শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:৪৫ am

সংবাদ শিরোনাম ::
মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য কোথাও বসাতে না পেরে বিক্রি করলেন ভাঙারির দোকানে রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই : আনন্দবাজারকে জামায়াতের আমির আগামী তিন মৌসুমের জন্য আইপিএলে যে ১৩ ক্রিকেটারের নাম দিল বিসিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ থামিয়ে রাখেননি অভিনেত্রী হিনা খান নগরীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১ জন গ্রেপ্তার তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাঁচার রোধে হট্টগোল মারপিট দুর্গাপুরে হোজা নদী পুন:খনন ও দখলমুক্ত দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলিপি রাজশাহীতে সমন্বয়ক পেটানোর ব্যাখ্যা দিল মহানগর ছাত্রদল আঘাতের দাগে সম্পর্কের রূপান্তর ! রাজু আহমেদ তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না নগরীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত আগামী ২৯ নভেম্বর খুলছে রাজশাহী সুগার মিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে স্মরণসভা রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১১ বাগমারা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেবের ইন্তেকাল তানোরে মসজিদের এসি অফিসার্স ক্লাবে, ইমামের অর্থ আত্নসাৎ প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তানোরে বিএনপির কর্মীসভা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮ জন গ্রেপ্তার লীজকৃত পুকুর দখল, মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ
বিড়ম্বিত হচ্ছেন অসহায় প্রতিবন্ধীরা : পরিকল্পনামন্ত্রী

বিড়ম্বিত হচ্ছেন অসহায় প্রতিবন্ধীরা : পরিকল্পনামন্ত্রী

এম শামসুল আলম : বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৫০০ ডলার। তবু প্রতিবন্ধীদের ভাতা বছরে ৯ হাজার) টাকা।  বলেছেন খোঁদ পরিকল্পনামন্ত্রী। সোমবার এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একথা বলেন। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেলেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ভাতা হিসেবে বছরে মাত্র ৯ হাজার টাকা পান। এটি অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জাজনক।

এছাড়া প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের দাবী নিয়ে কথা বলেন তিনি। এসময় প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোকে আশ্বস্ত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এবং দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে যৌথভাবে এবং মানুষের জন্য ফাউণ্ডেশন ও ইউকেএইড এর সহায়তায় আয়োজিত ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউণ্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক অ্যালবার্ট মোল্লা ওয়েবিনারে পজিশন পেপার উপস্থাপন করেন এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বর্তমান অধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘যদিও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাজেট বরাদ্দ মূলত নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের (পিডব্লিউডি) সংখ্যার বিষয়ে কোন নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই।’ বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের মধ্যেও অসঙ্গতি রয়েছে।
যেমন ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী তাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৪১ শতাংশ। যেখানে ২০১০ গৃহস্থালী আয় ও ব্যয় জরীপ (এইচইআইএস) অনুসারে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ’, একথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া অর্থও প্রকৃত চাহিদার তুলনায় খুবই অপর্যাপ্ত।’ উদাহরণস্বরূপ, বর্তমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাজেটের মাত্র ২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ, যা মোট বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ।’ ‘বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মতামত এবং তাদের কার্যকর অংশগ্রহণ প্রতিফলিত হয় না। এছাড়া সব ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে তারা অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রতিবন্ধীরা কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য সরকারী সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অ্যালবার্ট তাদের প্রতিবন্ধকতার মাত্রা অনুযায়ী ভাতা বৃদ্ধি এবং ২৪ ঘণ্টার সেবাদানকারীদের জন্য একটি পৃথক ভাতা এবং বিমার সুপারিশ করেন।
তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষায়িত এবং মানসম্পন্ন সহায়ক ডিভাইসের পরামর্শ দিয়েছেন এবং সেগুলো আমদানী করার ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন।
‘একইসঙ্গে, প্রতিটি প্রতিবন্ধী শিশুকে অবশ্যই সরকারী উপবৃত্তির আওতায় আনতে হবে এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে হবে।’
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটির (সিএসআইডি) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে মাসিক ৭৫০ টাকা ভাতা পায়, যা দৈনিক ২৫ টাকা।’
তিনি জানতে চান, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় যেখানে ২ হাজার ৫০০ টাকা, সেখানে একজন মানুষ দৈনিক ২৫ টাকা দিয়ে কীভাবে বাঁচবেন?
