সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:২৫ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : রাজশাহীর বাঘা থানার এক এসআই-এর বিরুদ্ধে পাশের থানা থেকে এক মোটরসাইকেলযাত্রীকে ধরে নিয়ে এসে মাদকের মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ওই এসআই-এর নাম রবিউল ইসলাম। এদিকে মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তাদের দাবি, সাক্ষী করতে তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ১১টার দিকে চারঘাট থানার রাওথার নিজ বাড়ি থেকে গার্মেন্টসামগ্রী ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসেন (৩০) তার মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। এলাকার মিশাবপাড়া মোড়ের কাছে এলে বাঘা থানার এসআই রবিউল ইসলাম তার গতিরোধ করেন। এরপর রাত ১টার দিকে উজ্জ্বলের বড় ভাই ওয়াসিমকে ফোন করেন এসআই রবিউল। এ সময় তিনি বলেন, উজ্জ্বলের মোটরসাইকেলের কাগজ সঙ্গে না থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে, কাগজ নিয়ে গেলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
ওয়াসিম মোটরসাইকেলের কাগজপত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে আশপাশের মানুষের কাছ থেকে জানতে পারেন তার ভাই উজ্জ্বলকে মারধর করা হয়েছে এবং তাকে বাঘা থানার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওয়াসিম বাড়িতে ফিরে এলে রাত ২টার দিকে বাঘা থানার মহাদীপুরের রিয়াল নামে এক ব্যক্তি তাকে মোবাইল ফোনে জানান, পুলিশ উজ্জ্বলকে নিয়ে বাঘা এলাকার বিনোদপুর বাজারের দিকে গেছে। এক লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। খবর পেয়ে উজ্জ্বলের ছোট ভাই জুয়েল ও বড় ভাই ওয়াসিম এসআই রবিউলের সঙ্গে দেখা করতে বিনোদপুর বাজারে যান। এ সময় জুয়েলকে জানানো হয়, ৪০ মিনিটের মধ্যে এক লাখ টাকা দিতে না পারলে উজ্জ্বল ও তার বড় ভাই ওয়াসিমের বিরুদ্ধে মদক মামলা দেওয়া হবে। আর টাকা দিলে ছোট একটা মামলা দেওয়া হবে।
পরের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১০টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আয়নাল হকসহ স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে জুয়েল এসআই রবিউলের বাড়িতে গেলে তাদের জানানো হয়, উজ্জ্বল তার সঙ্গে অনেক বড় বেয়াদবি করেছে। এখন এক কোটি টাকা দিলেও তাকে ছাড়া হবে না।
এরপর উজ্জ্বলকে আদালতে চালান দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে আদালত থেকে মামলার কপি তুলে উজ্জ্বলের পরিবার জানতে পারে তাকে ১০০ গ্রাম হেরোইনের মামলা দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় উজ্জ্বলসহ আসামি করা হয়েছে তার বড় ভাই ওয়াসিমকে। মামলার এজাহারে ওয়াসিমকে পালতক দেখানো হয়েছে।
এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে বাঘা থানার মীরগঞ্জের একটি বাজারের প্রহরী মো, তালেব (৩৫) ও নাজিমকে (৩২)। তাদের সঙ্গে কথা হলে নাজিম জানান, ঘটনার দিন রাতে তিনি বাঘার মীরগঞ্জ বাজারের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি পুলিশ দেখে দাঁড়ালে তাকে সাক্ষী হওয়ার কথা জানিয়ে একটি কাগজে সই করতে বলা হয়। পুলিশের কথামতো তিনি সাদা একটি কাগজে সই করেছেন।
এদিকে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উজ্জ্বলের পরিবারের সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উজ্জ্বলের স্ত্রী জুলেখা বেগম ও তার দুই শিশুসন্তান, ভাই জুয়েল রানা, বোন পারভিন ও ঝর্ণা। জুলেখার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান উজ্জ্বলের ছোট ভাই জুয়েল।
সংবাদ সম্মেলনে উজ্জ্বলের স্ত্রী দাবি করেন, তার স্বামীকে মাদক দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। প্রায় ১০ বছর আগে উজ্জ্বলের এক চাচাতো ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই মামলার সাক্ষী ছিলেন উজ্জ্বল। ওই মামলার রায়ে আসামি সামাদ মোল্লার ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়েছে। সামাদ মোল্লা ভারতে পলাতক রয়েছে। সে নানাভাবে উজ্জ্বলকে চাপ দিচ্ছে ওই হত্যা মামলায় মিথ্যা সাক্ষী দিতে।
বাঘা থানার এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে ৫ থেকে ৬টি মাদকের মামলা রয়েছে। ওই রাতে মাদকবিরোধী অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন এসআই শাহ আলম। উজ্জ্বলকে বাঘা থানার মীরগঞ্জ এলাকার ব্র্যাক অফিসের সামনে থেকে মাদকদ্রব্যসহ আটক করা হয়। সাক্ষীদের সাদা কাগজে সই প্রসঙ্গে এসআই রবিউল জানান, মাদক কারবারিদের ভয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলছেন না। তাদের ভয়ে সাক্ষীরা এখন এসব বলছে।