শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৩৭ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : এক প্রকার ছানার মিষ্টি রসগোল্লা। জনপ্রিয় এই মিষ্টি সাধারণত চিনি দিয়ে তৈরি হয়। কিন্তু রাজশাহীতে রসগোল্লা তৈরি হচ্ছে খেজুর গুড়ে। সুস্বাদু এই রসগোল্লায় মেতেছে পুরো রাজশাহী। ছেলে-বুড়ো সবাই রসগোল্লা খেতে ভিড় জমাচ্ছেন। সকাল থেকে রাত অব্দি দোকানের সামনে লাইন। অনেকেই মাটির হাঁড়িতে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন সুস্বাদু রসগোল্লা নিতে।
বাঙালি রসগোল্লাপ্রেমী। রসগোল্লার সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্য। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ফুলিয়ার হারাধন ময়রা আদি রসগোল্লার সৃষ্টিকর্তা। তবে নবীনচন্দ্র দাস আধুনিক স্পঞ্জ রসগোল্লার আবিষ্কার করেছেন। কথিত আছে- রসগোল্লার কলম্বাস, কলকাতার নবীন দাস।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রসগোল্লার আদি উৎপত্তি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায়। পর্তুগিজদের সময়কালে ভান্ডারিয়ায় ছানা, চিনি, দুধ ও সুজি দিয়ে রসগোল্লা তৈরি করতেন ময়রারা। এই ময়রাদের বংশধর পরবর্তীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে থিতু হন। তারাই ছড়িয়ে সবখানে দেন রসগোল্লা।গত ৩০ ডিসেম্বর নগরীর ভদ্রা রেলক্রসিং এলাকায় চালু হয়েছে রসগোল্লার আউটলেট। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) রাত ৮টায় সেখানে গিয়ে দেখা গেল বাইরে টাঙানো-‘রসগোল্লার স্টক শেষ, আবার কালকে পাবেন।’ তখনো বাইরে অপেক্ষায় লোকজন। যাদের অনেকেই রসগোল্লা খেতে, নয়তো নিয়ে যেতে এসেছিলেন।
বন্ধুদের সঙ্গে রসগোল্লার স্বাদ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুল্লাহ। তিনি জানান, খেজুর গুড়ের রসগোল্লা এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় বসে তারা রসগোল্লায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এসে মুগ্ধ হয়েছেন রসগোল্লার স্বাদে। কেবল স্বাদ নয়, পরিবেশনও তার মন কেড়েছে।
রসগোল্লায় মুগ্ধ একই বিভাগের শিক্ষার্থী রিদওয়ান রহমান অনিন্দ্য। নগরীর ভদ্রা আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর রাস্তার বাসিন্দা তিনি। অনিন্দ্য জানান, বাড়ির পাশে রসগোল্লা মিলছে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে তিনি বিষয়টি জেনেছেন। বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার পথে দেখেছেন, লোকজন লাইনে দাঁড়িয়ে রসগোল্লা খাচ্ছেন। সাধারণত মিষ্টির দোকানে এমন ভিড় থাকে না। আধাঘণ্টা অপেক্ষার পর রসগোল্লা পেয়েছেন। স্বাদ নেওয়ার পর তার মনে হয়েছে, অপেক্ষা সার্থক।
রসগোল্লায় বুঁদ নগরীর তালাইমারী এলাকার বাসিন্দা শের মোহাম্মদও। কনকনে শীত উপেক্ষা করে তিনি এসেছিলেন আরও তিন বন্ধুর সঙ্গে। তার ভাষ্য, খেজুর গুড়ের রসগোল্লা তার কাছে অনেক আকর্ষণীয় লেগেছে। প্রথমবার স্বাদ নেওয়ার পর আরেকবার রসগোল্লা নিয়েছেন। আগে এমন স্বাদের মিষ্টি তিনি খাননি বলেও জানান।
রসগোল্লা তৈরির প্রাণ হচ্ছে ছানা। নিজেদের খামারের খাঁটি দুধের ছানা রসগোল্লাকে স্বাদে করেছে অনন্য। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রসগোল্লার উদ্যোক্তা আরাফাত রুবেল। সওদাগর অ্যাগ্রো নামে তার একটি গরুর খামারও রয়েছে।
আরাফাত রুবেল জানান, তার গরুর খামারে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। সেই দুধের পুরোটা দিয়েই ছানা তৈরি করেন। তা থেকে রসগোল্লাসহ নানান পদের মিষ্টি তৈরি হয়। চাহিদা বাড়ায় তারা বাইরে থেকে দুধ সংগ্রহ না করে খামারে গরু বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন।তিনি জানান, এখন শীতকাল। শীতের পিঠাপুলিতে বাঙালির ঐতিহ্য খেজুরগুড়। সাধারণ রসগোল্লা তৈরি না করে তারা খেজুরগুড়ের রসগোল্লা তৈরি করেন। খেজুরগুড় স্বাস্থের জন্য উপকারী। সব বয়সী লোকজন এটি খেতে পারেন। খেজুরগুড়ের রসগোল্লা অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় স্বাদ নিতে লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন। চাহিদা মতো রসগোল্লা সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
‘রসগোল্লা’ উদ্যোগের বিষয়ে আরাফাত রুবেল জানান, করোনাকালে দুধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন। তখনই দুধ থেকে দুগ্ধজাত পণ্য তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। সম্প্রতি মিষ্টি তৈরিতে নামেন। তাদের লক্ষ্য ছিল মিষ্টিতে বাংলার ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা। এতিহ্য ধরে রেখে তারা মাটির হাড়িতে রসগোল্লা দিচ্ছেন। তারা রসগোল্লায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।
খেজুরগুড়ের রসগোল্লা ছাড়াও তারা কাশ্মিরি রসগোল্লা, নারিকেলের রসগোল্লা, কাঁচা মরিচের রসগোল্লা, তেঁতুলের রসগোল্লা, স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরি করছেন। এছাড়া কলকাতার বাগবাজারের সুস্বাদু রসগোল্লাও তৈরি করছেন। ২২০ থেকে ৩২০ টাকায় রকম ভেদে প্রতি কেজি রসগোল্লা বিক্রি হচ্ছে।
রসগোল্লার সহ-উদ্যোক্তা এসএম রবিউল করিম বলেন, অন্যান্য মিষ্টি প্রস্তুতকারীরা ছানা কিনে নেন। কিন্তু আমরা নিজেদের খামারের গরুর খাঁটি দুধ থেকে ছানা তৈরি করি। ফলে রসগোল্লাসহ সকল মিষ্টি স্বাদে অনন্য। নগরীর ভদ্রা রেলক্রসিং এলাকায় আমাদের প্রথম আউটলেট চালু হয়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নগরীর উপশহর এলাকায় আরেকটি আউটলেট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজকের তানোর