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী নাজরানা ইয়াসমিন হীরা স্বাগত বক্তব্যে বলেন; ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ স্যোসাল সেফটি নেট বাজেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয় বরং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরও বেশী জোর দিতে হবে, যাতে তারা স্বনির্ভর হতে পারে।’
সরকারীভাবে আদালতে সাংকেতিক ভাষার দোভাষীদের ব্যবস্থা করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একই সময়ে আমাদের অবশ্যই তাদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ এবং প্রবেশাধিকারযোগ্য অবকাঠামোর তৈরীতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’
অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)-এর জাতীয় পরামর্শক (অ্যাক্সেসিবিলিটি) ভাস্কর ভট্টাচার্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া টকিং বইয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং তাদের জন্য এটি সহজলভ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারকে অনুরোধ করেন। ন্যাশনাল ফোরাম অব অর্গানাইজেশনস ওয়ার্কিং উইথ দ্য ডিজঅ্যালড (এনএফওডব্লিউডি)-এর সেক্রেটারী জেনারেল ডা. সেলিনা আক্তার বিশেষ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নে বরাদ্দের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অবহেলার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নতির জন্য মন্ত্রণালয়ের আরও বেশী কাজ করা উচিত এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। যাতে তারা উদ্যোক্তা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।’ আলবার্ট মোল্লার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডেইলি স্টারের সাংবাদিক শামসুদ্দোজা সাজেন, সুইডি বাংলাদেশের সভাপতি জোওয়াহেরুল ইসলাম মামুন, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিস্যাবিলিটি নেটওয়ার্কের সিইও মুর্তেজা আর খান প্রমুখ।
জাতীয় তৃণমূল প্রতিবন্ধী সংস্থা:-
বিভিন্ন রকমের শারীরিক সীমাবদ্ধতা সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা নিয়ে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে অমিল রয়েছে বলে মনে করেন “জাতীয় তৃণমূল প্রতিবন্ধী সংস্থা।  সংস্থাটি মনে করে সরকারী পর্যায়ে প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তিদের সঠিক পরিসংখ্যান নির্ধারণে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ না থাকায় তাদের কল্যাণে কার্যকর উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণেও বিরাট চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তি এবং প্রতিবন্ধিতা, সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, পরিবহন, প্রবেশগম্যতা, সার্বিক অবকাঠামো, সম্পদের ওপর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতির কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মনে করে সংস্থাটি।
সেই সঙ্গে প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তিদের জন্য আইন প্রণয়ন, কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন হওয়ার পরও বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে সবধরনের প্রতিবন্ধিতার বিষয়টিকে সমভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়না বলেও মন্তব্য রয়েছে। তবে শুধু মাত্র অটিজম সর্ম্পকিত কার্যক্রমে তুলনামূলকভাবে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয় বলেও জানায় সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।
বাজেট :
রাষ্ট্রীয় বাজেটে প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ বাস্তবসম্মত ও যথেষ্ট নয় এবং যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তাও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে যথাযথভাবে সেসব মানুষের কাছে পৌঁছায় না। নীতিগত ও আইনগতভাবে গুরুত্ব দেওয়া হলেও বাস্তবে প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তিদের কল্যাণে চলমান কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে এবং তা অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়।
এছাড়াও, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়মিত তদারকি ও নিরীক্ষা না হওয়ায় সেবা প্রদান কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে অধিকাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মৌলিক মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ এবং টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন লক্ষ্য অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ ও উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তিতে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও অংশগ্রহণের ঘাটতিও রয়েছে।
#গত ০৩/০৬/২০২১ তারিখ মহান জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন করতে দেখেছিলাম, সরকারের সেই ঘোষিত বাজেটে প্রতিবন্ধী মানুষের চাহিদার প্রতি কোন গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হয়নি। সেখানে প্রায় ০৬ (ছয়) লক্ষ ০৩ (তিন) হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছিল। যা আকারে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাজেট।
আসলে বাজেট নিয়ে আলোচনা করার পুর্বে আমাদেরকে জানতে হবে বাজেট আসলে কী?
