শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৩৮ pm
আর কে রতন, বিশেষ প্রতিবেদক : প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে উপকারী ‘ঢোলকলমি’ উদ্ভিদ। ঢোলকলমি হচ্ছে কনভলভালাসি পরিবারের এক ধরনের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। ইংরেজিতে একে বলে pink morning glory এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Ipomoea carnea।। অতীতে গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি এলাকায় পথের ধারে, জলাধারর ডোবার পাশে, সর্বত্র এদের দেখা মিলেও কালে বিবর্তনে প্রকৃতির মাঝে হতে হারিয়ে যেতে বসেছে।
গ্রামাঞ্চলে ঢোলকলমি গাছকে কৃষকদের ক্ষেতের বেড়ালতা বা বেড়াগাছ হিসেবেও এই উদ্ভিদের ব্যবহার লক্ষনীয় ছিল। রাজশাহী এলাকায় এই গাছটি ‘অমর গাছ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। সবুজ পাতার গাছটি ছয় থেকে দশ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এই গাছে দৃষ্টিনন্দন নজরকাড়া ফুল হয়। ফুল দেখতে মাইক বা ঘণ্টার আকৃতির। রং হয় হালকা বেগুনি ও সাদা। কলমি পরিবারের উদ্ভিদ হলেও ঢোলকলমি লতাজাতীয় নয়। কথিত আছে, এই ফুলের আদি নিবাস সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার পেরু ও বলিভিয়ায়।
সেখানকার পাহাড়ি এলাকা থেকে স্প্যানিশ পাদরিরা সপ্তদশ শতকে হিমালয়ের কাশ্মীর ও কাংড়া উপত্যকায় গির্জার বাগানে লাগানোর জন্য এটি নিয়ে আসেন। ধারণা করা হয়, সেখান থেকে ছড়িয়ে পরে গোটা ভারতবর্ষে। গোদাগাড়ি উপজেলার প্রবীন কৃষক আনসার আলী বলেন, একসময় আমাদের গ্রামের আশেপাশে প্রচুর পরিমানে এ গাছ দেখা গেলেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। তিনি আরো বলেন, ঢোলকলমি সুন্দর ফুল দেওয়া ছাড়াও জমির ক্ষয়রোধ করে। এটি দ্রæত বর্ধনশীল এবং প্রতিক‚ল পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে বলে গ্রামাঞ্চলে এই গাছ বাড়ি বা জমিতে বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকে আবার জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করে।
নদীর তীরে কিংবা ফসলের মাঠে ঢোলকলমি পাখির বসার জায়গা করে দেয়। মোহনপুর উপজেলার হাটরা গ্রামের বৃক্ষপ্রেমিক সুনিল চন্দ্র সরকার বলেন, সারা বছর এই ফুল দেখা গেলেও বর্ষার শেষ ভাগ থেকে শরৎ ও শীতে এই ফুল বেশি ফোটে। একটি মঞ্জরিতে চার থেকে আটটি ফুল থাকে। ফুলের মধুর জন্য কালো ভ্রমর আসে। তবে এর পাতা ও কান্ড বিষাক্ত ও তেতো স্বাদের হওয়ায় গবাদি পশু এতে মুখে দেয় না। ফুল বা পাতা ছিঁড়লে সেখান থেকে সাদা কষ বা আঠা বের হয়। এই উদ্ভিদের কিছু ভেষজগুণও আছে।
তানোর উপজেলার কুঠিপাড়া গ্রামের রেজাউল ইসলাম জানান, গ্রামের ভাষায় এই গাছ আমাদের কাছে ‘অমর গাছ’ হিসেবে পরিচিত। এটি খুবই উপকারী গাছ। ঢোলকলমির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো গরু-ছাগল গাছটি না খাওয়ায় বিভিন্ন আমরা ফসলের বেড়া হিসেবে ব্যবহার করতাম। নদীর তীর ভাঙন রক্ষায় এটি ব্যবহার করতাম। আবার রান্নার জ্বালানি উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করা যেত। তবে এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। নতুন প্রজন্মের সন্তানদের ‘অমর গাছ’ বললে হয়তো তারা চিনবেও না।
রাজশাহী কলেজের উদ্ভদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও সহযোগি অধ্যাপক ড. মোঃ মজিদুল হক বলেন, এটা খুবই উপকারী গাছ। গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিক বেড়া হিসেবে পরিচিত এই ঢোলকলমির নানা ঔষধি গুণও রয়েছে। প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষায় মূল্যবান উদ্ভিদকে সংরক্ষণের ও সমপ্রসারণের জন্য সকলের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আজকের তানোর