শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:১৯ pm
জীবনটা তার লাভজনকভাবেই শেষ হচ্ছে। স্যারের হিসাব হলো, জীবনে খুব বেশি বিনিয়োগ করতে হয়নি। মানুষকে ভালোবেসে যতটুকু খরচ হয়েছে।
কিন্তু ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন অফুরান। সেই হিসাবে জীবনটা মোটেও লোকসানের নয়। বলছিলেন, মানুষ আসলে নিজেকেই নিজে সব সময় সঙ্গ দিয়ে যায়। অন্যরা কখনও কখনও ছুঁয়ে যায় মাত্র। সুতরাং একলা জীবন বলে কিছু নেই।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধান দুই প্রার্থীর সঙ্গে টক শো করতে রাজশাহী যাওয়া। রাজশাহী যেহেতু যাচ্ছি হাসান আজিজুল হক স্যারের সঙ্গে দেখা তো করবই। স্যারের সঙ্গে ‘বিশেষ সম্পাদকীয়’ করে নিতে চাইলাম।
আমার প্রযোজক দলও উৎফুল্ল এই প্রস্তাবে। মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে টক শো বিকেলে। আমরা রাজশাহীতে পৌঁছে ১২/১টার দিকে স্যারের সময় চাইলাম পথ থেকেই।
স্যার টেলিফোনে বললেন, ‘আর কী কথা গো? তোমার সঙ্গে তো কত কথাই বলা হলো।’ আমি বললাম, কথা কি ফুরোয়, আড্ডার কি বিরতি আছে? স্যার বললেন, ‘তোমাকে কোনো দিন না করেছি? আসো। চলে আসো আমার উজানে।’
আমরা স্যারের উজানের গেটের সামনে বকুলতলায় বসি। সেদিন রাজশাহীতে খরতাপ ছিল। আমাদের চিত্র সাংবাদিক, প্রযোজক সবাই দাবদাহে ভিজে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু সব কষ্ট, তাপ ভুলে গিয়ে তন্ময় হয়ে তারা শুনছিলেন স্যারের কথা। সেদিন আলাপের শুরুটাও হয়েছিল স্যারের ‘রোদে যাবো’ গল্প দিয়ে। রোদ থেকে চলে যাই ‘নুন’-এ। স্যার বলছিলেন, যে সৌন্দর্যে লাবণ্য মানে নুন নেই, তা সুন্দর নয়।
জীবনটা তার লাভজনকভাবেই শেষ হচ্ছে। স্যারের হিসাব হলো, জীবনে খুব বেশি বিনিয়োগ করতে হয়নি। মানুষকে ভালোবেসে যতটুকু খরচ হয়েছে।
কিন্তু ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন অফুরান। সেই হিসাবে জীবনটা মোটেও লোকসানের নয়। বলছিলেন, মানুষ আসলে নিজেকেই নিজে সব সময় সঙ্গ দিয়ে যায়। অন্যরা কখনও কখনও ছুঁয়ে যায় মাত্র। সুতরাং একলা জীবন বলে কিছু নেই।
উজানে যখন রেকর্ডিং শেষ হলো, তখন বেলা তিনটা। আমরা জনাদশেক মানুষ। ভেতর বাড়ি থেকে শাসনের ডাক আসছে স্যারকে ভেতরে যাওয়ার।
আমরা স্যারকে ভেতরে নিয়ে গেলাম। স্যার বারবার জানতে চাচ্ছিলেন, তোমরা কোথায় ভাত খাবে গো? অনেক বেলা হয়ে গেল! স্যারকে বলেছিলাম আশপাশে কোথাও খেয়ে নেব।
স্যারের বাড়ির কাছে কাজলাতে ভাত খেয়ে ফোনে তাকে নিশ্চিত করতে হয়েছিল, আমরা ভাত খেয়েছি স্যার।এর আগে স্যার সময়ের স্টুডিওতে এসেছিলেন। লালমাটিয়ায় তার বোনের বাড়ির ছাদেও কথা বলেছেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা দেয়া, ইন্টারভিউর জন্য কত আবদার করেছি। কোনো দিন বলেননি দেব না। বরং বলেছেন, তোমাকে না করা যায় না। সেই ভালোবাসার দাবিতে কন্যাকে নিয়ে গেছিলাম স্যারের কাছে।
স্যার কোনো একটি সম্মাননা নিতে তখন ঢাকায়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের রেস্টহাউসে ছিলেন। সপরিবারে যাই। মেয়ে ইন্টারভিউ নিচ্ছে। স্যারকে বললাম, কিছু খাবেন? স্যার বললেন, ছানার সন্দেশ খাওয়াতে পারবে? সেদিন দেখেছিলাম শিশু হাসান আজিজুল হককে। তারপর কত কথা হয়েছে টেলিফোনে। বেশির ভাগই আমার দিক থেকে আবদারের।
সোমবারের আকাশও কুয়াশায় ঢাকা ছিল। কার্তিকের শেষ কদিন বৃষ্টিতে গেল। স্যার চলে গেলেন কার্তিকের শেষে। আজ অগ্রহায়ণের প্রথম দিন। বাইরে রোদ, আলো ঝলমল করছে। স্যার বুঝি রোদে গেলেন!