#বাজেট হলো একটি দেশের অর্থব্যবস্থাপনার একটি দিকনির্দেশনা।
প্রস্তাবিত বছরের আয়-ব্যয়ের একটি ছক।
কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে?
কোন খাত থেকে কত টাকা আয় হবে?
কত টাকা কর আরোপ করা হবে? ইত্যাদি-ইত্যাদি।
✓প্রয়োজনীয় প্রতিবন্ধী মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে বাজেটঃ-
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এবং প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়, বরং সংখ্যাটা অনেক। এই বিপুল সংখক জনগষ্ঠীকে বাদ দিয়ে দেশ ও জাতীর উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়।
এসডিজি লক্ষমাত্রা অর্জন ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন সাধনের জন্য প্রতিবন্ধী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন অপরিহার্য।
প্রতিবন্ধীদের জীবন-মান উন্নয়নে বাজেটের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য বাজেট পর্যাপ্ত পরিমাণে বরাদ্দ দেওয়া এবং যথাযথ দিক-নির্দেশনা থাকা অত্যাবশ্যক ও অতিব জরুরী।
প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য কি ছিল সেই প্রস্তাবিত বাজেটে?
বাজেটে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য উল্লেখ যোগ্য তেমন কিছুই ছিলনা! যা আছে তা পুর্ববর্তী বাজেটের অনুরূপ বা গতানুগতিক! যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাকর! করোনা পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক বাস্তবতা বিবেচনায় প্রতিবন্ধীদের জন্য অন্যান্যদের মত বাড়তি সুবিধা যুক্ত বাজেট হওয়া উচিৎ ছিল সাম্প্রতিক সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠ। যা করা হয়নি!
কি হলে বাজেট কে প্রতিবন্ধী বান্ধব বলা যাবে :
১। প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ থাকতে হবে।
২। শিক্ষা উপবৃত্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল তারাও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। (প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তাকে শিক্ষা বৃত্তি বা    উপবৃত্তি দিতে হবে, যা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে)
৩। প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। অস্বচ্ছল ও কর্মসম্পাদনে সক্ষম নয়, এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য পর্যাপ্ত পরিমান ভাতা প্রদান করতে হবে। ভাতার পরিমান হবে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা। যাতে প্রতিবন্ধী একজন মানুষ স্বাচ্ছন্দে জীবন-যাপন করতে পারে।
(সার্বজনীন ভাতার কোন প্রয়োজন ও যৌক্তিকতা নেই।)
৫। করোনার কারণে যেসব প্রতিবন্ধী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছেন এবং যেসব প্রতিবন্ধী আগে থেকেই কর্মহীন আছেন, তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। যাতে প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন হয় এবং সে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকতে পারে।
৬। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরকারী-বেসরকারী ও শ্বায়িত্বসায়িত প্রতিষ্ঠানে ১০% কোটার ব্যবস্থাটি বাস্তবায়ন করতে হবে।
৭। প্রতিবন্ধী মানুষের চিকিৎসা প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
। প্রতিবন্ধী মানুষদের আয়বৃদ্ধি মূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদে পরিন্ত হতে পারে।
৯। প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রবেশগম্যতা বা চলাচলের নির্বিঘ্নতা থাকতে হবে।
যাতে প্রতিবন্ধী একজন মানুষ নির্বিঘ্নে নিরাপদে চলাচল করতে পারে।
১০। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় গুলোতে প্রতিবন্ধী মানুষের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫০% শিক্ষক/কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিতে বরাদ্দ থাকতে হবে।
১১। প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রবেশগম্যতায় চলাচলের নির্বিঘ্নতায় সকল ধরনের প্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক উপকরণ পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকতে হবে।
যাতে প্রতিবন্ধী একজন মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে।
