শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:৪৫ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে স্থানীয়ভাবে কয়লার দাম দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণাঞ্চলের সব ইটভাটা বন্ধ। অক্টোবরে মৌসুম শুরু হলেও দ্বিগুণ দামে কয়লা কিনে ইট পোড়াতে পারছেন না ভাটার মালিকরা। লোকসানের শঙ্কায় তারা আগামী ২৪ ডিসেম্বরের পর ভাটা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গত ২ নভেম্বর বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির নেতারা ভাটা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ইটের দাম বেড়ে গেছে। বিপাকে পড়েছেন নির্মাণ সংস্থাগুলো। ইটের অভাবে থেমে গেছে বহু উন্নয়ন প্রকল্প। সর্বোপরি লক্ষাধিক ভাটা শ্রমিক হয়ে পড়েছেন বেকার।
ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জাহাজ ভাড়া, ভ্যাটসহ আমদানি শুল্ক। সব মিলে গত বছর আমদানিকৃত কয়লার দাম ছিল নয় থেকে দশ হাজার টাকা টন। এবার সেটা ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় ভাটার মালিকরা সরকারের কাছে কয়লার আমদানি শুল্ক কমানোসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি সাদরুল ইসলাম বলেন, আমদানিকৃত কয়লার দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি । তাই সারা দেশে ভাটা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া তাদের সামনে কোনো পথ নেই। তিনি বলেন, গত বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত প্রতি টন কয়লার দাম ছিল ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা।
অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার কয়লা প্রতি টনের দাম ছিল ৭ থেকে ৯ হাজার টাকার মধ্যে। এবার মৌসুমের শুরুতেই ইন্দোনেশিয়ার কয়লার টনপ্রতি দাম উঠেছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা। একইভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার কয়লা টনপ্রতি দাম উঠেছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা।
সাদরুল আরও বলেন, দ্বিগুণ দামে কয়লা কিনে ইট বিক্রি করে খরচের টাকা তোলা যাবে না। বাণিজ্যমন্ত্রীকে ইতোমধ্যে স্মারকলিপি দিয়ে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। কয়লার দাম না কমানো হলে চলতি মৌসুমে কোনো ভাটাতেই ইট প্রস্তুত করা হবে না।
এদিকে বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব আসাদুর রহমান রাকিব জানান, একটি ভাটায় ইট তৈরিতে ন্যূনতম ১৫০ থেকে ১৮০ জন শ্রমিক লাগে। প্রতিটি ভাটাকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি মৌসুমে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে ভ্যাট দিতে হয়। এর বাইরেও অনেক খরচ আছে। বর্তমানে প্রতি হাজার ইট বিক্রি করতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে। এতে বিপুল পরিমাণ চলতি মূলধন লাগে।
অনেকেই ব্যাংক ঋণ করে মূলধনের সংস্থান করেন। এখন কয়লার যে দাম তা দিয়ে ইট পুড়িয়ে বিক্রি করলে প্রতি ভাটায় কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে। এ কারণে আমরা সরকারের কাছে কয়লার আমদানি শুল্ক, ভাটার লাইসেন্স ফি কমানোসহ আরোপিত বিভিন্ন ধরনের কর হ্রাসের দাবি জানিয়েছি। কয়লার দাম না কমলে ভাটা চালু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা প্রতিটি বিভাগে সভা করে ভাটা বন্ধ রাখতে মালিকদের বলেছি। সব ভাটা প্রায় বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে খাতা-কলমে ৭ হাজার ৯৮৯টি উন্নতমানের ভাটা রয়েছে। এর বাইরে অনুমোদনবিহীন আছে আরও ৬ হাজার। সমিতির সিদ্ধান্তক্রমে আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইট পোড়ানো বন্ধ থাকবে। তবে কেউ চাইলে এই সময়ে ইট তৈরি করে মজুত রাখতে পারবে। কিন্তু ভাটায় আগুণ দিতে পারবে না। কোনো ভাটা মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে সমিতি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
অন্যদিকে সব ভাটা বন্ধ থাকায় ইটের দাম বেড়ে গেছে জানিয়েছেন রাজশাহী রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশনের (রেডা) সভাপতি তৌফিকুর রহমান লাবলু। তিনি বলেন, ইট প্রস্তুত বন্ধ থাকায় বাণিজ্যিক আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোসহ রাজশাহীর চলমান সব উন্নয়ন কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত মৌসুমে প্রতি হাজার ইট ৮ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে।
এখন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা হয়ে গেছে। ইট প্রস্তুত শুরু না হলে তাদের সব কাজই বন্ধ হয়ে যাবে। ইটের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৬ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ফ্ল্যাটের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে রেডা। আজকের তানোর