রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৪৫ am
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফগানিস্তানে তালেবানের দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের প্রায় সাড়ে চার মাস হয়ে গেলেও এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেলেনি স্বীকৃতি। ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত এই সংগঠনটি অবশ্য আগের কট্টরপন্থী মনোভাব থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছিল ক্ষমতা দখলের পরপরই। কিন্তু দুই দশক আগের তালেবানের সঙ্গে এই আজকের তালেবানের পার্থক্য ঠিক কতটুকু তা খুঁজতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিশ্লেষকদের।
কট্টরপন্থী মনোভাব থেকে সরে আসার যে ঘোষণা তালেবান দিয়েছিল তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি পাওয়ার একটি কৌশল হিসেবেই মনে করছিলেন বিশ্লেষকরা।
তালেবান নিয়ে বিশ্লেষকদের এই মূল্যায়ন যে খুব একটা ভুল নয়, সেটা অবশ্য তালেবান দফায় দফায় নানা নিষেধাজ্ঞা-নির্দেশনা আরোপ করে প্রমাণ করে দিয়েছে।
১৯৯৫-২০০১ সালে তালেবানের প্রথম দফার শাসনামলে বেশ কঠোর বিধি নিষেধ ছিল। সে সময় চুরির জন্য হাত কেটে দেওয়া হতো, পাথর নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করা হতো, এমনকি নারীদের ওপর ছিল নানা রকম কঠোর বিধিনিষেধ।
তখন দেশটিতে নারীদের চাকরি তো দূরের কথা, কোনো পুরুষ আত্মীয় ছাড়া বাইরে বের হওয়াও নিষেধ ছিল। এমনকি এই নিয়ম না মানলে কঠোর শাস্তিও ভোগ করতে হতো।
এতো গেল গতবারের কথা। এই দফার শাসনমালেও তালেবানের খুব একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন না বিশ্লেষকরা।
নারীদের ক্ষেত্রে মনোভাবের বদল নেই
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর এখন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা কাজে ফিরতে পারছেন না নারীরা। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দেশটির অসংখ্য নারী। অতি সম্প্রতি তালেবান নতুন নির্দেশনায় পুরুষ সঙ্গী ছাড়া নারীদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এমনকি হিজাব না পরলে তাদের যানবাহনে তোলার ব্যাপারেও জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা
এছাড়া তালেবান নারী মন্ত্রণালয়ও বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি কোনো নারী।
রক্ষণশীল মনোভাব একই রয়ে গেছে
এই বার ক্ষমতায় এসে তালেবান আফগানিস্তানে প্রকাশ্যে গানবাজনা নিষিদ্ধ করেছে। সৌদি আরবে যখন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সংগীত উৎসব আয়োজন করা হয়েছে আর সেই সংগীত উৎসবে নারী-পুরুষও এক সঙ্গে নাচার অনুমতিও পেয়েছেন, সেখানে তালেবানের এই ঘোষণা চরম রক্ষণশীল মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
এছাড়া সম্প্রতি তালেবান বিজ্ঞাপন ও টিভি নাটকে নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করেছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে চলন্ত গাড়িতে গান বাজানো।
ভেঙে পড়েছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর আফগান অর্থনীতি চরম সংকটে পতিত হয়েছে। জাতিসংঘ আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, দেশটির অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যে, আফগানিস্তানের ক্রেডিট মার্কেটে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ২০২০ সালে যেখানে ছিল শতকরা ২০ ভাগ তা চলতি বছরে ৫৭ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
আফগানিস্তানের স্থানীয় টোলো নিউজ জানায়, দেশটিতে মানুষ শুধু পেটভরে একটু খাবার খাওয়ার জন্য বিক্রি করছেন আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ঘটিবাটি পর্যন্ত।
বেড়েছে অরাজকতা
তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানে অরাজকতা বেড়েছে। বেড়েছে তালেবানের নাম করে অপরাধের ঘটনা। অনেকেই তালেবানের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকদিন আগেই বিয়ে বাড়িতে উচ্চশব্দে গান বাজানোর অভিযোগে এক তরুণকে তালেবান গুলি করে হত্যা করে গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল। পরে তালেবান দাবি করেছিল তালেবানের কেউ নয়, ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে ওই তরুণকে হত্যা করে তাদের ওপর দোষ চাপানো হয়। এছাড়া আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও অস্থিরতা বেড়ে গেছে। তালেবানের নাম ভাঙিয়ে এসব অপরাধ ঠেকাতে তালেবান অবশ্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। সূত্র : যুগান্তর