১২। প্রতিবন্ধীতা প্রতিরোধ, প্রতিকার ও তাদের অধিকার সম্পর্কে গণসচেতনতা তৈরীতে বিশেষ বরাদ্দ রাখা।
১৩। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খাদ্য সহায়তার আওতায় আনার জন্য সকল জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে বাজেট রাখা।
১৪। উপকু্ল, চরাঞ্চল, পাহাড়ী এলাকা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তহবিল ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্ধ রাখা।
১৫। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চাহিদা মাফিক ও যোগ্যতা অনুসারে পর্যায়ক্রমে কারিগরী জীবনমূখী শিক্ষার জন্য বিশেষ বরাদ্ধ রাখা।
১৬। প্রতিবন্ধী সণদপত্র প্রদান কার্যক্রমের জন্য জেলা/উপজেলা ভিত্তিক বাজেট বরাদ্ধ রাখা।
১৭। সরকারী সহায়তায় গৃহহীন প্রতিবন্ধীদের জন্য গৃহ নির্মাণ কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্ধ রাখা।
১৮। নির্যাতিত প্রতিবন্ধী নারী ও হতদরিদ্র অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ বাড়তি বরাদ্ধ রাখা।
১৯। জেলা বা উপজেলা ভিত্তিক ক্রাস কর্মসূচীর রাখা ও ক্রাস প্রোগ্রামের ভিত্তিতে এলাকা ভিত্তিক কারিগরী প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা।
২০। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর গঠনে আলাদা বাজেট বরাদ্ধ করা।
২১। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুবিধার্থে সকল সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ঈশারা ভাষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এর জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্ধ করা।
২২। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্ধ রাখা।
২৩। এলাকা ভিত্তিক কেয়ার গিভার প্রশিক্ষণের জন্য বাজেট বরাদ্ধ রাখা।
২৪। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির আইনী সহায়তা লাভে বাজেটে বিশেষ বরাদ্ধ রাখা।
২৫। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব-সংগঠনের দক্ষতা ও অর্থণৈতিক স্বক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ বরাদ্ধের ব্যবস্থা রাখা।
২৬। প্রতিবন্ধিতা রোধে কার্যক্রম সচল করা এবং এর জন্য বিশেষ বরাদ্ধ রাখা।
২৭। প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও শহরে সমাজ সেবা কার্যালয়ে অন্তত একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগের বাজেট বরাদ্ধ রাখা।
২৮। প্রতিটি সরকারী-বেসরকারী ও শ্বায়িত্বসিয়িত এবং হাট-বাজারসহ সৌচাগার সমূহে র‌্যাম্প এর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২৯। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ বাস্তবায়ন করতে পর্যাপ্ত বাজেট রাখা।
৩০। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্মন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করা এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্ধ রাখা। এছাড়াও প্রতিবন্ধী মানুষদের অনেক-অনেক দ্বাবী বা প্রস্তাবনা রয়েছে; সেগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারকে আমরা বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি। প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতিটি অধিকার নিশ্চিত করা হোক; সেই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করছি। কেননা, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মানে একজন নয়, বরং দুর্দশাগ্রস্থ একটি পরিবার।
মূল কথা :-
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির এই সংখ্যা কমপক্ষে এককোটি আশিলক্ষ,
যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯.৭ শতাংশ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বেসরকারী সংগঠনগুলো এই সংখ্যা শতকরা ১৫ ভাগ বলে দ্বাবী করছেন।
সংখ্যা যাই হোক না কেন; এসব প্রতিবন্ধী মানুষদের বেশীর ভাগই শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, চাকুরী, প্রবশগম্যতা, বাসস্থান ও সামাজিক সহায়তার মত মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার অনেক কথা আমরা শুনে আসছি।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় বড় পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগের কোনটাই সম্ভব হবে না প্রায় দেড় কোটির উর্ধ্বে প্রতিবন্ধী মানুষকে মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত করে!!
