রায়ঘাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। সম্প্রতি ওই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মোহনপুর উপজেলার বড়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ থেকে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর অবসর নিয়েছে সোহরাব আলী। প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য হওয়ার পর গত বছরের ৭ অক্টোবর স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশ ও জাতীয় দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তি মতে জেলার বাগমারা উপজেলার রমপাড়া তকিপুর গ্রামের সেফাতুল্লা সরদারের ছেলে সামসুজ্জামান (৪৩) কে বড়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার লোভ দেখান অভিযুক্ত চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বেলা অনুমান ১১টার দিকে চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের নিজ বাড়িতে ৫০ টাকা মূল্যের ৬টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যামে লিখিত দিয়ে স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে নগদ ১৫ লাখ টাকা বুঝে নিয়ে চাকুরি দিবেন বলে অঙ্গীকার নামায় নিজ নাম স্বাক্ষর করেন। যেখানে তাহার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ৮৬৬৮৪৬৪৭১৫। অঙ্গীকার নামায় যে ৬টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছে তার নম্বর কট ৬৯১৩৩৬১ হইতে ৬৯১৩৩৬৬। শর্ত মতে অর্থের বিনিময়ে ১ মাসের মধ্য সামসুজ্জামানকে বড়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হবে। কিন্ত সময়ের বিড়ম্বনায় আবেদনকারি তার জামানত ১৫ লক্ষ টাকা ফেরত চাই। কিন্ত স্কুল সভাপতি বিভিন্ন টালবাহানাসহ টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এরই মধ্যে শূন্যপদের বিপরীতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে একই উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান সঙ্গে ২১ লাখ টাকায় চুক্তি করেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে অঙ্গীকার নামা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে একযোগে অগ্রিম ২১ লাখ বুঝে নিয়ে নিজ নাম স্বাক্ষর করেন সভাপতি খলিলুর রহমান ।
নিয়োগ পরীক্ষার ৩ দিন আগে শিক্ষক আতাউর রহমানের কাছে প্রবেশ পত্র পাঠানো হয়। লিখিত পরীক্ষায় সবার চেয়ে বেশী নম্বর পেতে পরীক্ষার আগের দিন রাতে সভাপতির নির্দেশে তার কাছে প্রশ্নপত্র পাঠিয়েছেন ডিজির প্রতিনিধি মোহনপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন। নিয়োগে ৭জন আবেদন করলেও পরীক্ষার জন্য তিনিসহ ৪জন অংশগ্রহণ করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আতাউর রহমান দলীয়ভাবে জামায়াত পন্থী। শিক্ষক আতাউর রহমানকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছাড়াও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ডিজির প্রতিনিধি ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যগনসহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা নিয়োগ বাণিজ্যের টাকার ভাগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক শামসুজ্জামান মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য সভাপতির সঙ্গে ১৫ লাখ টাকা চুক্তি হয়েছিল তার সাথে। আর সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আঃ খালেক মন্ডল বলেন, তিনি স্কুল সভাপতির ফাদে পা দেয়নি বলে তিনি তাকে জোর করে বেআইনীভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে স্কুলের সহকারী শিক্ষক আঃ মজিদকে গত ২১ জানুয়ারী ২১ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। তার কথায় একমত হয়নি বলে তিনিসহ ও তার বড় ছেলে বুলবুল চাকরি চুত করবে এবং তাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসির কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
রায়ঘাটি ইউপি এলাকার বড়াইল গ্রামের মৃত বিরু মন্ডলের ছেলে ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আঃ হামিদ স্বাক্ষরিত ও একই দপ্ততরে ৫০জন এলাকাবাসি স্বাক্ষরিত আলাদা আলাদা অভিযোগের মাধ্যমে জানা গেছে, বর্তমান সভাপতি স্কুলের বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য স্কুল প্রাঙ্গণে বহু বছরের পুরাতন ২৫টি মেহগনি, ৫টি এন্টিকড়াই ও ১০টি ছোট বড় তালগাছ সভাপতি বিক্রয় করেছেন যার আনুমানিক মূল্য ৩লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অথচ তিনি রেজুলেশন কম মূল্য দেখিয়ে স্কুল ফান্ডে টাকাগুলো জমা না দিয়ে আত্মসাত করেছেন। অপরদিকে বড়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন চারতলা বিশিষ্ট একাডেমীক ভবন আনার জন্যে খরচ হিসাবে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে ৩লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে বিভিন্ন অযৌক্তিক ভুয়া ভাউচার উল্লেখ করে টাকাগুলি আত্মসাৎ করেছেন।
এবিষয়ে বড়াইল উচ্চ বিদ্যালয় সভাপতি এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এছাড়া শিক্ষক আতাউর রহমানের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয়নি। সাক্ষাতে দেখা করে এই প্রতিবেদককে চা-পানের অনুরোধ করেন তিনি।
এবিষয়ে মোহনপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নিয়োগ কমিটির সদস্য মুকতাদির আহম্মেদ বলেন, প্রধান শিক্ষক পদে চার জন অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে আতাউর রহমান নামে এক শিক্ষক লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে টাকার বিনিময়ে নিয়োগের বিষয়টি আমি জানি না। এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট কমিটি বলতে পারবে। আজকের তানোর