রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৫২ pm
ইমরান হোসাইন :
বঙ্গবন্ধুর প্রতি অন্যরকম শ্রদ্ধা ভক্তি আর ভালোবাসা তাঁর। সেই সুবাদে ৭ ফুট লম্বা এবং ৩ ফুট প্রস্থ পিভিসি ডিজিটাল ব্যানারে উভয় দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি স্থাপন করে সব সময় পাহারা দেন তিনি। তবে, সৌজন্যে তাঁর নাম গোপনে রেখে নিচে এক পাশে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ ও সাবেক শিল্পপ্রতিমন্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম। অপর পাশে তানোর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সংগ্রামী সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার নাম জুড়ে দেন তিনি।
তানোর-রাজশাহী সড়কের তানোর পৌরসদরের আমশো মেডিকেল মোড় নামক স্থানে রাস্তার পাশে লোহার রড় দ্বারা স্ট্যান্ড তৈরি করা হয়েছে। ওই স্থানে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত পিভিসি ডিজিটাল ব্যানার বসানো হয়। যাতে করে দিনে-রাতে সব সময় যেন বঙ্গবন্ধুর ছবি স্পস্ট দেখা যায়। এজন্য মেডিকেল মোড়ে অবস্থিত সোনালী সংঘ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আলোকসজ্জাও করা হয়েছে। আর সেই ছবি সংবলিত ব্যানার সবাইকে শ্রদ্ধা আর অফুন্ত ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুকে স্বরণ করিয়ে দেয়। এতে খরচ হয় ৫ হাজার টাকার উপরে। অবশ্য এই খরচের টাকা পরবর্তীতে চেয়ারম্যান ময়না তাঁকে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমন ভক্ত ব্যক্তির পুরো নাম মোহাম্মাদ কালাম জামাদার (৫০)। পিতা মৃত খয়বর জমাদার। তিনি রাজশাহী জেলার তানোর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আমশো মহল্লার স্থায়ী বাসিন্দা। তাঁর ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি সবার চেয়ে আলাদা। পিতার ৩ কাঠা বাড়ি ভিটে ছাড়া কিছুই নেই তাঁর। দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে সন্তানের পিতা তিনি। ছেলে শাকিব জামাদার এইচএসসি পাশ করে তানোর সরকারি আব্দুল করিম সরকার ডিগ্রি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
কালাম জানান, ওই মহল্লার প্রভাবশালী প্রবীণ নেতা তানোর আ’লীগের সহসভাপতি মরহুম মহিউদ্দিন সরকার বাবুল তাকে দলের বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও মিছিলে নিয়ে যেতেন। তখন থেকেই তিনি জেনেছেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর স্বপরিবারকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা। সেই সুবাদে ১২ বছর বয়স থেকেই তিনি আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু ভক্ত হয়ে পড়েন তিনি। পিতার অভাবী সংসারে অন্যের কাজ করে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়া লেখা করেছেন। তিনি এমন একজন সাধারণ মানুষ হলেও দলের প্রতি ভালবাসা দেখে স্থানীয় নেতারা তাঁকে বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে আমন্ত্রণ জানাতেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি এতো শ্রদ্ধা ও ভক্তি লক্ষ্য করে দলের নীতি নির্ধারকরা তানোর পৌর যুবলীগের প্রচার সম্পাদক পদে মনোনীত করেন তাঁকে।
এঅবস্থায় বেশ কয়েক বছর আগে এক সড়ক দূর্ঘটনায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী (অন্ধ) হন কালাম। বিষয়টি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নার নজরে আসে। ফলে চেয়ারম্যানের তদবিরে বিগত ৩ বছর আগে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভাতা চালু হয় তাঁর। প্রথমেই ৯ হাজার টাকা পান তিনি। ওই ভাতার টাকা খরচ করে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত পিভিসি ডিজিটাল ব্যানার স্থাপন করেছেন কালাম। আর সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংরক্ষণ ও পাহারা কাজে সময় কাটে তার। আর তিন মাস পরপর যে ভাতার টাকা পান ওই টাকা বিভিন্ন দলীয় ও জাতীয় দিবসে খরচ করেন অন্ধ কালাম।
এছাড়াও প্রতিটি দিবসের ন্যায় সম্প্রতি গত ১৬ই ডিসেম্বর ওই স্থানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শোনা যায়। শুধু ১৬ই ডিসেম্বর নয়, ২১শে ফেব্রুয়ারী, ২৬শে মার্চ, ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন আর ভাষণ ও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ভাড়া করা মাইকে শোনান তিনি। এতে তাঁর যা খরচ ও সময় যায় তাঁতে তিনি আনন্দিত হন। কিন্তু তাঁর শেষ ইচ্ছা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে স্বশরীরে কাছে থেকে দেখে মরতে চান তিনি। আজকের তানোর