#এবিষয়ে মহাত্মা গান্ধীর উক্তিটি স্মরণ করা যেতে পারে- ‘একটি জাতী তার দুর্বলতম সদস্যদের সঙ্গে যে আচরণ করে; তা দিয়ে সেই জাতীর মহত্ত্বকে পরিমাপ করা হয়।’
✓✓২০২২ সালে দাঁড়িয়ে আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারছি না যে, আমরা জাতী হিসেবে মহানুভব!!!
কারণ; আমরা এখনও প্রতিবন্ধী মানুষদের মৌলিক অধিকারগুলোই প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি।
বরং আজও প্রতিবন্ধী মানুষগুলো বহুমাত্রিক লাঞ্ছনা, বঞ্চনার, অত্যাচার, অনাচার ও নির্যাতনের শিকার।
আমরা প্রতিবন্ধীরা প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছি, কিন্তু দারিদ্রতার কষাঘাত, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার চক্র থেকে বের হয়ে আসতে পারছিনা।
##কল্পনা করুন উপকূলীয় একজন প্রতিবন্ধী হতদরিদ্র নারীর কথা;
প্রতিবন্ধিতার বিরাট বোঝার সঙ্গে-সঙ্গে তাকে লড়াই করতে হচ্ছে দারিদ্রসহ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বিভিন্ন সমস্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাদেরকে কেন্দ্রে রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা না করলে কোন দিনই তারা হয়তো বঞ্চনামুক্ত জীবনযাপন করতে পারবেন না।
✓✓আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি কি খুব একটা এগিয়েছে??
একটা ছোট্ট উদাহরণ দেইঃ-
দশম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে এখনও পড়ানো হচ্ছে ‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন’ প্রবাদটি।
যে ছেলেমেয়েগুলো এখন বড় হচ্ছে, তারা যদি এখনও প্রতিবন্ধিতা বিষয়টিকে একটি বিশেষ পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করতে না শিখে, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে পড়াশোনা করে, তাহলে সমাজ ও সংস্কৃতির এই অসুখ সারবে কীভাবে? আমরা বেশীর ভাগ মানুষই এখন ভাবি যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের বোঝা। আর এদেরকে সাহায্য-সহায়তা করতে হবে দান খয়রাতের মাধ্যমে।
এমনকি বেশীর ভাগ প্রাইভেট সেক্টর কোম্পানীগুলো মনে করে প্রতিবন্ধীদের জন্য চাকুরীর সুযোগ করে দেওয়াটা তাদের মূল ব্যবসার অংশ নয়। এটি তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা। প্রতিবন্ধিতা নিয়ে আমাদের যে নেতিবাচক মন-মানসিকতা; তা আসলে সমাজ ও সংস্কৃতির অনেক গভীরে লুকিয়ে থাকা এক অসুখ। সেই অসুখ সারাতে দরকার বহুমাত্রিক উদ্যোগ। সেই উদ্যোগগুলো মূলত আসতে হবে আমাদের নীতি প্রণেতাদের কাছ থেকে।
✓✓✓আমাদের রাষ্ট্রই বা কতটা সক্রিয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য?
২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষার জন্য একটি আইন হয়েছে বটে, কিন্তু তার কোন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নেই। রাজধানী ঢাকাসহ অনেক শহরের রাস্তাঘাটে কোন হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী চলতে পারে কি? ফুটপাতে প্রয়োজনীয় র‌্যাম্প তো নেই-ই, কোথাও কোথাও স্টিলের বার দিয়ে তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সাইকেল ফুটপাতে ওঠা তো বন্ধ হলো, কিন্তু একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী তার হুইল চেয়ার নিয়ে উঠবেন কীভাবে? অবৈধ চলাচল রুখতে গিয়ে ফুটপাত ব্যবহারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবাধ চলাচলের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই বিষয় নিয়ে ভাববার কেউ কি আছে? দেশের রেল ব্যবস্থার কথা চিন্তা করুন। দেশের কয়টা রেল স্টেশনে প্রতিবন্ধী-সহায়ক র‌্যাম্পের ব্যবস্থা আছে?
