শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৪৭ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি খালের ওপর অবৈধভাবে দুটি মার্কেট নির্মাণ করেছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ব্যস্ততা শেষ হলেই এ মার্কেট দুটি ভাঙা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল।
গতকাল শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা গিয়ে তিন তিনবার কাজ বন্ধ করেছে। এখনো কাজ বন্ধই আছে। ওই জায়গাটার মালিক যেহেতু জেলা প্রশাসন, আমরা মার্কেট দুটি ভেঙে ফেলব। ইউপি নির্বাচন নিয়ে আমাদের ব্যস্ততা যাচ্ছে, নির্বাচনের পরই মার্কেট দুটি ভাঙার কাজ শুরু হবে।’
মাঝে কাটাখালী বাজার রেখে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক পার হয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে চলে গেছে একটি খাল। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ১৭ কোটি টাকায় খালটি সংস্কার করে। এর দুই পাড় বাঁধাই করা হয়। এরপর লকডাউনের সময় মহাসড়কের দুই পাশে সরকারি খালের ওপর দুটি মার্কেট নির্মাণ করেন মেয়র আব্বাস আলী। দোতলা করে মার্কেট দুটির কাঠামো নির্মাণ হয়েছে। মহাসড়কের সেতুর দক্ষিণ পাশের মার্কেটটি ১ হাজার ১৪৪ বর্গফুটের। এখানে ২১টি দোকান করার কথা ছিল। উত্তর পাশের দোতলা মার্কেটটির দোকান ছয়টি।
গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিচতলার দোকানগুলোর কাজ প্রায় শেষ। দক্ষিণের মার্কেটটির কারণে পেছনে পড়ে গেছে ‘ছানা মার্কেট’ নামের একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন মার্কেট। মেয়রের মার্কেটের কারণে ছানা মার্কেট আড়াল হয়ে যাওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়েছেন। তাঁরা দোকানপাট ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
এরই মধ্যে মেডিসিন পয়েন্ট, শিহাব ফার্মেসি ও সেলিম টেলিকমের মালিক তাঁদের দোকান অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। কেউ আসে না বলে বিসমিল্লাহ লন্ড্রীও আর খোলে না। এর মালিক অন্য স্থানে দোকান খুঁজছেন।
অন্য জায়গায় দোকান খুঁজছেন ইলেকট্রনিকস হাসপাতালের মালিক ফজলুল হকও। তিনি বলেন, ‘সামনে মার্কেট করায় আমরা পেছনে পড়ে গেছি। মানুষ আসার রাস্তা নাই। অন্য দিক দিয়ে ঘুইর্যা আসতে হয়। তাই ব্যবসা অর্ধেকে নাইম্যা গেছে। অন্য জায়গায় দোকান পাইলেই এডা (এটা) ছেড়ে দিব।’
ফজলুল জানান, আব্বাস আলী দ্বিতীয় দফায় মেয়র হয়েই এই মার্কেট নির্মাণ শুরু করেন। তাঁরা প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি। তাঁরাও নৌকায় ভোট দিয়েছেন। এখন ‘ফল’ ভোগ করছেন।
পৌরসভার কাউন্সিলররা জানান, মার্কেট করার সময় এটা পৌরসভার মার্কেট বলে মেয়র ব্যবসায়ীদের বোঝান। এখানে ব্যবসায়ীদের কম ভাড়ায় দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন। এতে পৌরসভার কিছুটা আয়ও হবে। বাস্তবে পৌরসভায় এ ধরনের মার্কেট নির্মাণের কোন আলোচনা হয়নি। খালের ওপর মার্কেট করার জন্য ভূমি অফিস বা বিএমডিএ থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়নি।
মেয়র লাভবান হতে ব্যক্তিগতভাবেই ওই মার্কেট দুটি নির্মাণ করেন। এ কারণে আটজন কাউন্সিলর জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন। এরপর একবার কাজ বন্ধ হলেও পরে মেয়র আবার কাজ শুরু করান। তবে এখন কাজ বন্ধ রয়েছে।
কাউন্সিলররা আরও জানান, উপজেলা ভূমি অফিস এই মার্কেটের ব্যাপারে বিএমডিএকে একটি চিঠি দিয়েছিল। তাদের খালের ওপর মার্কেট হলেও চিঠির জবাবে রহস্যজনক কারণে বিএমডিএ ভূমি অফিসকে এটি ইতিবাচক বলেই জানিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে আসে।
মন্ত্রণালয় একটি চিঠি দিয়ে জেলা প্রশাসককে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনও গেছে। মন্ত্রণালয় মার্কেট দুটি ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।
তবে এর আগেই কয়েকজন ব্যবসায়ীকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন মেয়র। মার্কেট দুটির দোকান বরাদ্দ নিয়ে গত ১১ আগস্ট কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে বসেছিলেন মেয়র আব্বাস আলী। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করলে ‘পাপ হবে’ মন্তব্য করে বসেন।
কটূক্তি করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকেও। এর দুটি অডিও ক্লিপ গত সোমবার থেকে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন মেয়র।
তাঁর বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং কাটাখালী পৌর শাখার আহ্বায়কের পদ থেকেও তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন পৌরসভার সব ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
গত শুক্রবার অজ্ঞাত স্থান থেকে ফেসবুকে লাইভে এসে মেয়র আব্বাস একজন মুসলমান হিসেবে ম্যুরাল নিয়ে নিজের বক্তব্য স্বীকার করেছেন। তবে বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করেননি বলেও দাবি করেছেন। আজকের তানোর