বৃহস্পতিবর, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৪৬ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে শক্তি ও সামর্থ্য হারাচ্ছে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো। দুই যুগ আগেও ছোট ছোট দলগুলোর রাজনীতির মাঠে সরব বিচরণ ছিল। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এখন সেসব অতীত। কমে গেছে এসব দলের সাংগঠনিক তৎপরতা। কমেছে নেতাকর্মী আর সমর্থকের সংখ্যাও। ভোটের বাক্সও প্রায় খালি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ অবস্থা চলে থাকলে এক সময় ছোট দলগুলো রাজনীতিতে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলবে। সাধারণ মানুষের কাছে তাদের আবেদনও ফুরিয়ে যাবে।
রাজশাহীতে এক সময় বড় দলগুলোর পাশাপাশি জাতীয় পার্টির বেশ প্রভাব ছিল। আশির দশকে ক্ষমতায় থাকার সময়ে এ দলটি রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের ব্যক্তিগত ইমেজের কারণে এ অঞ্চলে জাতীয় পার্টি অবস্থান একেবারে খারাপ ছিল না। প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী সরদার আমজাদ হোসেন এবং নুরুন্নবী চাঁদসহ দলটির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাংগঠনিক দক্ষতায় এ দলটি সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। এ কারণে ১৯৯০ সালে জাতীয় পার্টি ক্ষমতা হারালেও এ অঞ্চলে জাতীয় পার্টি সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্টির প্রার্থী বাগমারা থেকে জয়লাভ করেন।
কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পালটে গেছে। নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে জাতীয় পার্টি দুর্বল থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে রাজশাহী জেলা এবং মহানগর জাতীয় পার্টির পূর্ণাঙ্গ কোনো কমিটি নেই। আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে সংসদের বিরোধী দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। রাহাত হোসেন আহ্বায়ক এবং ইকবাল হোসেন সদস্য সচিব হিসাবে জেলা জাতীয় পার্টির দায়িত্ব পালন করছেন। মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক হিসাবে সাইফুল ইসলাম স্বপন এবং সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন আবু ইউসুফ সেলিম। এসব নেতৃত্বের ব্যক্তি পরিচিতি কম থাকায় সাংগঠনিকভাবে বাড়েনি দলের পরিসর।
এর আগে সাবেক এমপি আবুল হোসেন সভাপতি এবং শামসুদ্দিন রিন্টু সাধারণ সম্পাদক হিসাবে জেলা জাতীয় পার্টির দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া মহানগর কমিটিতে শাহাবুদ্দিন বাচ্চু সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান ডালিম। বাচ্চু বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী এবং ডালিম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
পার্টির বর্তমান সাংগঠনিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মহানগর আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘আমরা জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছি। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল। এরপর ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ মহানগর কমিটি গঠন করা হবে।’ তবে দলের অভ্যন্তরে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি তিনি অকপটে স্বীকার করেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ (সদর) আসনে পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বলয়ে থাকলেও ওয়ার্কার্স পার্টি রাজশাহীতে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে পারেনি। তৈরি করতে পারেনি নিজস্ব ভিত্তি। কারণ হিসাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজশাহীতে ওয়ার্কার্স পার্টিকে শক্তিশালী করার জন্য যে শাখা নেতৃত্ব প্রয়োজন তা গড়ে ওঠেনি। এছাড়া ফজলে হোসেন বাদশা ছাড়া রাজশাহীতে দ্বিতীয় কোনো নেতা সেভাবে তৈরি হয়নি। সরকারের শরিক হিসাবে ক্ষমতায় থাকলেও জনগণের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা তৈরিসহ দলের ভিত মজবুত করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি। মূলত আওয়ামী লীগের সমর্থনের কারণেই বাদশা এমপি হয়েছেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের জেলা এবং মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। আমরা পার্টিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।’
রাজশাহীতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) একসময় শক্তিশালী সংগঠন ছিল। বিশেষ করে তাদের ছাত্র সংগঠন জাসদ ছাত্রলীগের দাপট ছিল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ নিয়ন্ত্রণ করত জাসদ ছাত্রলীগ। তবে সময়ের ব্যবধানে এ দলটি সাংগঠনিক শক্তি হারিয়ে ক্ষীণকায় হয়ে গেছে। কমেছে কর্মী-সমর্থকের সংখ্যাও। খুব কমসংখ্যক কর্মী আর সমর্থক নিয়ে এ রাজনৈতিক সংগঠনটি রাজনীতির মাঠে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের জেলা এবং মহানগরের প্রত্যেকটিতে ৪৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। তবে জেলা এবং মহানগরীর সব থানাতে কমিটি নেই। কিছু থানাতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে। এসব কমিটি নতুনভাবে করার চেষ্টা করছি। সাংগঠনিকভাবে মহানগরের রাজনীতিতে আমরা সক্রিয়। তবে জেলার রাজনীতিতে অনেকটাই স্তিমিত বলে স্বীকার করেন জাসদের এ নেতা।’
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও বাংলাদেশের কমিউিনিস্ট পার্টির (সিপিবি) যথেষ্ট প্রভাব ছিল। এ রাজনৈতিক দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নও ৯০ দশকের শেষ সময় শক্তির বড় আধার হিসাবে পরিচিত ছিল শিক্ষাঙ্গনে। যে কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিনিধিত্ব করেছে। কিন্তু বর্তমানে সিপিবির সেই দিন আর নেই। ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক এই দলটি। বর্তমানে সিপিবির রাজশাহী জেলা কমিটি থাকলেও, নেই মহানগর কমিটি। পার্টির গণসংগঠগুলোও অত্যন্ত দুর্বল।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, রাজশাহী জেলা সম্পাদক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি রাগীব আহসান মুন্না বলেন, ‘আমাদের ১৩ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি রয়েছে। তবে মহানগরে কমিটি নেই। সামনে ফেব্রুয়ারিতে সিপিবির কংগ্রেস। এ কংগ্রেসের পর রাজশাহী মহানগরের কমিটি গঠন করা হবে। আমরা কিছুটা সমস্যার মধ্যে আছি। তবে পরিকল্পনা রয়েছে সমস্যা কাটিয়ে অচিরেই পার্টিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
এছাড়া রাজশাহীতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এমএল), গণফোরাম, বাসদ, জাকের পার্টি, ইসলামী ঐক্য জোট, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল একসময় রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকলেও এখন আর তাদের তৎপরতা নেই। ছোট দলগুলোর এই যখন অবস্থা, তখন নেতা এবং প্যাডসর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আজকের তানোর