ট্রেনে উঠবার জন্য তো পোর্টেবল র‌্যাম্পের ব্যবস্থাও করা যায়। নতুন ট্রেনের বগি কেনার বা বানাবার সময় কি প্রতিবন্ধীদের কথা ভাবা যায় না?
দেশের শহর-বন্দরগুলিতে গণপরিবহন ব্যবস্থা কি প্রতিবন্ধিতাবান্ধব?
দেশের কোন শহরের কয়টা অফিসে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য র‌্যাম্প আছে? প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরগুলোও আমাদের জানা!! অথচ বর্তমান বিল্ডিং কোডে র‌্যাম্পসহ প্রবেশ সুবিধার মৌলিক বিষয়গুলো রাখা বাধ্যতামূল।
যা মানবসম্পদ উন্নয়নে সরকারকে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতাই অর্থনৈতিক মানদণ্ড উত্তরণে সহায়ক হবে।।
ফিরে দেখা প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩
প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন-২০১৩ আইনে কঠোর শাস্তির ধারা সমূহঃ- ৩১,৩৬, ১৯,২৩ নং ধারার আওতায় এনে ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা জরিমানা ও ০৩ (তিন) বছর জেল এর বিধান দেয়া আছে, আদালতে এই অপরাধীদের জন্য।
যদি আমাদের সমাজে কোন মানুষ অমানুষের মত বা সন্ত্রাসীদের মত পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক, বা রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিবন্ধীদের প্রতি অমানবিক অত্যাচার, অনাচার, ব্যভিচার, নির্যাতন, নিপিড়ন, ধর্ষন, যৌন হয়রানী, জোরপূর্বক যৌনকর্মে নিয়োগ, জোরপূর্বক ভিক্ষাবৃত্তি করানো, অন্যায় ভাব তাদের ঘড়-বাড়ী, জমি-জমা, দোকান-কারখানা অথবা প্রতিষ্ঠান জবরদখল করে, জিনিস পত্র কেড়ে নেয়, অমানবিক আচরণ করে, অশ্লীল ভাষায় গালি-গারাজ দেয়, যেকোন ভাবে আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি করে থাকে, তাহলে তারা উক্ত আইনের ধারা সমূহে অপরাধী বলে গণ্য হবে।
আসুন; যারা ঐ সমস্ত অপরাধ সংগঠিত করবে, তাদেরকে যেখানে পাবেন; ধরে বাড়ীতে, রাস্তা-ঘাটে, বাজার-হাটে যেখানে পাবেন আপনারা সকলে মিলে এক হয়ে- ঝাপিয়ে পড়ে ঐ অপরাধীদেরকে ধরিয়ে দিন RAB, POLICE এর নিকট।
তারা প্রতিবন্ধীদের সহায়তা নিয়ে, যারা অত্যাচারী-অনাচার, ব্যভিচার অর্থাৎ অন্যায়কারীদেরকে দেশের প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ আইনে কঠোর শাস্তির ৩১,৩৬, ১৯,২৩ নং ধারার আওতায় এনে ০৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা জরিমানা ও ০৩ (তিন) বছর জেল এর যে বিধান দেয়া আছে, আদালতে ঐ অপরাধীদের জন্য অথবা ইকুইটি এণ্ড ট্রাষ্ট আইনের ১৫১ ধারার আওতায় এনে অথবা আইন সহায়তা কমেটির দ্বারা শাস্তির ব্যবস্থা করে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন।
প্রতিবন্ধীদের জীবন রক্ষার্থে ও সম্পদ ফিরিয়ে দিতে এবং ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে ও অধিকার ফিরিয়ে আনতে তারা বদ্ধ পরিকর।
যেহেতু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ নিজেরা কখনও থানা-কোর্ট বা আদালতে যায়নি অথবা প্রয়োজন পড়েনি!!
