শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৪৬ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
দুদকের তালিকায় ১০০ ব্যক্তির সম্পদের পাহাড় গড়েছেন যারা আ.লীগ ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ৭৫০ মামলা ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ
কৃষিতেই স্বর্ণশিখরে বাংলাদেশ

কৃষিতেই স্বর্ণশিখরে বাংলাদেশ

ডেস্ক রির্পোট : ২০১৪ সালের কথা। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরোয়নি তখনও। এক বিস্ময়ের জন্ম দিলো বাংলাদেশ। ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো চাল রপ্তানি করে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিলো শেখ হাসিনার সরকার। দুই দফায় প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি হলো শ্রীলঙ্কায়। সহায়তা হিসেবে পরের বছর ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালে পাঠানো হয় ১০ হাজার মেট্রিক চাল। দেশের পণ্য বিদেশে রপ্তানির ইতিহাস পুরনো। কিন্তু চাল রপ্তানি এক নতুন বাংলাদেশের পরিচয় মেলে ধরে। এই পরিচয়ে শক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ভিত।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে জাগো নিউজের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এমএম আকাশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন মূলত কৃষিরই উন্নয়ন। কৃষির হাত ধরেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। কৃষি ও কৃষক মিলে এদেশের ১৮ কোটি মানুষকে যেভাবে আগলে রেখেছে, তা অন্য কোনো খাত রাখেনি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য কৃষিকে রাষ্ট্র ও সামাজিকভাবে যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়নি।

প্রকৃতি ও প্রতিবেশ সঙ্গে নিয়েই এদেশের কৃষির পথচলা। কিন্তু এ অঞ্চলের কৃষি বঞ্চনা আর বৈষম্যের শিকার হয়েছে পাকিস্তান আমল থেকেই। এ দেশের কৃষক ফসল ফলিয়েছে, পশ্চিম পাকিস্তানিরা তা লুট করেছে।

স্বাধীনতার পর এক বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘গত ২৫ বছর থেকে বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি ২৫ লাখ টন।’ খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটে ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। এই টাকা দিয়ে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা হয়। ওই সময়ে উন্নয়ন বাজেটে ৫শ কোট টাকা রাখা হয়, যার মধ্যে ১শ ১ কোটি টাকাই ছিল কৃষির উন্নয়নে।

মূলত, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই এদেশে কৃষি বিপ্লব শুরু হয়। আর তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এক খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলতে সক্ষম হন, যা স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে বাংলাদেশকে বিশেষ মযার্দা দিয়েছে।

১৯৭১-৭২ সালে এ দেশের মানুষের মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল ২৮ শতাংশ। এখন মাথাপিছু জমির পরিমাণ ১০ শতংশেরও কম। স্বাধীনতার সময়ে এ দেশে মানুষ ছিল সাড়ে সাত কোটি। এখন ১৮ কোটি ছাড়িয়েছে। এরপরেও কৃষির উন্নয়নের ছোঁয়ায় খাদ্য ঘাটতি কমে তা ক্ষেত্র বিশেষে উদ্বৃত্ত হয়েছে। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম, গরু-ছাগল উৎপাদনে দ্বিতীয়, ফল, সবজি, গম-ভুট্টা উৎপাদনেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সমানতালে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত দাঁড় করিয়েছে। উন্নয়ন যাই হোক, কৃষিতে বিপ্লব না ঘটলে এ দেশের মানুষ বাঁচতো না। প্রতি বছরই দুর্ভিক্ষ হতো। স্বাধীনতার পর কৃষির ওপর জোর দেওয়া হয়। এই ধারাবাহিকতা সরকারগুলো অব্যাহত রাখে। বিনামূল্যে, সার-বীজ দেওয়া, ডিজেলে ভর্তুকি, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি সরকারগুলোর ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এক সময় বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির প্রবৃদ্ধিই ছিল সবচেয়ে বেশি। এখন তা কমে গেছে। সম্ভবত, কৃষিতে প্রবৃদ্ধি ২০-২২ শতাংশ। কিন্তু বলতে গেলে অন্য খাতের প্রবৃদ্ধিতেও কৃষির অবদান আছে। কৃষি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব সব খাতেই রাখছে।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ জন্মের শুরু থেকেই কৃষি গুরুত্ব পেলেও এখানে চরম অব্যবস্থাপনা আছে। কৃষিপণ্য বণ্টন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ নিয়ে নানা অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি চোখে পড়ার মতো। কৃষির যে উন্নয়ন তাতে কৃষকের অবদানই বেশি। তারা নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে যেভাবে ফসল ফলিয়ে যাচ্ছে, তা অন্য দেশে দেখতে পাবেন না। এমনকী করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা কৃষকের অবদান সর্বাগ্রে মনে রাখবো। রাজনীতি, সরকার পরিচালনায় মানুষের আস্থা তৈরি হলে বাংলাদেশের কৃষির আরও সফলতা আসবে।

