সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:১৭ pm
ডেস্ক রির্পোট : রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অভিমত রয়েছে বামপন্থি দলগুলোর ভেতর। এক্ষেত্রে সরকারসমর্থিত ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাম দলগুলো এই সংলাপে অংশ নেওয়ার ও মতামত তুলে ধরার প্রশ্নে অনেকটাই ‘ইতিবাচক’ অবস্থানে রয়েছে। তবে সংলাপে কোনো ‘আস্থা নেই’ সরকারবিরোধী বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত বাম দলগুলোর।
অবশ্য সব বামপন্থি দলই নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠনের বদলে সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর কথা বলছে।
এমন প্রেক্ষাপটে চলমান সংলাপের দ্বিতীয় দিনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আজ বুধবার বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে আলোচনায় বসছেন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নেতাদের সঙ্গে। ইতোমধ্যে ১৪ দলের আরও দুই শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) আমন্ত্রণ পেয়েছে সংলাপের। ন্যাপকে আগামী ২৬ ডিসেম্বর রোববার বিকেল ৪টায় এবং ওয়ার্কার্স পার্টিকে আগামী ২৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার একই সময়ে বঙ্গভবনে সংলাপে ডেকেছেন রাষ্ট্রপতি।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিকদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কেবল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সংলাপের ডাক পেয়েছে। এ দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির আলোচনা হবে ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায়। জোটের নিবন্ধিত অন্য দু’দল সিপিবি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এখনও সংলাপের চিঠি পায়নি।
এছাড়া ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় তরীকত ফেডারেশন, একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় খেলাফত মজলিস এবং ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বিএনএফ এবং একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় ইসলামী ঐক্যজোট নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসবেন রাষ্ট্রপতি। সরকারি দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
গত সোমবার জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। প্রথম দিন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের তিন দফা প্রস্তাব ছাড়াও ইসি গঠনে সার্চ কমিটির জন্য মুখবন্ধ খামে পাঁচটি নাম দিয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতারা।
আমন্ত্রণ পাওয়া ১৪ দলের শরিক বাম নেতারা বলছেন, তারা চাইছেন সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও দলমত নিরপেক্ষ এমন একটি নির্বাচন কমিশন, যারা স্বাধীন ও স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচনই সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করবে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি সমকালকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতির সংলাপে তারা ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের কথা তুলে ধরবেন। তবে শেষ পর্যন্ত আবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন হলে, সেক্ষেত্রে অর্থবহ ও কার্যকর নির্বাচন আয়োজন করতে পারেন- এমন ব্যক্তিদের দিয়ে কমিশন করার কথা বলবেন। বিশেষত প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে আমলাদের বদলে হাইকোর্ট ডিভিশন অথবা সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতিকে নিয়োগ দিতে বলবেন তারা।
ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপতির সংলাপে তারা ইসি গঠনে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে একটা আইন করার কথা বলবেন। না হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক, মতবিরোধ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থেকেই যাবে।
তবে সরকারবিরোধী বাম দলগুলোর নেতারা রাষ্ট্রপতির সংলাপ ও পরে সার্চ কমিটি করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় ‘আস্থা’ পাচ্ছেন না। তাদের মতে, সংলাপের বদলে রাষ্ট্রপতি সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, গতবারের সংলাপে গিয়ে তারা (সিপিবি) যেসব কথাবার্তা বলে এসেছিলেন, তার কোনোটাই রাষ্ট্রপতি রক্ষা করেননি। বরং তার দ্বারা এমন একজন ব্যক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হলেন, যিনি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোট আগের রাতেই করে ফেলে একটা ‘ভুয়া নির্বাচন’ উপহার দিয়েছিলেন। কাজেই আবারও সংলাপ ডাকাটা কেবল অর্থহীন নয়, সময়ক্ষেপণই হবে।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের আইনগত ভিত্তি তৈরিই এখন বেশি জরুরি। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিই উদ্যোগ নিতে পারেন। সেটা তিনি সংলাপ না করেও পারেন অথবা রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে উদ্যোগ নিতে পারেন। এরপরও রাষ্ট্রপতি যেহেতু ডেকেছেন, তাই বাম গণতান্ত্রিক জোট ও দলীয় ফোরামে আলোচনা করে তারা অংশগ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ইসি গঠন প্রশ্নে সরকারকে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সংবিধানবর্ণিত আইনি কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এক্ষেত্রে সময় কোনো ব্যাপার নয়। সাত বা ১০ দিনের ব্যবধানে সংসদের অধিবেশন ডেকে প্রয়োজনীয় আইন করা যেতে পারে। সূত্র : এফএনএস