সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:৩৩ am
ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক : রাজশাহীর তানোরে মামলাধীন জায়গার গাছ কেটে ফেলার সময় বিদুৎতের তারে পড়ে পুল বা খাম্বা ভেঙ্গে পুরো পাড়া অন্ধকারে পড়ে বলে নিশ্চিত করেন পল্লী বিদ্যুৎতের জিএম জহুরুল ইসলাম। গত সোমবার বিকেলের দিকে উপজেলার কামারগাঁ ইউপির হরিপুর গ্রামে ঘটে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি। ওই গ্রামের প্রভাবশালী মইনুল জায়গার গাছ বিক্রি করেন পৌরসভার তালন্দ বাজার এলাকার গাছ কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছে।
অথচ সম্প্রতি আইন পাশ করা হয় বাড়ির গাছ কাটতেও লাগবে অনুমতি।কিন্তু মইনুল টাকার দাপটে ওই গ্রামের রহমতের পরিবারকে যাতাকলে ফেলতে গাছ কেটে পুরো পাড়া অন্ধকার করে দিয়েছেন। অবশ্য যে সময় পুল ভেঙ্গে পড়ে সে সময় বিদুৎ ছিল না।বিদ্যুৎ থাকলে প্রান হারানোসহ ঘটতো বড় ধরনের দূর্ঘটনা বলেও নিশ্চিত করেন প্রত্যাক্ষদর্শী পাড়ার লোকজন । এঘটনায় মইনুলের বিরুদ্ধে পাড়ার লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়লেও তার সামনে কেউ কিছু বলতে পারেননা। মইনুলের খাম খেয়ালীর জন্যই এত বড় দূর্ঘটনা। এজন্য তাকে বিদ্যুৎ আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলুক শান্তি দাবি করেন গ্রামবাসী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সম্প্রতি গত সোমবার সন্ধ্যার আগে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার কামারগাঁ ইউপির হরিপুর গ্রামের মধ্যস্হলে রয়েছে মসজিদ। মসজিদের সামনে ছিল অর্ধশত বছরের অনেক গাছ। সেই গাছ এর আগেও বিক্রি করেন প্রভাবশালী মইনুল। মসজিদের সামনে ও গাছ কাটার জায়গায় কবরস্থানও রয়েছে। মসজিদের উত্তর পূর্ব দিকে ছিল বিদ্যুৎতের পুল। লম্বা গাছ কেটে ফেলার সময় তারের উপর পরা মাত্রই ভেঙ্গে পড়ে পুল। যার কারনে অনেকের মিটার পর্যন্ত ভেঙ্গে গেছে। গাছ ক্রেতা সোহেলসহ মিস্ত্রিরা জানান, গাছটি দক্ষিণে পেললে মসজিদের মিনারের উপরে পড়বে। অনেক চেষ্টা করার পরও দূর্ঘটনা হয়ে গেল। ইচ্ছে করে কেউ তো এসব করবে না।
প্রত্যাক্ষদর্শী, শিক্ষক সেকান্দর আলী, বেনজিরসহ একাধিক নারী পুরুষরা জানান, জায়গাটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে প্রভাবশালী মইনুল ও দরিদ্র অসহায় রহমতের মধ্যে । গত সোমবার সকালের দিকে গাছ কাটতে লাগলে মেম্বারসহ পাড়ার লোকজন নিষেধ করেন। কিন্তু মইনুল সব কিছু অপেক্ষা করে গাছ কাটেন। এরআগেও তিনি অনেক গাছ বিক্রি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে । আর সোমবারে রহমতসহ মামলার বাদি তার স্ত্রী কোর্টে যান। এই সুযোগে মইনুল গাছ কেটে উজাড় করে ফেলেন। মসজিদ সংলগ্ন জায়গায় গাছ ফেলার সময় তারের উপর পড়া মাত্রই বিকট শব্দ হয়।সাথে সাথে পাড়ার লোকজন ছুটে আসেন।এসে দেখে পুল ভেঙ্গে বাড়ির টিনের উপর পড়ে আছে ।