সমাজের মানুষেরাও মনে করেন তারা কোন দিনও অপরাধীদের ধরিয়ে দিতে পারবেন না বা কোন কিছু পদক্ষেপ নিতে পারবেন না,
তাই থানা-কোর্ট বা আদালতে RAB বা POLICE এর নিকট গিয়ে তাদের অভিযোগ দিতেও পারবেন না।
কারন হিসেবে দেখা যায়; তারা কেউ কেউ, বেশীর ভাগই আর্থিক ভাবে অচ্ছল, অসহায়, তিব্র প্রতিবন্ধীতা ও অবোলা।
তারা আদালত, থানা কিছুই চেনে না, জানে না আইন, POLICE -ও বুঝেনা।
অতএব, পরিবার-পরিজন বা স্থানীয় জনগণ তাদের পক্ষে নিজেরা বাদী হয়ে মামলা করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে সহযোগীতা করতে এগিয়ে আসা উচিৎ বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষকরা। ‘আইনের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্যই আইন’।
লক্ষণীয় : আজ কঠোর আইন থাকায় বাংলাদেশে আর কোন নারীর মুখে এসিড নিক্ষেপ করা হচ্ছে না। তার কারণ; আইনের কঠোর প্রয়োগ হওয়ার জন্য কেউ আর বাংলাদেশে কোন নারীর মুখে এসিড মারার মত জঘন্য অপরাধটি করেননা।
এখন তাহলে কী করা দরকার?
প্রথমেই দরকার প্রতিবন্ধিতা নিয়ে একটি পরিচ্ছন্ন ধারণা তৈরীর। প্রতিবন্ধিতা আসলে বহুমাত্রিক একটা বিষয়।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইন ২০১৩ এ সুনির্দিষ্টভাবে ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার কথা বলা হয়েছেঃ-
১। অটিজম বা অটিজমস্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডারস।
২। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা।
৩। মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা।
৪। দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা।
৫। বাকপ্রতিবন্ধিতা।
৬।বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা।
৭। শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা।
৮। শ্রবণ-দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা।
৯। সেরিব্রাল পালসি।
১০। ডাউন সিনড্রোম।
১১। বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা।
১২। ও অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা।
এই প্রতিবন্ধিতা আবার হতে পারে মৃদু, মাঝারি, চরম বা গুরুতর এবং অতি-চরম বা অতি-গুরুতর। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে নারীর চ্যালেঞ্জগুলো আবার অনেক ভিন্ন এবং বেশি। প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তি নিয়ে পরিকল্পনায় উপরে উল্লেখিত সব বিষয় বিবেচনা করা দরকার। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, প্রয়োজনীয় তথ্যের বড় অভাব। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতার সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং প্রতিটি ধরনের প্রতিবন্ধিতার সঠিক তথ্যভান্ডার আমাদের তৈরী করতে হবে, যা নীতি-প্রণেতাদের সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে। এ বিষয়ে সবচেয়ে সক্রিয় হতে হবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে। পরিসংখ্যান ব্যুরোকে সহায়তা করতে পারে প্রতিবন্ধী নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।
আমাদের নীতি নির্ধারকদের কাছে হয়তো মনে হতে পারে যে, প্রতিবন্ধীদের সমস্যা বহুমাত্রিক এবং অনেক জটিল, তাই এর সমাধানও জটিল। বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা নীতি নির্ধারকরা শুধু কিছু ভাতা প্রদান করেই অনেক কিছু করছেন, ভাবলে বড় ভুল হবে। যদিও বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতার অর্থ অতিনগন্য, যারা পাচ্ছেন তাদের কাছে এটি তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে একটা বড় অর্জন।
