বৃহস্পতিবর, ২১ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:০৬ pm
ডেস্ক রির্পোট : কুড়িগ্রাম জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩ লাখ শিক্ষার্থী স্কুল ফিডিংয়ের বিস্কুট পাচ্ছে না। এতে করে বিদ্যালয়গুলোতে কমে গেছে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার। এ অবস্থায় প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমাতে এবং দরিদ্র এলাকার শিক্ষার্থীদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে দ্রুত স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালুর দাবি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীবেষ্টিত জেলা কুড়িগ্রাম। এই জেলায় ১ হাজার ২৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে সাড়ে ৪ শতাধিক স্কুল চরাঞ্চলে অবস্থিত। ২০০২ সাল থেকে জেলার ৯ উপজেলার সব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর হার বাড়াতে এবং শিক্ষার্থীদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে চালু করা হয় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি।
এই কর্মসূচির আওতায় টিফিনের সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৭৫ গ্রাম ওজনের পুষ্টিমানসম্পন্ন এক প্যাকেট করে বিস্কুট দেওয়া হতো। স্কুল ফিডিং কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় জেলায় প্রাথমিকে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কমেছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন। এতে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার বাড়ার পাশাপাশি ঝরে পড়ার হার কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের খেয়ার আলগার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আব্দুর রহিম বলেন, ‘আগে আমাদের টিফিনের সময় বিস্কুট দেওয়া হতো। এখন দেওয়া হয় না। তাই দুপুরের পর খিদে লেগে যাওয়ায় আমরা ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছি না।’
এ বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগ বাড়াতে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুপুরের পর শিক্ষার্থীরা আর ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছে না।’
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের চর উদনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বাবলু মিয়া বলেন, ‘স্কুল ফিডিং কার্যক্রম আবারও চালু হলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বেড়ে যাবে। আমার বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ২৬২ জন। এর মধ্যে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী। করোনায় দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ও স্কুল ফিডিং কার্যক্রম প্রায় চার মাস বন্ধ থাকা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির জন্য কিছুটা দায়ী।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার কানিজা আক্তার বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দেড় বছর বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেওয়া হয়। বিদ্যালয় খোলার পর প্রথম দিকে শিক্ষার্থীর হার একটু বেশি থাকলেও স্কুল ফিডিংয়ের বিস্কুট না দেওয়ায় দিনে দিনে কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু হলে শিক্ষার্থীর হার আরও বাড়বে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের দরিদ্রতম জেলা হিসেবে কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০২ সাল থেকে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু করা হয়। স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালুর জন্য বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মধ্যে চুক্তিও হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন শারীরিক পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে ক্লাসে মনোযোগী করতে দ্রুত স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু হবে।’সূত্র : আজকের পত্রিকা