সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৫৩ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভারতের ভেলোরের একটি হাসপাতালে দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন রাজশাহীর দুই যুবক। চিকিৎসা ভিসা নিয়ে গিয়ে ভেলোর শহরে হাসপাতালে পাশের একটি হোটেলে অবস্থান করে এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। তারা প্রতারণার ফাঁদ পেতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের অর্থ।
এছাড়াও তারা নিয়ন্ত্রণ করছেন অর্থ পাচারের হুন্ডি কারবারও। চিকিৎসা নিতে আসা রোগিদের অর্থের প্রয়োজন হলে দেশে তাদের প্রতিনিধির বিকাশে টাকা দিতে হয়। সেটা রুপি হিসেবে পৌঁছে দেয় রোগির কাছে।
ভারতের হাসপাতালে গড়ে তোলা ওই দালাল সিন্ডিকেটের প্রধানের নাম পিয়ারুল ইসলাম পেয়ার। তার বাড়ি রাজশাহী নগরের চন্দ্রিমা থানার দেবিসিং পাড়ায়। আর তার সহযোগির নাম শকিল উদ্দিন। তার বাড়ি নগরীর তালাইমারি এলাকায়। পেয়ার ও শাকিল দুই বন্ধু। এক সময় তারা দুইজনেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দালাল ছিলেন। হাসপাতালে দালাল বিরোধী অভিযানে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরাও খেয়েছিলেন এদের একজন।
জানা গেছে, হাসপাতাল দালাল চক্রের প্রধান পিয়ারুল কয়েকদিন আগ পর্যন্ত অবস্থান করেছেন ভারতের ভেলোর শহরে। থাকেন শহরের সাইদাপেট এলাকার লতিফ বাশা সড়কের শক্তি রেসিডেন্সী হোটেলের তৃতীয় তলার ১১৮ নং রুমে। এই হোটেলটি হাসপতাল থেকে ১০০ গজের মধ্যেই। সেখান থেকে তিনি হুন্ডি কারবারসহ দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ মাসে তিনি দেশে ফেরার কথা রয়েছে। আর তার জায়গায় যাবে শাকিল।
ভেলোর ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যর জেলা শহর। দক্ষিণ ভারতের এই শহরটি চিকিৎসার জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ও ভারতের শ্রেষ্ঠ হাসপাতাল খ্রিস্টান মেডিকেল কলেজ (সিএমসি) হাসপাতাল। সেখানে চিকিৎসা নিতে যান রাজশাহী অঞ্চলসহ বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে ওই হাসপাতালে দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন পিয়ারুল ইসলাম পেয়ার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছয় মাসের চিকিৎসা ভিসা নিয়ে ভেলোরে অবস্থান করেন পিয়ারুল। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে দেশে চলে আসেন। এর পর ছয় মাসের জন্য যায় তার সহযোগি শাকিল। এভাবেই পিয়ারুল ও শাকিল ভেলোরে অবস্থান করে সিএমসি হাসপাতালের দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য যাওয়া রোগীদের সহযোগিতার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের অর্থ।
এছাড়াও পিয়ারুল ভেলোরে গড়ে তোলেছেন হুন্ডি ব্যবসার কারবার। চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের টাকার দরকার হলে তার ভাইয়ের বিকাশ নাম্বারে (০১৮৬৩-৪৩৮৭৫৮) টাকা দিলে পিয়ারুল হাজারে ৮০০ রুপি দেয়।
ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে রাজশাহী থেকে যাওয়া একজন রোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভেলোরে চিকিৎসা নিতে প্রথম যাওয়ার কারণে এলাকার ছেলে হিসেবে সহযোগিতা চাওয়া হয় পিয়ারুলের কাছে। চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, চিকিৎসক দেখানো, পরীক্ষা ও পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে সহযোগিতা করে পিয়ারুল। এর জন্য সে নিয়েছে ২৫ হাজার রুপি। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩০ হাজার। আগে না জানালেও চিকিৎসা শেষে এ অর্থ দিতে বাধ্য করে পিয়ারুল।
পিয়ারুলের প্রতারণার শিকার হয়েছেন রাজশাহী থেকে চিকিৎসা নিতে যাওয়া এক নারী রোগী। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি বাড়ি ফিরেছেন। ওই নারী রোগি জানান, ২০ জানুয়ারি সিএমসি হাসপাতালের প্রাইভেট চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই। ৭৫০ রুপি চিকিৎসক ফি ও পরীক্ষা দেখার ফি ৩৫০ টাকা দিয়ে একজন সিনিয়র চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাই ৩ ফেব্রুয়ারি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে হোটেলে আসার পর দেখা হয় পিয়ারুলের সঙ্গে। বিষয়টি তার সঙ্গে শেয়ার করে বলি অ্যাপয়েন্টমেন্ট আগে পেলে ভাল হতো। এ কথা শুনে পিয়ারুল আমার হাত থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের কাগজ নিয়ে নেয়।
তিনি বলেন, আমার সঙ্গে কোন কথা না বলে পিয়ারুল তিনদিন পর ২৪ জানুয়ারি জেনারেল অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে নিয়ে এসে আমাকে দেয়। এর জন্য সে তিন হাজার রুপি দাবি করে। এ নিয়ে অনেক বাকবিতন্ডার পর এক হাজার রুপি নেয়ার পর অ্যাপয়েন্টমেন্টের কাগজটি দেয়।
ওই নারী রোগি আরও বলেন, প্রাইভেটে সিনিয়র চিকিৎসকরা রোগী দেখেন। আর জেনারেলে জুনিয়াররা। প্রাইভেটের মোট ফি দিতে হয় ১১০০ রুপি। আর জেনারেলে ১১০ রুপি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পরিবর্তন করে ৯৯০ রুপি পিয়ারুল তুলে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে পিয়ারুলের ভারতীয় +৯১৯৫০৪৯৭০৩৮ নাম্বারে একাধিক মাধ্যমে (ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ফোন) যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। শাকিলের সঙ্গেও একাধিকবার তার +৯১৯১৫০৩৩১৪৬৩ নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ওই বিকাশ নাম্বারের যোগাযোগ করা হলে এর ব্যবহারকারি নিজেকে জহির বলে পরিচয় দেন এবং ঢাকায় থাকেন বলে জানান। এর বেশী আর কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি। যে কোন বিষয়ে পিয়ারুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন। আজকের তানোর