রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৪১ pm
বিনোদন ডেস্ক : উপমহাদেশের সংগীতভক্তদের সুরের মায়াজালে বেঁধে প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর ইহজগতের মায়া কাটিয়ে রোববার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
লতা মঙ্গেশকর উঠে এসেছিলেন খুব সাধারণ পরিবার থেকে। কিংবদন্তী এই সংগীতশিল্পীর প্রথম রোজগার ছিল মাত্র ২৫ রুপি। সেখান থেকেই আজ শত কোটির মালিক তিনি।
অবশ্যই লতার জীবনের এই পরিবর্তনের পথটা মোটেও মসৃন ছিল না। অধ্যবসায় আর নিষ্ঠাই ছিল ‘ভারতরত্ন’ লতা মঙ্গেশকরের সাফল্যের চাবিকাঠি। লতা মঙ্গেশকরের এই বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারেও ছিল উত্থান-পতন। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সুরসম্রাজ্ঞীর জীবনের আলোচিত কয়েকটি ঘটনা।
১. ১৯৬২ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পীর খাবারে বিষ মিশিয়ে তাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়। পদ্মা সচদেব নামে এক লেখকের লেখা ‘লতা মঙ্গেশকর: অ্যায়সা কাঁহা সে লাউঁ’ বইতে। উঠে আসে এই লোমহর্ষক ঘটনা। পরে প্রবাসী সাংবাদিক নাসির মুন্নি কবির এই শিল্পীর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল, ১৯৬২ সালে খাবারে বিষ মিশিয়ে লতা মঙ্গেশকরকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিল। পরে এই খবরের সত্যতায় সিলমোহর দিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকরের বোন ঊষা মঙ্গেশকর।
২. ১৯৪০ এর দশকে চলচ্চিত্রে তত বেশি গানের সুযোগ না থাকায় তরুণী লতা রোজগারের জন্য অভিনয় শুরু করেন। তিনি প্রায় আটটি মারাঠি আর হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৪৩ সালে মারাঠি চলচ্চিত্র ‘গজাবাউ’তে তিনি ‘কিছু কথা, কিছু শব্দ’ শিরোনামের একটি গান গেয়েছেন, যা ছিল চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রতি মাসে তার আয় হতো দুইশ রুপি।
৩. লতা মঙ্গেশকরের প্রিয় সংগীত পরিচালক ছিলেন মদন মোহন। ২০১১ সালের ‘তেরে সুর অর মেরে গীত’ নামে একটি সাক্ষাৎকারে লতা বলেছিলেন, মদন মোহনের সঙ্গে আমার একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এটা ছিল ভাই-বোনের সম্পর্ক।
৪. বিয়ের না করলেও কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পীর জীবনেরও প্রেম এসেছিল। দুঙ্গারপুরের রাজ ঘরানার মহারাজ রাজ সিংহের প্রেমে পড়েছিলেন লতা।লতার গানে মুগ্ধ ছিলেন রাজ সিংহ। কিন্তু সেই প্রেম গভীর বন্ধনে পৌঁছয়নি। রাজ ঘরানার ছেলে রাজ সিংহ নাকি বাবা-মাকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, কোনও সাধারণ পরিবারের মেয়েকে তিনি রাজবংশের বউ করে আনবেন না। সেই প্রতিজ্ঞা বজায় রেখেছিলেন রাজ সিংহ। তিনিও আর বিয়ে করেননি।
৫. ভারতের রাজ্যসভায় সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন লতা মঙ্গেশকর। ১৯৯৯-২০০৫ পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভায় সংসদ সদস্য ছিলেন। ওই সময়কে তিনি একটি বাজে সময় বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
৬. ১৯৭৪ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে নাম উঠেছিল লতার। । ওই সময় সবচেয়ে বেশি গান রেকর্ড করার বিশ্ব রেকর্ড গড়েন তিনি। কিন্তু সেই দাবির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মোহাম্মদ রফি।
৭. কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পীর শেষ গান ছিল ‘সৌগন্ধ মুঝে ইস মিট্টি কি…’। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য গাওয়া এই গানটি ২০১৯ সালের মার্চে প্রকাশিত হয়।
৮. লতা মঙ্গেশকরকে ২০০১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছিল। তিনি পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দাদা সাহেব ফালকেসহ একাধিক জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।