বৃহস্পতিবর, ১৯ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৩৪ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ বাংলাদেশ ও ভারত ভিসা জটিলতায় চার যৌথ সিনেমা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির আটক
‘সংলাপ’ কি ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচন নিশ্চিত করবে ? অর্ণব সান্যাল

‘সংলাপ’ কি ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচন নিশ্চিত করবে ? অর্ণব সান্যাল

দেশে আবার আসছে জাতীয় নির্বাচন। এরই মধ্যে কয়েক ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। সেই বাতাবরণেই জাতীয় নির্বাচনের জন্য শুরু হয়ে গেছে নির্বাচন কমিশন গঠনের ‘সংলাপ’। কিন্তু নিয়ত রূঢ় বাস্তবতা ও ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচন দেখতে দেখতে চোখ সয়ে যাওয়া নাগরিকেরা আসলে সংলাপ থেকে কী পান?

এই পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব মেলানো জটিল। ব্যক্তিগত জীবনে সেই হিসাব মেলাতে গিয়ে এ দুনিয়ার তাবৎ মানুষ নিশ্চয়ই গলদঘর্ম হয়ে থাকেন। নাগরিক ও সরকারের মধ্যে সেই হিসাব-নিকাশ আরও বিস্তৃতরূপে থাকে। আমাদের মতো দেশে ডেবিট-ক্রেডিটের সেই অঙ্ক সমান করতে গেলে যে চিত্র দেখা যাবে, তা হয়তো নাগরিকের জন্য খুব একটা সুখকর হবে না বোধ করি। সেই অসুখী মুখচ্ছবি মাথায় নিয়েই চলুন সত্যরে ভালোবাসা যাক!

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কিছুদিন আগে থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একে একে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বসছে। এরপর সংলাপ শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মন্তব্য করছেন। এই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য হলো, একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা। যদিও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) কিছু রাজনৈতিক দল মুখ ফুটে বলেই দিয়েছে যে সংলাপ হলো ‘নতুন ভেলকিবাজি বা বায়োস্কোপ’। আজকের পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ২১ ডিসেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমনটাই বলেছেন।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেশের সব ধরনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে আয়োজন করে থাকে; অর্থাৎ একটি নির্বাচন সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য ও অবাধ হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করার গুরুদায়িত্ব থাকে ইসির ওপর। নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতের জন্য তাই নির্বাচন কমিশনেরও নিরপেক্ষ হওয়া প্রয়োজন সর্বাগ্রে। আর সেটি নিশ্চিতের জন্যই এই সংলাপ। যদিও সংলাপের বদলে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি সুনির্ধারিত আইন থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সরব আছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কিন্তু সংবিধানে নির্দেশিত আইনি কাঠামোর বদলে বর্তমান সরকার এ বেলা সংলাপের মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলছে। অবশ্য নির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের ‘টোপ’ দেওয়া আছে। বলা হচ্ছে, শিগগিরই এ ব্যাপারে সংসদে বিল আনা হবে। তবে তা অনুসরণ করা এবার সম্ভব হবে না।

আচ্ছা, এতে কি বিস্কুটদৌড় নামক শারীরিক কসরতের মিল পাচ্ছেন? স্কুল-কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার নিয়মিত আয়োজনে এ খেলাটি থাকতই। কখনো কখনো অবশ্য বিস্কুটের বদলে থাকত মিষ্টি লজেন্স। আর সেই লজেন্সের নাগাল পেতে হাত বেঁধে চলত লম্ফঝম্ফ। নির্বাচন কমিশন আইন হলো এই খেলার সেই বিস্কুট বা লজেন্স, যা ঝুলে আছে বহুদিন হলো। কিন্তু কেউ বলছে না যে, এই আইন আসতে আর কত দেরি, পাঞ্জেরি?

সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি অবশ্য এ দেশে নতুন নয়। এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর সার্চ কমিটি গঠন করে দেন এবং সেই ধারাবাহিকতায় নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ পায়। কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে ২০১৬ সালে ৩১টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। এক মাস সংলাপ শেষে সার্চ কমিটি করে ইসি গঠন করে দেওয়া হয়েছিল। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ইসি নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। বর্তমান ইসি গঠনে আবদুল হামিদও সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। এবার আবার সেই পুরোনো পথেই হাঁটা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠা বন্ধ হচ্ছে?

