শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:২২ pm
আর কে রতন, বিশেষ প্রতিবেদক : শীত মৌসুমের অন্যতম একটি সুস্বাদু ও পরিচিত রান্নার খাবার কুমড়া আর ডাল দিয়ে তৈরি বড়ি। তরকারির সাথে রান্না করে খাওয়ার প্রচলনটি ঐতিহ্যবাহি। যুগ যুগ ধরে শীত মৌসুম এলেই দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো রাজশাহীর বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গৃহবধূদের মাঝে শুরু হয় কুমড়া আর মাশকালাই ডাল দিয়ে বড়ি তৈরির মহোৎসব।
অঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িতেই দেখা যায় শীত এলেই বড়ি তৈরির কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার গৃহবধূরা। কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে কুমড়া বড়ি তৈরির এ উৎসব চলে। গৃহবধূরা বড়ি তৈরী করে নিজেদের খাবার চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অনেকে অসচ্ছল সংসারে অভাব-অনটন দুর করতে ভ‚মিকা রাখছেন।
মোহনপুর উপজেলার আমরাইল গ্রামের বড়ি ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই ১০০ থেকে ১২০ টাকা আর চাল কুমড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাইজ হিসাবে চালকুমড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ক্রয় করা যায়। ৫ কেজি চাল কুমড়ার সঙ্গে ২ কেজি মাসকলাই ডাল মিশ্রণে কুমড়া বড়ি ভাল হয়। প্রথমে মাসকলাই রৌদ্রে শুকিয়ে যাতায় ভেঙ্গে পরিস্কার করে বা না ভেঙ্গে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘন্টা মাসকলাই পানিতে ভেজাতে হয়। তারপর ঢেঁকি বা শিল-পাটা দিয়ে পিষে নিয়ে কুমড়া বড়ির মিশ্রণ তৈরি করা হয়।
তবে এখন জেলার বিভিন্ন এলাকায় কুমড়া বড়ি তৈরির মেশিন স্থাপনের পর থেকে সবাই মেশিনে মাড়াই করে মাসকলাই ও কুমড়ার মিহি করা হচ্ছে। বাকশিমইল গ্রামের ডলি রানী জানান, সংসারে অভাব অনটনের মধ্যে চলে। আমি প্রতি শীতে সংসারের কাজের ফাঁকে বাড়ীতে বসে কুমড়া ও ডাল সংগ্রহ করে রোদ্রে শুকিয়ে প্রস্তুত করে বাজারে বিক্রি করে যা টাকা রোজগার হয় তা দিয়ে আমার সন্তানের লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ করে থাকি।
গোদাগাড়ী উপজেলার স্বামী পরিত্যাক্ত আসমা খাতুন বলেন, স্বামী ডির্ভোস দেওয়ার পর আর বিয়ে করিনি। এক সময় মানুষের বাড়ীতে কাজ করে জীবিকা নির্ভর করতাম। পরে অন্যের দেখে বাড়িতে বড়ি তৈরা করে এখন ভাল আছি। বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের বড়ি প্রস্তুতকারী সুশীল চন্দ্র জানান, বর্ষাকাল বাদে বাঁকি মাসগুলোতে কমবেশী কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়। আশ্বিন মাস থেকে ফ্লাগুন এই ৬ মাস কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। শীতকাল কুমড়া বড়ি তৈরির ভরা মৌসুম।
এ সময় গ্রামের প্রতিটা বাড়ীতে কমবেশি কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রি করেন। শীতের সময় কুমড়া বড়ির চাহিদা থাকে বেশী, আর গ্রামাঞ্চলের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়া বড়ি তৈরি করেন। কুমড়া বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ মাসকলাইয়ের ডাল আর চালকুমড়ার সঙ্গে সামান্য মসলা।
এ বিষয়ে মোহনপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক ও বাকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জানান, শীত মৌসুমে গ্রামের নারীরা কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছে। গ্রামীণ নারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পৃষ্টপোষকতা মাধ্যমে সুযোগ দিলে তারা নিজেদের ভাগ্যেন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। আজকের তানোর