চলতি বছর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখানো হয়, বাংলাদেশের ১ কোটি ৬০ লাখ কৃষক পরিবার সবজি চাষ করছে। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে সবজি উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৬২ লাখ টন। দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ পরিবার প্রতিবছর ১ কোটি ৫ লাখ হেক্টর একর জমিতে ধান চাষ করছে।

গত ৫০ বছরে ধানের জমি কমলেও ধানের উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ। ১৯৭১-৭২ সালে ধান উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি ৯ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে।

২০০৬ সালে দেশে ২ কোটি ৬১ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছিল, যা ২০১৯-২০ সালে বেড়ে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৩ হাজারে উন্নীত হয়েছে বলে জানা যায়।

করোনা মহামারির মধ্যেও ধান উৎপাদনে সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ আছে তৃতীয় অবস্থানে।

উন্নত প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার, সেচব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষ সম্প্রসারণ, কৃষিখাতে ভর্তুকি, কৃষিঋণ পদ্ধতির সহজীকরণ, ফসলের বহুধাকরণ, কৃষির লাগসই যান্ত্রিকীকরণ, উচ্চফলনশীল ফসল, তরিতরকারি, মাছ, হাঁস-মুরগি ও ফলমূল চাষের ব্যাপক প্রচলন, আধুনিক রাসায়নিক সার, বীজ ও কীটনাশকের সহজলভ্যতার কারণেই বাংলাদেশে কৃষির সম্প্রসারণ ঘটছে, যাকে কৃষি বিপ্লব বলেও বিবেচনা করা হচ্ছে।

কৃষি ও কৃষিশিল্প বাঁচাতে সরকার করোনাকালীন বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে, যা সংকট কাটিয়ে উঠতে বিশেষ সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ মনে করেন, সরকার এই সময়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ধান কাটার জন্য ২শ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বিতরণ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের যাতায়াত করার ব্যবস্থা, যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি আজকের এই সফলতা নিয়ে এসছে।

অন্যদিকে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণের ব্যবস্থা করে সরকার আরেকটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। কৃষকদের ২শ ৬২ কোটি টাকার চারা ও বীজ বিতরণ, ২ লাখ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল হাইব্রিড ধান চাষের জন্য ৭৬ কোটি টাকার হাইব্রিড বীজ বিনামূল্যে এবং বোরো ধান বীজে ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়। সেচের মূল্য কমানো হয় ৫০ শতাংশ। এছাড়া, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের জন্য ২৫ কোটি টাকা প্রণোদনা কৃষকের জন্য আশীর্বাদ ছিল। কিন্তু প্রণোদনা দিতে অব্যবস্থাপনা ছিল সর্বত্রই। নইলে কৃষক আরও সফলতা দেখাতে পারতো।

এদিকে কৃষি গবেষণাতেও বাংলাদেশ বিশেষ সফলতা দেখিয়েছে। ১৯৭০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা উচ্চফলনশীল (উফশী) জাত উদ্ভাবন করে চলছেন। এক পর এক জাত উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে কৃষিখাতের যে উন্নয়ন ঘটেছে, তা জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ১০৫টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবন করেছে ১৮টি জাতের ধান। ১১৫টি হাইব্রিড ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারি) ৪১৭টি জাত, বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) ২৬টি জাত অবমুক্ত করেছে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) বেশ কয়েকটি জাত অবমুক্ত করার পাশাপাশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, কৃষিতে যে বিপ্লব, তা স্বাধীনতার পর থেকেই এবং বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। নানা সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি থাকলেও কৃষকেরা সঠিক পথেই ছিল। আর সরকারগুলোও কোনো না কোনোভাবে কৃষিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে।

‘কৃষিই আদি ও কৃষি ব্যবস্থাকে ধারণ করেই যে মানবসভ্যতা, তা আরেকবার প্রমাণ হয়েছে করোনার সময়। প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন মানুষের কল্যাণে আসতে পারে না। মানুষকে কৃষিতেই ফিরতে হবে। কৃষি বাঁচলে পৃথিবী বাঁচবে। এই শিক্ষা বাংলাদেশকেও নিতে হবে। আজকের তানোর

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.