এই প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক আছে আগে থেকেই। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলোই। যেহেতু এ দেশে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জিতে পদে আসীন হন এবং রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, ফলে এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে তাতে দলীয় প্রভাব থাকার বিষয়টি পুরোপুরি খারিজ করে দেওয়া যায় না। আর এই খাদের কারণেই গঠিত নির্বাচন কমিশনের ওপর বিরোধী দলগুলো ঠিক আস্থা স্থাপন করতে পারে না। সাধারণ জনগণও কি পারে? পারলে হয়তো ‘রাতের ভোট’—এই শব্দযুগলের সৃষ্টি হতো না।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউপি নির্বাচনে আমরা সংঘাত দেখতে পেয়েছি। চতুর্থ ধাপের নির্বাচনেও তো তিনজনের প্রাণহানি হয়েছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের গলাবাজি শোনা যাচ্ছে নিয়মিতই। কেউ বিরোধী প্রার্থীদের হাত-পা ভেঙে দিতে বলছেন ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে, আবার কেউ কেউ করছেন আঁতাতের ‘ভোট ভোট’ খেলা। কোনো কোনো ইউপিতে এক প্রার্থীর প্রায় সব ভোট পাওয়ার ঘটনাও দেখা গেছে। এসবই কিন্তু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর। এর বাইরে অপ্রকাশিত আরও কী কী আছে, কে জানে! আর সবকিছুর শেষে ইসি আমাদের জানাচ্ছে, নির্বাচন ‘সুষ্ঠু’ হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই এভাবে চলছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললে হয়তো বোঝা যাবে যে এ মুলুকে ‘সুষ্ঠু’ শব্দটি অর্থগত ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে কি না!

এ দেশে বর্তমানে নাগরিকেরা নির্বাচন নিয়ে বছরের পর বছর আশাভঙ্গের বেদনায় সিক্ত হতে হতে এখন হয়তো সেটিকেই প্রত্যাশিত মনে করে থাকেন। অন্তত চায়ের স্টলে ঢুঁ মারলে নির্বাচন নিয়ে কোনো উত্তপ্ত আলোচনা শোনা যায় না অনেক দিন। তবে কি সাধারণ ভোটাররা ম্যান্ডেলা ইফেক্টে ভুগছেন?

ম্যান্ডেলা ইফেক্ট বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয় চলতি শতক শুরুর কয়েক বছর পর। ফিওনা ব্রুম এই ধারণার প্রবর্তক। এ নিয়ে বইও লিখেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৮০ সালে কারাগারে মারা গেছেন—এমন একটি মিথ্যে স্মৃতি নিয়ে অনেকের সঙ্গে পরীক্ষামূলকভাবে কথা বলেছিলেন ফিওনা। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তিনি দেখতে পান অসংখ্য মানুষ এই স্মৃতিতে বিশ্বাসী এবং সত্যি সত্যিই মনে করেন কারাগারেই নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যু হয়েছিল। যদিও এই কিংবদন্তি মারা গিয়েছিলেন ২০১৩ সালে এবং অবশ্যই কারাগারে নয়।

এ ঘটনা থেকেই ম্যান্ডেলা ইফেক্ট নামের ধারণার সৃষ্টি। এ অবস্থায় বিশালসংখ্যক মানুষ এমন এক স্মৃতিতে বিশ্বাস করতে থাকে, যা কখনো ঘটেইনি! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের সমস্যায় অনেক মানুষ মূলত একটি মিথ্যা স্মৃতিতে আস্থা রাখে এবং সেটিকেই সত্যি বলে ধরে নেয়। এতে একধরনের ‘বিকল্প বাস্তবতা’ও সৃষ্টি হতে পারে।

এমন বিকল্প বাস্তবতা কি এখন এ দেশেও তৈরি করা হচ্ছে? হাজারো অসংগতি থাকলেও আমাদের, অর্থাৎ সাধারণ ভোটারদের সামনে এমন একটি চিত্র কী হাজির করা হচ্ছে, যাতে মনে হবে, নির্দিষ্ট আইনের বদলে সংলাপেই মুক্তি? নানা ঘটনার চাপে চিড়েচ্যাপ্টা ভোটাররাও হয়তো মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্রে মগজ দেওয়ার মতো করে সত্যাসত্য নির্ণয় ভুলে অন্ধ বিশ্বাস রেখে ভেবে চলেছেন, সব ‘সুষ্ঠু’ই হবে! এহেন ম্যান্ডেলা ইফেক্টে না ভুগলে অন্তত একটু-আধটু তো ট্যাঁ-ফোঁ হতো, নাকি?

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। সেই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগেই নিশ্চয়ই সংলাপ শেষ হবে। নিশ্চয়ই আমরা নতুন নির্বাচন কমিশনও পাব। কিন্তু প্রকৃত সমস্যার কি হিল্লে হবে? ‘সুষ্ঠু’ কি ফিরে পাবে আক্ষরিক অর্থ? তা না হলেও অন্তত জনতার চোখে কর্তৃপক্ষীয় ঠুলি পরানো বন্ধ হোক। কে না জানে, কাঠের চশমার চেয়ে সাদা কাচ ভালো! অর্ণব সান্যাল : সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা 

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.