রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:২৬ pm
আব্দুস সবুর, তানোর :
রাজশাহীর তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী বিদ্রোহীদের মদদ দিয়ে কেন্দ্রের ও পাওনাদারদের চাপে এক প্রকার আত্মগোপনে থেকে তালমাতাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুনও নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কলেজ না করেই বেতন তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফলে রাজনীতির মাঠ থেকে তারা এবং তাদের অনুসারীরা উধাও হয়ে পড়েছেন। এই দুই নেতার কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। এজন্য তাদের দীর্ঘ প্রায় দেড় দশকের একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করছেন তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের পদ-পদবি হারানো এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে বলেও মনে করছেন প্রবীণ সিনিয়র নেতারা।
জানা গেছে, বিশেষ করে গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে লজ্জাজনক পরাজয় ঘটে রাব্বানী-মামুন অনুসারীদের। আর রাব্বানী মামুন নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেবার নামে একাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা বলেও সর্বমহলে জোর আলোচনা চলছে।
এদিকে, তাদের অনুগত প্রার্থীরা পরাজিত হয়ে টাকার জন্য তাদেরকে খুজেও পাচ্ছেনা। যার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে তাদেরই অনুগতরা। এমনকি ইউপি ভোটের আগে থেকেই রাজনীতির মাঠে নেই তারা। অথচ প্রার্থী দিয়েই উধাও।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সাংসদের আর্শিবাদে এরা দলের দায়িত্বশীল পদে আসিন হয়ে এমপির নাম ভাঙিয়ে কোনো নেতাকর্মীকেই ভিড়তে না দিয়ে তারা ফুঁলেফেঁপে উঠেছিল। এছাড়াও নানা ধরনের বাণিজ্য করেছেন এই দুই নেতা। যা রাজনীতির মাঠে প্রকাশ পাচ্ছে। অথচ দায়িত্বশীল পদে থেকেও দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেনি। তবে, সভাপতি/সম্পাদক পরিচয় বহণ করে সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ কামিয়ে এমপি হওয়ার স্বপ্নে পকেটভারী করে আদর্শিকতার নামে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ বিসর্জন দিয়ে দল, নেতা ও নেতৃত্বের সঙ্গে চরম বেঈমানী করেছেন এদুই নেতা।
এমনকি পদে থাকলেও বাঙালী জাতির জনক ও স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ-২০২০) উদযাপন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দেখা যায় না। করলেও গাঁ ছাড়া ভাব। এদিকে, কমিটি গঠনের খবরে ২০২১ সালে এসে তারা নড়েচড়ে উঠে, কিন্তু তৃণমুলের তোপের মুখে মাঠে নামতে পারেননি। আবার নিভৃত পল্লীতে তারা যে একটা কর্মসূচি করেছে সেখানেও একই গল্প কাহিনি। কর্মসুচির উপর কোনো বক্তব্য না দিয়ে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত হয়ে এমপি, উপজেলা ও নৌকার ইউপি চেয়ারম্যানসহ দলের আদর্শিক নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রই ছিল মূল লক্ষ্য।
অবশ্য গোলাম রাব্বানী এমপি হবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েছিল। তিনি মুন্ডুমালা পৌর মেয়র থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে এমপি হতে মরিয়া হয়ে উঠেন। এজন্য তিনি ওই সময় থেকে নৌকার টিকিট নিশ্চিত এমন আবেগে দুই উপজেলাজুড়ে চলে টাকার ছড়াছড়ি। তখন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন এমপির সাথে থেকে সুবিধা নিয়ে রাব্বানীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হবার স্বপ্ন দেখে নৌকা না পেয়ে রাব্বানীর সাথে হাত মিলিয়ে গত পৌরসভা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রায় স্থানীয় নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দেয় তারা। কিন্তু আব্দুল্লাহ আল মামুন চাপড়া মহিলা কলেজের ভূগোল বিষয়ের প্রভাষক হলেও ক্লাস তো দূরে থাক কলেজেই যান না তিনি। অথচ বেতন তুলেন নিয়মিত।
এহেন পরিস্থিতিতে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়ার অপরাধে স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে নানামূখী ষড়যন্ত্রকারী রাব্বানী-মামুনের যেন দলীয় কোন ধরণের পদ পদবী না থাকে এমনটাই আশা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন নেতাকর্মীদের। এসব বিবেচনায় গোলাম রাব্বানী ও আব্দুল্লাহ আল-মামুনের কপাল পুড়ছে এটা প্রায় নিশ্চিত বলে মনে করছে তৃণমুল।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুন উপজেলা চেয়ারম্যানের খোয়াব দেখে এমপি ফারুক চৌধুরীর বিরোধীতা ও পৃথক বলয় সৃষ্টির নামে দলীয় কোন্দল সৃষ্টি ও আওয়ামী লীগের খোলস পরে জামায়াত-বিএনপির আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাদের বি-টিম হয়ে কাজ করেছে। তারা এমপির বিরোধীতার নামে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করে মাঠে নেমে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের কাছে টানতে ব্যর্থ হয়ে রাজনীতির হতাশার ঘরে বন্ধি।
এদিকে, আব্দুল্লাহ আল মামুন চাপড়া মহিলা কলেজের ভূগোল বিষয়ের প্রভাষক। তিনি কলেজে না এসেই দীর্ঘদিন ধরে নিয়োমিত বেতন তুলছেন। অথচ দীর্ঘ দেড় বছর পর খুলে স্কুল কলেজ। প্রত্যেক শিক্ষককে নিয়মিত কলেজে থাকার কঠোর নির্দেশনা থাকলেও কোন ভাবেই এই নিয়ম মানেন নি মামুন। কারণ একটাই তিনি ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এবিষয়ে তানোর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অনুকুল কুমার ঘোষ জানান, তাকে কলেজে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে যদি জানুয়ারি মাস থেকে নিয়মিত কলেজে না আসেন নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, স্থানীয় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরোধীতা করে মাঠে নেমে তানোর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গোলাম রাব্বানী ও আব্দুল্লাহ আল-মামুন প্রায় একা হয়ে পড়েছে। দলের আদর্শিক সিনিয়র নেতারা অনেক আগেই তাদের ত্যাগ করেছে পাশাপাশি তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও মূখ ফিরিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল তেমন কোনো নেতাকর্মী তাদের সঙ্গে নাই এক সময় যারা ছিল তারাও সঙ্গ ত্যাগ করেছে। ফলে চরম ঝুঁকির মূখে পড়েছে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আওয়ামী লীগে টিকে থাকায় তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাদের প্রায় দীর্ঘ এক দশকের একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসান ঘটেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যত সভা হয়েছে সব সভায় একটাই দাবি নৌকা বিরোধী রাব্বানী-মামুনের দলের কোন পদে যেন আসতে না পারে।
গোলাম রাব্বানী জানান, গত ইউপি ভোটে আমি বিদ্রোহী প্রার্থী এবং আমার ভাইকে ভোট করতে দিব না। কিন্তু কিছু ব্যক্তির ভুল সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কঠিন চাপে রেখেছে। তারা এখন বলছে রাব্বানী তুমি এখন বিদ্রোহীদের সাথে রাজনীতি কর। তোমার রাজনীতি শেষ। আমার আর রাজনীতি করা সম্ভব না। আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে।
আব্দুল্লাহ আল মামুনের ০১৭১১১৩৬৮৭৫ নম্বর মোবাইলে ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি। পরে অবশ্য তিনি কল ব্যাক করে জানান আমি ব্যস্ত আছি বলে সংযোগ বিছিন্ন মামুন। আজকের তানোর