মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৪৯ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২০-২১ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও প্রায় ৪০ শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। রাবি উপাচার্যের সভাপতিত্বে ভর্তি পরীক্ষা উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় পোষ্য কোটায় পাশ নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে ৩০ নম্বর করা হয়। একইভাবে গত বছরও পোষ্য কোটায় ৪৬ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান।
সম্প্রতি উপাচার্যের দপ্তরে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল আলীম জানান, প্রতিবছর পোষ্য ও মুক্তিযোদ্ধা কোটার জন্য কিছু আসন বরাদ্দ থাকে। তবে এবার পোষ্য কোটায় বেশকিছু আসন ফাঁকা রয়েছে। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ৩০ নম্বর পেয়েছেন, তাদের ভর্তি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এমন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, কম নম্বর নিয়ে পোষ্য কোটায় একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারলেও সাধারণ একজন শিক্ষার্থীকে দ্বিগুণ নম্বর নিয়ে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হতে হয়। এটা এক ধরনের বৈষম্য। এটা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। কারণ ভর্তিযুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত বাজে সংস্কৃতি সৃষ্টি করবে। তারা আরও বলেন, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারীদের সন্তানদের পাশ নম্বর বাড়ানো উচিত। কারণ তাদের সন্তানরা অনেক বেশি সচেতন। অপরদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক-শ্রমিকদের সন্তানরা ভালো শিক্ষার পরিবেশ পান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সম্প্রতি বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৩৩তম। এমন অবস্থায় আবার পোষ্য কোটায় ভর্তির যোগ্যতা শিথিল করা কতটা যৌক্তিক? তারা বলেন, কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যাপিঠ রাবির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বাড়াতে হলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন একরামুল হামিদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নম্বর পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন না যে শিক্ষার্থী, তাকে ভর্তি করে তার কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করা যায়! এভাবে যাদের (পোষ্যদের) ভর্তি করা হয়, তাদের জন্য আবার ভর্তি পরীক্ষার দরকার কী! তিনি আরও বলেন, এভাবে ভর্তি করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি বাড়বে। তারা আবার তদবির করে পারিবারিক কোটায় শিক্ষক হওয়ার জন্য পাঁয়তারা করবেন। সুতরাং এ সংকীর্ণমনা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশে ভর্তির বিষয়ে কোটা সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধার সুস্পষ্ট কোনো উল্লেখ নেই। তবে ভর্তির বিষয়ে কমিটিকে ক্ষমতা দিয়ে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভর্তি কার্যক্রম অধ্যাদেশের ৪৬ ধারা অনুযায়ী ভর্তি কমিটি দ্বারা নির্ধারিত কার্যপ্রণালি অনুযায়ী তৈরি করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে-এ ধারাকে সুযোগ হিসাবে কাজে লাগিয়েই ভর্তি পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়। জানা যায়, পোষ্য কোটায় আবেদন করা ৭০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ন্যূনতম পাশ নম্বর ৪০ পাননি। ৪০ নম্বরের কম পেয়েও ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন।
রাবি উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সুলতান-উল ইসলাম বলেন, এটা গতবারও ছিল। গতবার থেকে বেশি নম্বর রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রথাগত অনিয়ম থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। তবে একসঙ্গে সব অনিয়ম বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই যেহেতু এ সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেজন্য এ বছর বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। তবে ভবিষ্যতে এ প্রথা বন্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। আজকের তানোর