সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:০৪ am
আব্দুস সবুর, ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক : রাজশাহীর তানোরে পল্লীবিদ্যুতের ফার্মসহ বিভিন্ন নামে শতশত মটর স্হাপন করার জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ সেচ প্রকল্প চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। কৃষিক্ষেত্রে গভীর নলকূপ বড় ভূমিকা রাখলেও রাজশাহী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে বিএমডিএর সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে অনেক গভীর নলকূপ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর উপজেলা। এই উপজেলার ভূগর্ভস্থ পানি দিনের দিন নিচে নেমে যাওয়ার কারণে বিগত কয়েক বছর আগে কৃষি মন্ত্রণালয় সেচ পাম বা মটর বসানো নিষিদ্ধ করে পরিপত্র জারি করেন। এসব নিয়মকে অমান্য করে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির দুর্নীতিবাজ একশ্রেণীর কর্মকর্তার নেপথ্যে যোগসাজশে নীতিমালা লঙ্ঘন ও নিয়মবর্হিভূতভাবে মৎস্য চাষ, মুরগী ও গরুর খামারের নামে বৈদ্যুতিক মটর স্থাপন করে বিএমডিএর গভীর নলকুপ ও সেচ কমিটির অনুমোদিত ব্যতিত মটরের কমান্ড এরিয়ায় সেচ দেয়া হচ্ছে। এতে বিএমডিএর সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নামধারী ইলেক্ট্রিশিয়ানরা সবকিছু জেনেও এসব অবৈধ মটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে জরিমানার নামে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে একশ্রেণীর মটর মালিক অধিক মুনাফার আশায় অবৈধভাবে গভীর নলকূপ স্কিমের জমিতে সেচ দিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদিকে, ব্যক্তি মালিকানাধীন মটর স্কিমে সেচ পানির মূল্য নিয়ে প্রতিনিয়ত মটর মালিকের সঙ্গে কৃষকদের ছোট বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেচ নীতিমালা অনুযায়ী বিএমডিএর গভীর নলকূপের প্রায় (১ হাজার ৩শ’ মিটার) কমান্ড এরিয়ার মধ্যে কোনো অবস্থাতেই সেচ মটর স্থাপন করা যাবে না। এতে বিদ্যুৎ সংযোগের তো প্রশ্নই আসে না। অথচ তানোরের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে খাবার পানি, মুরগী-গরুর খামার ও মৎস্য চাষের নামে বৈদ্যুতিক মটর স্থাপন ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে ধানী জমিতে সেচ দিচ্ছে।
এবিষয়ে তানোরের বাধাইড় ইউপির শসানতলা গ্রামে শাহজাহান আলী, বৈদ্যপুর গ্রামের রহিম বক্সের পুত্র আবুল হায়াৎ, পাঁচনদর ইউপির শাহাপুর পশ্চিমপাড়ার বাক্কার আলী, গোলাম রাব্বানী লেলিন, চাঁদপুর গ্রামের সাদেক আলীসহ অসংখ্য মানুষ সেচ বাণিজ্যে করছে। আবার পল্লীবিদ্যুৎ যথারীতি এসব অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে জরিমানার নামে বাণিজ্য করছে। অথচ সেচ নীতিমলা অনুয়ায়ী এসব মটর থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া হলে সেই মটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা। আর এসব অবৈধ মটরের কারণে বিএমডিএ’র অধিকাংশ গভীর নলকুপ অকেজো হয়ে পড়েছে।
এব্যাপারে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাহাফুজুল হক বলেন, গভীর নলকুপের কমান্ড এরিয়ায় সেচ মটর স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। আর বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার তো প্রশ্নই আসে না, এমনকি খাবার পানির মটর থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া যাবে না।
তিনি আরও জানান, সেচ কমিটির অনুমোদন ছাড়া যে মটর স্হাপন হয়েছে এবং যদি সেচ দিয়ে থাকে তাহলে এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে রাজশাহী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি তানোর এরিয়া ম্যানেজার (এজিএম) কামাল হোসেন বলেন, খাবার পানির মটর থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া যাবে না। তবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।
পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম জহুরুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এক ছটাক জমিও পতিত রাখা যাবে না। আর আমরা যে সব মটর দিয়েছি সব বানিজ্যিক। কেউ যদি অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সেচ নেয় তাহলে কি করার আছে। তবে, সেচের বিষয়ে কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্হা নেওয়া হবে। আজকের তানোর