ওই সময় বিদুৎ থাকলে না যানি কত বড় দূর্ঘটনা ঘটে যেত।মহান আল্লাহ নিজ হাতে বাচিয়েছেন বলেও অনেকে শুকরিয়া আদায় করেন। মইনুল শুধু এই ক্ষতিই না রহমতের বাড়ির মুট দরজা বন্ধ করে ইট দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন। যার কারনে রহমতের জীবিকা নির্বাহের উপায় অটোরিকশা ও চার্জার তিন চাকার ভুটভুটি বাড়িতে তুলতে পারছে না।বাধ্য হয়ে একটি গাড়ী বিক্রি করে দেন। এত কিছুর পরও নিরবে ধুঁকছে রহমতের পরিবারের লোকজন। আবার কিস্তির টাকায় কেনা গাড়ী । গাড়ী বন্ধ খেতেই পাচ্ছে না, আবার মরার উপর খাড়া আছে কিস্তি, কত অসহায় রহমতকে দেখলেই বোঝা যায়। কথা হতেই এক মুরুব্বি একটি মামলার কাগজ এনে বলে পড়েন আর যদি সম্ভব হয় তাহলে রহমতের পরিবারের সাথে কথা বললেই আসল ঘটনা পাবেন। মসজিদের উত্তর পশ্চিমে রহমতের বাড়ি।
সেখানে গিয়ে কথা বলতেই শুধু বলেন, আমার বাড়ির মুল গেট বন্ধ করে লম্বা ইট দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন মইনুল । আমি পাঁচদিন ধরে গাড়ি চালাতে পারেনি,দুই দিন ধরে দানা পানি পেটে যায় নি, বলেই কান্না শুরু করেন। এসময় তার স্ত্রী ছবেদা এসে কোন কথায় বলতে পারেন নি, হাওমাও করে কান্না আর কান্না। জড়ো হন অনেক মহিলা।সবার একই কথা কোন বিবেকে সীমানা প্রাচীর তুলে তার জীবিকা নির্বাহ বন্ধ করে দিল মইনুল।ছবেদা একটু পর পর বলেন পানি দাও পানি দাও। তাকে অনেকেই শান্তনাও দেন।এমন ভাবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন হেঁটে যাওয়াও যাবে না। এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় রহমতের বাড়িতে।
সন্ধ্যা পার আসেনি বিদ্যুৎ পাড়ার লোকজন চলে আসেন মুল মাটির রাস্তার দুই দোকানে। সেখানে পাড়ার অনেক মুরুব্বিরাও বলেন, মইনুল টাকার দাপটে যা শুরু করেছেন, তা একেবারেই অমানবিক। মইনুলের খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। তবে মঙ্গলবার সকালের দিকে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি, দম্ভক্তি প্রকাশ করে বলেন, রহমত আমার সাথে সমঝোতা করেনি,সে কার কথা শোনে আমার নামেই মামলা করেছে, তাকে দেখে ছাড়বো। ওই সব আমার গাছ,জায়গা আমার,খাজনা খারিজ সব রয়েছে।
গত সোমবার ঘটনাস্হল থেকে পল্লীবিদ্যুৎ তানোর জোনের জিএম জহুরুলের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিদ্যুৎ আইন অনুযায়ী ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
ওই জায়গার উপর রহমতের স্ত্রী বাদি হয়ে মইনুলকে বিবাদী করে ১৪৪ ধারা জারির জন্য কোর্টে মামলা করেন। সেই ১৪৪ ধারা বজায় রাখতে মঙ্গলবার তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই নিজাম। তিনি জানান, মহামান্য আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে ঘটনা স্হলে গিয়ে উভয় পক্ষকেই তা মানতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন এই পুলিশের এসআই।
অবশ্য মঙ্গলবার দুপুর প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়।কিন্তু ১৪৪ ধারা নোটিশ আশার আগেই সব কিছু করে ফেলেন মৃত ছাবেদ আলীর পুত্র মইনুল ইসলাম। এখন রহমত কি করবে। তিনিতো কোনভাবেই বাড়িতে গাড়ি নিয়ে আসতে পারবে না। আজকের তানোর