কারণ, রাষ্ট্র এগিয়ে আসছে প্রতিবন্ধীদের জন্য। কিন্তু শুধু ভাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়। তাদের অধিকারও সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এ জন্য নীতি-নির্ধারকদের বিবেচনা করা উচিত! কীভাবে মূলধারার উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা যায়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিক্ষার উন্নয়ন কর্মসূচীতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্রেইল শিক্ষক রাখা, শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ইশারা ভাষার শিক্ষক রাখা এবং স্কুলের বিল্ডিং তৈরীর সময় শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রয়োজন বিবেচনায় রাখা। নির্বাচনের সময় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য টেক্সটাইল ব্যালটের ব্যবস্থা থাকা।
প্রতিবন্ধী বিশেষজ্ঞ টম শেক্সপিয়র (যিনি নিজেও শারীরিক প্রতিবন্ধী) একটি বক্তৃতায় বলেছেন- বাংলাদেশে কী করা দরকার এ বিষয়ে তিনি দুটি পথের কথা বলেছিলেন।
প্রথম পথটি হলো- (ক) প্রতিবন্ধী মানুষদের সামনে থাকা অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধিকতাগুলো দূর করা, যাতে সব মৌলিক সেবায় তাদের অভিগম্যতা তৈরী হয়। যারা সেবা দিচ্ছেন তারা যেন প্রতিবন্ধিতা-বান্ধব আচরণ করে সহায়ক পরিবেশ তৈরী করে, যাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সেবা গ্রহণের মানসিক বাধাগুলোও অতিক্রম করতে পারেন। প্রয়োজনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কারিগরী প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করা।
(খ) দ্বিতীয় পথটি হলো- বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। তাদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা বাড়ানো। তারা যেন শুধু সেবা গ্রহণ না করেন। তারা যেন মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, তারা এই সমাজেরই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তারা সমাজের উন্নয়নে অবদানও রাখতে পারেন। এর জন্য দরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই বেশী-বেশী করে রোল মডেল তৈরী হওয়া।
(গ) তৃতীয়ত; প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সবার জন্য একই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করার। ‘টপডাউন’ এবং ‘বটমআপ’ – এই দুই পন্থার সমন্বয় ঘটানোয় গুরুত্ব দিতে হবে।
২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ যে উন্নত এবং কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তরের স্বপ্ন দেখছেন সরকার, সেটা অর্জন করতে গেলে এসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে সমাজের মূল ধারার উন্নয়নে আনতে হবে। সেজন্য দরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকুরী বা আয়ের সুযোগ তৈরী এবং সঠিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে বিনিয়োগ করা। বিনিয়োগ হতে হবে সব সেবায় প্রতিবন্ধীদের অভিগম্যতা তৈরীতে। এসবের জন্য যে অর্থ ব্যয় হবে, তাকে বিবেচনা করতে হবে বিনিয়োগ হিসেবে। এই বিনিয়োগই পারবে আজকে যাদের মনে করা হচ্ছে সমাজের বোঝা; তাদেরকে মানবসম্পদে পরিণত করতে।
আর তা হতে হবে অধিকারভিত্তিক কর্মপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে। প্রতিটি প্রতিবন্ধী মানুষের রয়েছে সব নাগরিকের মত মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের সমান অধিকার। আর তা করার মাধ্যমে জাতী হিসেবে আমরা আমাদের মহানুভবতাকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো। কেননা, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মানে একজন নয়,বরং দুর্দশাগ্রস্থ একটি পরিবার।
আশা করছি, বর্তমান প্রতিবন্ধী বান্ধব সরকার আমাদের মৌলিক চাহিদা পূরনের বিষয়গুলো পরবর্তিতে বিশেষ বিবেচণায় আনবেন এবং প্রতিবন্ধী বান্ধব বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে একটি জনকল্যানময় রাষ্ট্র গঠণে অগ্রনী ভূমিকা রাখবেন।। প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতিটি অধিকার নিশ্চিত হোক। সেই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করছি। লেখক : সভাপতি, আস্থা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা, তানোর, রাজশাহী। আজকের তানোর

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.